মে ২৭, ২০২১ ২১:১৮ Asia/Dhaka
  • ফিলিস্তিনে নির্বাচনের গুরুত্ব: সশস্ত্র সংগ্রাম ও রাজনৈতিক প্রচেষ্টা দু'টিই জরুরি

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান মনে করে নির্বাচনের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক অচলাবস্থার অবসান ঘটতে পারে। কিন্তু দখলদার ইসরাইল ও মার্কিন ষড়যন্ত্রের কারণে নির্বাচন দেয়া থেকে বিরত রয়েছে ফিলিস্তিন স্বশাসন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। এরইমধ্যে গাজায় ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সঙ্গে ইসরাইলের ১২ দিন ধরে চলা যুদ্ধে ইসরাইল পরাজিত হওয়ার পর এখন ফিলিস্তিনে নির্বাচন দেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। কেননা এবারের যুদ্ধে ইসরাইলি আগ্রাসনের মোকাবেলায় ফিলিস্তিনিদের মধ্যে নজিরবিহীন ঐক্য লক্ষ্য কর

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী সম্প্রতি এক ভাষণে ফিলিস্তিনে গণভোটের ব্যাপারে মূল্যবান বক্তব্য তুলে ধরেছেন। সেখানকার বর্তমান পরিস্থিতির বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন, 'ফিলিস্তিনের ঈমানদার যুবকেরা জিহাদি চেতনার ঝাণ্ডা উপরে তুলে ধরেছে এবং তারা নিজেদের জীবন দিয়ে ফিলিস্তিনের পরিচয় বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেছে। আমি ফিলিস্তিনিদেরকে বলতে চাই তোমরা জিহাদি চেতনা ধরে রাখ। কেননা মজলুম ফিলিস্তিনিদের অধিকার রক্ষার একমাত্র উপায় হচ্ছে আগ্রাসী ও দখলদার ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়া।' বায়তুল মোকাদ্দাস উদ্ধারে ফিলিস্তিনি যুবকদের সক্রিয় উপস্থিতির ওপর গুরুত্বারোপ করে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, 'ফিলিস্তিনিদের ভাগ্য কয়েকজন পুঁজিপতি বা ব্যক্তির ওপর নির্ভর করবে এটা ঠিক নয়।' তিনি বলেন, 'বর্তমানে ফিলিস্তিনের মুসলমানরা ইসলামের ছায়াতলে থেকে আগ্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। আর এ কারণেই ইসরাইল সবচেয়ে বেশি বিপদ অনুভব করছে। সে কারণে ইসরাইল প্রতিরোধ শক্তিগুলোকে ধ্বংস করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এ অবস্থায় অন্যান্য আরব নেতারা ফিলিস্তিনিদের রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবে বলে সারা বিশ্বের মুসলমানদের প্রত্যাশা।'

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা তার বক্তব্যে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগঠনগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকা এবং জাতিসংঘের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের অধিকার আদায়ের পাশাপাশি সেখানে গণভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

বাস্তবতা হচ্ছে, ইরান বহু দিন ধরে ফিলিস্তিনে জাতীয় নির্বাচন দেয়ার যে দাবি জানিয়ে আসছে তার অর্থ ইসরাইল বিরোধী সশস্ত্র সংগ্রাম, জিহাদ ও প্রতিরোধ থেকে দূরে থাকা নয় বরং নির্বাচন ও সশস্ত্র সংগ্রাম একে অপরের পরিপূরক। ইসরাইলের কবল থেকে মুসলমানদের প্রথম কেবলা বায়তুল মোকাদ্দাস উদ্ধারের একমাত্র উপায় হচ্ছে সমন্বিত নীতি গ্রহণ। ইসরাইল একদিকে যেমন রাজনীতির কূটচাল চালছে অন্যদিকে সামরিকভাবেও তৎপর রয়েছে এবং ফিলিস্তিনিদের ওপর অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় ফিলিস্তিনিদেরকেও রাজনৈতিক ও সামরিক উভয় দিক দিয়ে  ইসরাইলের এই সর্বাত্মক আগ্রাসন মোকাবেলা করতে হবে। এ মুহূর্তে ইসরাইলের আগ্রাসন মোকাবেলায় গণভোট সবচেয়ে জরুরি। ফিলিস্তিনিদেরকে দুদিক থেকে প্রতিরোধ চালিয়ে যেতে হবে। একদিকে দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে সশস্ত্র হিজাদ এবং অন্যদিকে ইসরাইলের সঙ্গে আপোষকারীদের মোকাবেলা করা।     

