ইসরাইল মার্কিন সরকারের জন্য জাতিগুলোর সম্পদ লুণ্ঠনের মাধ্যম
ইসরাইল: মার্কিন সরকারের বর্বর প্রকল্প
মার্কিন সরকার অবৈধ রাষ্ট্র ইহুদিবাদী ইসরাইলের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের অন্যতম প্রধান রূপকার। ১৯৭০'র দশকের পর থেকে মার্কিন সরকারের এই ভূমিকা আরও লজ্জাজনকভাবে নগ্নরূপে ধরা পড়ছে।
মার্কিন সরকার ইহুদিবাদী ইসরাইলের সৃষ্টি ও এর শক্তি জোরদারের কাজে হাজার হাজার কোটি ডলার ব্যয় করেছে এবং এ কাজে আরও হাজার হাজার কোটি ডলার সাহায্য দেয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছে। যে কোনো মূল্যে ইসরাইলের প্রতি এ ধরনের ও সর্বাত্মক মার্কিন সমর্থন অব্যাহত রাখা কোনো বিস্ময়ের বিষয় নয়।
কিন্তু পশ্চিম এশিয়ায় একটি আঞ্চলিক যুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কা ও প্রতিরোধ আন্দোলনগুলোর চলমান প্রতিরোধ সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে আগ্রাসী ও সশস্ত্র ইসরাইলের ব্যাপারে মার্কিন ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত? কারণ ইসরাইল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে বিপদাপন্ন করছে। মানবিক ত্রাণ সাহায্যের ব্যাপারে মার্কিন দাবি এখন হাস্যকর এ কারণে যে ওয়াশিংটন একদিকে ফিলিস্তিনের ধ্বংসযজ্ঞে শরিক হচ্ছে এবং অন্যদিকে আকাশ থেকে ফিলিস্তিনিদের জন্য ত্রাণ সাহায্য নিক্ষেপের পদক্ষেপ নিয়ে ফিলিস্তিনিদের ক্ষোভের জখমে মলম দেয়ার চেষ্টা করছে।
মার্কিন সরকার অতীতেও উপনিবেশবাদী ও স্বৈরতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে সহায়তা দিয়েছে। কিন্তু ফিলিস্তিন সংকটের ক্ষেত্রে মার্কিন অবস্থান বেশ বিস্ময়কর ইসরাইলের সঙ্গে তার অসাধারণ সম্পর্কের কারণে। অধ্যাপক নোয়াম চমস্কি যেমনটি বলেছেন, ইসরাইল পশ্চিম এশিয়ায় আরব জাতীয়তাবাদকে ধ্বংস করে দিয়েছে এবং এ অঞ্চলে মার্কিন সরকারের জন্য সম্পদ লুণ্ঠনের মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। আর এই অবস্থা সৃষ্টির সময় থেকে আজ পর্যন্ত মার্কিন-ইসরাইলি বন্ধুত্ব পুরোপুরি অটুট ও অক্ষত রয়েছে।
ইসরাইল তার আগ্রাসনের ব্যাপারে কোনো মানবীয় সীমারেখা মেনে চলে না। অন্যদিকে প্রকাশ্যে ইসরাইলের প্রতি নিন্দাসূচক কোনো বাক্য উচ্চারণ করতেও সাহসী নয় যে ইসরাইল এখন যুদ্ধ-অপরাধ চালিয় যাচ্ছে।
ইহুদিবাদী ইসরাইল ও মার্কিন সরকারের সম্পর্কের সমীকরণ এখন এমন যে ইসরাইলের সব দুষ্কৃতির পেছনে রয়েছে মার্কিন সহযোগিতা এবং এমনকি মার্কিন সরকার চাইলেও ইসরাইলের অপরাধযজ্ঞ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম নয়।
ইহুদিবাদী ইসরাইলকে পশ্চিম এশিয়ার একমাত্র গণতান্ত্রিক শক্তি বলে তুলে ধরা এখন একটি তিক্ত পরিহাস। কারণ ইসরাইল এখন বিশ্বের সবচেয়ে উদ্ধত ও নির্দয় দখলদার এবং ফিলিস্তিনি জনগণকে বিতাড়িত করে ও তাদের ওপর জাতিগত শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে ইসরাইল জেঁকে বসেছে ফিলিস্তিনে।
আন্তর্জাতিক আইনের নানা মানদণ্ড দিয়ে বিশ্বে ন্যায় ও অন্যায়ের প্রতিবাদ করা হয়। কিন্তু ইসরাইলের বেলায় সেই প্রথম থেকেই সব ধরনের আন্তর্জাতিক আইন ও রীতি-নীতি পদদলন করা হয়েছে বিবেকের কোনো ধরনের দংশন ও পরিণতির চিন্তা ছাড়াই।
এবারও জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস যখন মানবাধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক নীতিমালা ইসরাইলের পক্ষ থেকে লঙ্ঘন করা হচ্ছে বলে বিবৃতি দিয়েছেন তখন ইসরাইল ও জাতিসংঘের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যায় তীব্র মাত্রায়।
আর এ থেকে বোঝা যায় জাতিসংঘ ইহুদিবাদী ইসরাইলের মত সরকারগুলোর ওপর তেমন প্রভাব ফেলতে সক্ষম নয়। ইসরাইল তার অবৈধ জন্মলগ্ন থেকে যুগে যুগে সব সময়ই শান্তির আবেদনগুলোকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। আর আন্তর্জাতিক ও বৈশ্বিক সংস্থাগুলোর ব্যর্থতা ও অক্ষমতার কারণে ইহুদিবাদী ইসরাইল অপরাধযজ্ঞ অব্যাহত রেখেছে এবং গত ২০২ দিনে তথা প্রায় সাত মাসে ৩৪ হাজারেরও বেশি বেসামরিক ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে তেলআবিবের সন্ত্রাসী শাসকগোষ্ঠী। নিহতদের বেশিরভাগই শিশু ও নারী।
(সূত্র: নিবন্ধটি সারজাহ ইয়াসমিনের লেখা Israel: A US project gone rogue শীর্ষক প্রবন্ধের সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর। মিসেস ইয়াসমিন একজন বোস্টন-ভিত্তিক বাংলাদেশী লেখক। তিনি হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলে কাজ করেন এবং বর্তমানে ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজিতে ডেটা ও মাইক্রো অর্থনীতিতে মাস্টার্স করছেন) #
পার্সটুডে/এমএএএইচ/২৬
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন