জুন ২২, ২০২১ ১৭:৪১ Asia/Dhaka
  • ফিলিস্তিনের হামাস যোদ্ধা
    ফিলিস্তিনের হামাস যোদ্ধা

দখলদার ইসরাইলের সাথে গাজার ইসলামি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সঙ্গে সাম্প্রতিক যুদ্ধে ইসরাইলের লজ্জাজনক পরাজয়ের পর হামাস ও ইসলামি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের নেতারা এ যুদ্ধে সহায়তা করার জন্য ইরানের সর্বোচ্চ নেতার কাছে লেখা চিঠিতে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলেন।

জবাবে ইরানের সর্বোচ্চ আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীও যুদ্ধে বিজয়ে ফিলিস্তিনিদেরকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, 'আগামী দিনগুলোতে ফিলিস্তিন আরো বেশি শক্তিশালী এবং ফিলিস্তিনি তরুণ সমাজ ও প্রতিরোধ সংগঠনগুলোর মোকাবিলায় ইহুদিবাদী ইসরাইল আরো বেশি দুর্বল হয়ে পড়বে।' সর্বোচ্চ নেতা বলেন, 'বর্বর ইসরাইল শিগগিরই একথা উপলব্ধি করবে যে, ফিলিস্তিনি জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ আন্দোলন মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।' সে কারণে এবার গাজা যুদ্ধের পর ইসরাইলের পতনের দিন গণনা শুরু হয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন।

দখলদার ইসরাইলের বিরুদ্ধে ১২ দিনের যুদ্ধে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের বিজয় এই অঞ্চলের প্রতিরোধ শক্তিগুলোর জন্য নব যুগের সূচনা করেছে। এ বিজয় এমন এক নয়া অধ্যায়ের সূচনা করেছে যা চূড়ান্ত বিজয়ের দিকে ফিলিস্তিনিদেরকে নিয়ে যাবে। ফিলিস্তিনিরা আরো বেশি উদ্দীপ্ত ও আশার আলো দেখতে পাচ্ছে। ১২ দিনের যুদ্ধে গাজার ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস ও ইসলামি জিহাদ আন্দোলনের ছোড়া রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে ইসরাইলের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোম। ইসরাইল কিছু রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে সক্ষম হলেও অধিকাংশ রকেট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম হয়। এবারের যুদ্ধে দখলদার ইসরাইল এক নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে আর তা হচ্ছে নীল থেকে ফোরাত পর্যন্ত ইসরাইলের সাম্রাজ্য বিস্তারের স্বপ্ন ধূলিসাৎ হতে চলেছে। তারা ফিলিস্তিন প্রতিরোধ যোদ্ধাদের শক্তির ভাষা উপলব্ধি করতে পারছে যারা কিনা এত দিন ধরে ইসরাইলি সেনাদের গুলির বিনিময়ে পাথর দিয়ে প্রতিরোধ করে এসেছে।

ফিলিস্তিনের অসহায় জনগণ ৭৩ বছর ধরে ইসরাইলি জুলুম-নির্যাতন ও আগ্রাসনের শিকার হয়ে আসছে। নিজের বাড়ি থেকে তাদেরকে উৎখাত করা হচ্ছে কিন্তু তারপরও তারা দখলদার এই শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছে। পাথর মেরে প্রতিরোধ করার যুগ পেরিয়ে এসে ফিলিস্তিনিরা আজ নির্ভুল লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরাইলের হৃদপিণ্ডে আঘাত হানছে। আবাবিল পাখির বহন করা পাথর খন্ড যেমন আবরাহার বিশাল হস্তী বাহিনীকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছিল ঠিক তেমনি আজ নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ইসরাইলের নাভিশ্বাস উঠে গেছে।

বাস্তবতা হচ্ছে ৭৩ বছর আগে দখলদারিত্বের মাধ্যমে অবৈধভাবে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে তারা এ অঞ্চলের ফিলিস্তিনি অধিবাসীদের উপর জুলুম নির্যাতন ও দখলদারিত্ব চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি আমূল পাল্টে গেছে এবং দখলদার এই শক্তি ক্রমেই পতনের দিকে ধাবিত হচ্ছে।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা

২০১৫ সালে দেয়া এক ভাষণে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী ইসরাইলের পতনের ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন।

সে সময় তিনি অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে বলেছিলেন ইনশাআল্লাহ আল্লাহ যদি তৌফিক দেন তাহলে আগামী ২৫ বছরের মধ্যে এ অঞ্চলে ইসরাইল নামক কোন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব থাকবে না। সর্বোচ্চ নেতার এ ভবিষ্যতবাণী দ্রুতই ফলতে শুরু করেছে এবং সারাবিশ্ব দেখতে পাচ্ছে দখলদার ইসরাইল আজ ক্রমেই পতনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি গাজায় ১২ দিনের যুদ্ধে ইসরাইলের পরাজয় এই সম্ভাবনাকে আরও ত্বরান্বিত করেছে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন ইসরাইল যে দ্রুত পতনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তার একটি বড় প্রমাণ হচ্ছে অভিবাসী ইহুদিরা অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ছেড়ে নিজ নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছে। গত বেশ ক'বছর ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা অবৈধ ইহুদি অভিবাসীরা এ অঞ্চল ছেড়ে চলে যাচ্ছে। একটি দেশ বা রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থা থাকবে যা হবে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উপর ভিত্তি করে।