মোটকথা, ইসরাইলের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধের কোনো বিকল্প নেই। পাশ্চাত্যের গণমাধ্যমগুলো ইসরাইলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ যোদ্ধাদেরকে সন্ত্রাসী বলে প্রচার চালাচ্ছে আর এ অজুহাতে তারা ইসরাইলকে শান্তিকামী হিসেবে অভিহিত করে তাদের জুলুম নির্যাতনকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করছে। এ অবস্থায় ইসরাইলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের সবচেয়ে কার্যকর পন্থা হচ্ছে যুদ্ধের ময়দানে নিজেদের অবস্থানকে শক্তিশালী করা এবং গণভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার গঠন করে ইসরাইলের ষড়যন্ত্র বানচাল করে দেয়া। কেননা কেবল সশস্ত্র প্রতিরোধই একমাত্র কৌশল নয় বরং ফিলিস্তিনিদের অধিকার আদায়ের জন্য গণভোট খুবই জরুরি একটি বিষয় যা বহুদিন ঘরে আটকে রাখা হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যের ফিলিস্তিন বিষয়ক রাজনৈতিক বিশ্লেষক হোসেন কেনআনি মোকাদ্দাম বলেছেন, 'এমন সময় ফিলিস্তিনে গণভোট দেয়ার দাবি জোরদার হয়েছে যখন ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগঠনগুলো ইসরাইলের  মোকাবেলায় শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছেছে এবং তারা  শক্তির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে।'

গণভোটের ব্যাপারে ইরানের পক্ষ থেকে জোর দাবি উঠেছে। এ সংক্রান্ত প্রস্তাব তুলে ধরে ইরানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যারাই ফিলিস্তিনে জন্মগ্রহণ করেছে এবং সেখানকার মূল অধিবাসী তারা হোক মুসলমান, খ্রিস্টান কিংবা ইহুদি তাদের সবাইকে নিজ মাতৃভূমিতে ফিরে আসতে হবে এবং গণভোটে অংশ নিয়ে নিজেরাই  নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণ করতে হবে। ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানের জন্য পাশ্চাত্য ও তাদের ক্রীড়নক কিছু দেশ দুই রাষ্ট্রভিত্তিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের যে কথা বলছে ইরান সেটাকে সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে এবং বলেছে কেবলমাত্র ভূমধ্য সাগর থেকে জর্দান নদী এলাকা পর্যন্ত ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনই কেবল গ্রহণযোগ্য হবে যেখানে ইসরাইল নামক অবৈধ রাষ্ট্রের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। অর্থাৎ ইরানের পরিকল্পনার উদ্দেশ্যই হচ্ছে মূল ফিলিস্তিন ভূখণ্ডকে ঐক্যবদ্ধ করা। ইসরাইল ভালো করেই জানে গণভোট হলে এ অঞ্চলে তাদের কোনো অস্তিত্বই থাকবে না। এ কারণে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র যেকোনোভাবে ফিলিস্তিনিদের গণভোট ঠেকানোর চেষ্টা করছে। কেননা গণভোট হলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসরাইল ও আমেরিকার আর কোনো যুক্তি ধোপে টিকবে না এবং তারা নিজেদের মর্যাদা হারাবে।

ইসরাইলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ইরান রাজনৈতিক উপায়ে ইসরাইলকে মোকাবেলার জন্য গণভোটের ওপর জোর দিয়েছে। ঠিকমতো ভোট হলে ইসরাইল ধ্বংস হয়ে যাবে অন্যদিকে ইসরাইল যদি এ ক্ষেত্রে বাধা দেয় তাহলে ইসরাইলই অচলাবস্থার সম্মুখীন হবে। তাই ফিলিস্তিনের সব রাজনৈতিক দল ও সংগঠন গণভোটের ব্যাপারে ইরানের প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন দিয়েছে যদিও স্বশাসন কর্তৃপক্ষ এ ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রকৃতপক্ষে, ইরান তার এ প্রস্তাবের মাধ্যমে সবাইকে এটা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছে যে তারা ঐশী ধর্মগুলোর মধ্যে কোনো যুদ্ধ সংঘাত চায় না বরং দখলদার ইসরাইলের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও বর্ণবাদী আচরণের বিরোধী যারা কিনা জাতিগুলোর ন্যায্য অধিকারকে পদদলিত করছে এবং ফিলিস্তিনিদেরকে শরণার্থীতে পরিণত করেছে।

ইরানের প্রস্তাবের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হচ্ছে এতে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ফিলিস্তিনিদেরকে নিজ মাতৃভূমিতে ফিরে আসার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে যাতে তারা নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারে। কিন্তু ফিলিস্তিনে গণভোটের আয়োজন ইসরাইল কোনোভাবেই মেনে নিতে প্রস্তুত নয়। তারা প্রথম থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছে। বাস্তবতা হচ্ছে ইসরাইল বিশ্বাসঘাতকদের সহযোগিতায় ফিলিস্তিনসহ অন্যান্য আরব ভূখণ্ড দখল করে আছে এবং আন্তর্জাতিক কোনো আইন কানুনের তোয়াক্কা না করে ফিলিস্তিনিদের মৌলিক অধিকার থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করে রেখেছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে সশস্ত্র সংগ্রাম ছাড়া গণভোট কি সফল হবে?

বিশ্লেষকদের মতে, গণভোট দিয়ে অধিকার আদায় করা কেবল তখনই সম্ভব যখন সশস্ত্র সংগ্রামের কারণে ইসরাইল তা মেনে নিতে বাধ্য হবে। সে কারণেই বলা হচ্ছে সশস্ত্র সংগ্রাম ও রাজনৈতিক প্রচেষ্টা একে অপরের পরিপূরক। #

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/২৭

ট্যাগ