কিন্তু ইসরাইল অবৈধভাবে উড়ে এসে জুড়ে বসা একটি দখলদার শক্তি যাদের না আছে কোন নিজস্ব জনগোষ্ঠী না আছে কোন নিজস্ব ভূমি। স্থানীয় ফিলিস্তিনিদেরকে উচ্ছেদ করে ইসরাইলি কর্মকর্তারা দশকের পর দশক ধরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসকারী ইহুদিদেরকে উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে এ অঞ্চলে এনে জড়ো করেছিল। কিন্তু এখানে এসে ইহুদিরা উল্টো চিত্র দেখতে পাচ্ছে। তারা বুঝতে পারছে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে এবং মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে এখানে আনা হয়েছে। সে কারণে অভিবাসী ইহুদিরা ধীরে ধীরে এ অঞ্চল ছেড়ে চলে যাচ্ছে। খোদ ইসরাইলের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ১৯৪৮ সাল থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে সাত লাখ ২০ হাজারের বেশি ইহুদি অভিবাসী এ অঞ্চল ছেড়ে চলে গেছে এবং তারা আর কখনোই ফিরে আসেনি। ২০১৮ সালেও বহুসংখ্যক ইহুদি এ অঞ্চল ছেড়ে চলে যাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছে এবং ১৬ হাজার ৭০০ ইহুদি ইতিমধ্যে চলে গেছে।

দখলদার ইসরাইল যে ক্রমেই পতনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তার আরেকটি প্রমাণ হচ্ছে নিজেদের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দুর্বলতা। মাসের পর মাস ধরে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব অবৈধ ইসরাইল রাষ্ট্রের অস্তিত্বকে চরম হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। ফলে রাজনৈতিক ও সামাজিক অক্ষয় চরম আকার ধারণ করেছে। এ অবস্থায় ইসরাইলি কর্মকর্তারা ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে যতটানা জর্জরিত অভ্যন্তরীণ সংকটে তার চেয়ে আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যেহেতু ইসরাইলীদের নিজস্ব কোন জাতি সত্তার অস্তিত্ব নেই এবং বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ইহুদিদের মধ্যে জাতীয় ঐক্যের অভাব রয়েছে সে কারণে ইসরাইলের কর্মকর্তারা এটাকে তাদের অস্তিত্বের জন্য বিরাট হুমকি হিসেবে দেখছেন।

এদিকে ইসরাইলের অভ্যন্তরীণ সামাজিক অসন্তোষ ও গোলযোগ এমন চরম আকার ধারণ করেছে। ফলে ভেতর থেকেই ইসরাইল যেকোনো মুহূর্তে ধ্বসে পড়তে পারে।

সামরিকভাবেও ইসরাইল অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে। বহু বছর ধরে পাশ্চাত্যের গণমাধ্যমগুলো ইসরাইলের সামরিক বাহিনীকে অপরাজেয় শক্তি হিসেবে তুলে ধরেছে। এভাবে তারা আরবদের মধ্যে বিশেষ করে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের সাম্প্রতিক রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র বর্ষণ পাশ্চাত্যের ওই প্রচারণাকে মিথ্যা প্রমাণিত করেছে। আর এটাও প্রমাণ করেছে ইসরাইল কোন অপরাজেয় শক্তি নয়। ইসরাইল ভেবেছিল তাদের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোম সহজেই ফিলিস্তিনিদের ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে ঠেকিয়ে দিতে পারবে কিন্তু শেষ পর্যন্ত অত্যন্ত অপমানের সাথে তারা যুদ্ধবিরতিতে আসতে বাধ্য হয়।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ি সম্প্রতি বিশ্ব কুদস দিবসের ভাষণে লেবাননের বিরুদ্ধে ইসরাইলের ৩৩ দিনের যুদ্ধ এবং গাজায় ২২ দিন ও এরপর আট দিনের যুদ্ধে ইসরাইলি বাহিনীর একের পর এক পরাজয়ের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, এ থেকে বোঝা যায় ইসরাইলের শক্তি খুবই দুর্বল। সর্বশেষ গাজায় ১২ দিনের যুদ্ধেও ইসরাইলের সামরিক দুর্বলতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ অঞ্চলের প্রতিরোধ শক্তিগুলোর ধারাবাহিক বিজয় প্রমাণ করে দখলদার ইসরাইল খুব শিগগিরই বিলুপ্ত হতে চলেছে।#

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/

ট্যাগ