'ইমাম খোমেনি ছিলেন চরমপন্থা বিরোধী এবং কুরআন ও নবীর আহলে বাইত ছিল তার মানদণ্ড'
(last modified Mon, 29 Jul 2024 14:44:54 GMT )
জুলাই ২৯, ২০২৪ ২০:৪৪ Asia/Dhaka
  • আয়াতুল্লাহ আরাফী: \'ইমাম খোমেনি ছিলেন চরমপন্থা বিরোধী এবং কুরআন ও নবীর আহলে বাইত ছিল তার মানদণ্ড\'
    আয়াতুল্লাহ আরাফী: \'ইমাম খোমেনি ছিলেন চরমপন্থা বিরোধী এবং কুরআন ও নবীর আহলে বাইত ছিল তার মানদণ্ড\'

পার্সটুডে- রাশিয়ান প্রাচ্যবিদদের একটি দল, ইরানের ধর্মতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান ও তার সফরসঙ্গীদের সাথে এক বৈঠকে রহমতের ধর্ম পবিত্র ইসলাম সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণাগুলো দূর করার লক্ষ্যে প্রকৃত ইসলামের ব্যাখ্যা এবং তা প্রচারের উপর জোর দিয়েছেন।

মেহর বার্তা সংস্থার বরাত দিয়ে পার্সটুডে জানিয়েছে, আয়াতুল্লাহ আলিরেজা আরাফি রাশিয়ার মুসলমানদের ধর্ম বিষয়ক দফতরের প্রধান মুফতি শেখ রাভিল আইনুদ্দীনের আমন্ত্রণে 'দ্যা স্প্রিচুয়াল সিল্করোড' শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নেওয়ার জন্য মস্কো সফর করেছেন। মস্কোতে ইরানের রাষ্ট্রদূতকে সঙ্গে করে তিনি রাশিয়ার প্রাচ্য বিষয়ক ইন্সটিটিউটের একদল বিশেষজ্ঞের সাথে আলোচনা ও মতামত বিনিময় করেন।

প্রকৃত ইসলাম সম্পর্কে অবহিত হওয়া এবং একমেরু কেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থা মোকাবেলা করা জরুরি

রাশিয়ান একাডেমী অফ সায়েন্সেসের প্রাচ্য বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান "আলি আকবর আলী আকবারোভ" ইরানের সাথে এই ইনস্টিটিউটের যৌথ সহযোগিতাকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে দুই দেশের মধ্যকার সহযোগিতারও অনেক উর্ধ্বে বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি আরো বলেছেন, বিগত বছরগুলোতে উগ্র তাকফিরি, সালাফী ও ওয়াহাবীদের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের কারণে ইসলামের ব্যাপারে যে ভুল ধারণা তৈরি হয়েছে  তার কারণে রাশিয়াও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণেই আমরা প্রকৃত ইসলাম সম্পর্কে জানার জন্য ইরানের সাথে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করেছি।

রাশিয়ান একাডেমী অফ সায়েন্সেসের প্রাচ্য বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান এক মেরুকেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থা মোকাবেলা করার জন্য রাশিয়া, চীন এবং ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের মধ্যে যৌথ সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, এই তিনটি দেশ একটি শক্তিশালী ত্রিভুজ হিসাবে একসাথে রয়েছে।

বিশ্ব খ্রিস্টানদের ধর্মগুরু পোপের সাথে সাক্ষাতের পর এই রুশ বিশেষজ্ঞ আয়াতুল্লাহ আলিরেজা আরাফির সাথে তার সাক্ষাতের কথা উল্লেখ করে তিনি আয়াতুল্লাহ আলিরেজা আরাফির বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেছেন, ইব্রাহিমি ও অন্য একেশ্বরবাদী ধর্মের ভিত্তি একই। তাই এই অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ধর্মগুলোকে আমাদের সবাইকে কাছাকাছি আনতে ভূমিকা রাখবে।

এ ক্ষেত্রে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে রাশিয়ান একাডেমী অফ সায়েন্সেসের প্রাচ্য বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান "আলি আকবর আলী আকবারোভ", ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন মাজহাবকে কাছাকাছি আনার ব্যাপারে মরহুম আয়াতুল্লাহ তাসখিরির চিন্তাভাবনাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, আজ এই ধরনের চিন্তাভাবনা বা আইডিয়াকে কাজে লাগিয়ে রাশিয়ায় বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির মুসলমানদের মধ্যে গঠনমূলক আলোচনার পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে বন্ধুত্ব ও ঘনিষ্ঠতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ

রাশিয়ান একাডেমী অফ সায়েন্সেসের প্রাচ্য বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞান বিষয়ক পরিচালক ভিটালি নাউমকিনও এই বৈঠকে বলেছেন, এই ইনস্টিটিউটে ইরান আমাদের দীর্ঘদিনের বন্ধু। তিনি বলেন,

বর্তমান বিশ্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এবং দুই দেশের বিরুদ্ধেই পশ্চিমা প্রবল চাপের কারণে ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে বন্ধুত্ব ও ঘনিষ্ঠতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

ইসলামের দৃষ্টিতে সঠিক পাঠ এবং ভুল পাঠ:

এ ব্যাপারে মস্কো সম্মেলনে আয়াতুল্লাহ আলিরেজা আরাফী বলেছেন,

সর্বোচ্চ রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্তরে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান এবং রাশিয়ান ফেডারেশনের প্রচেষ্টায় উভয় দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ও সহযোগিতা বজায় রয়েছে, তবে আমাদের মধ্যকার সহযোগিতার বর্তমান পরিমাণে সন্তুষ্ট হওয়া উচিত নয়, কারণ এই অঞ্চলের এ দুই বৃহৎ ও শক্তিশালী দেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ওপর দ্বিপক্ষীয় এবং এই অঞ্চলের জাতিগুলো অভিন্ন স্বার্থের বিষয়টি নির্ভর করছে।

আয়াতুল্লাহ আলিরেজা আরাফী মস্কো বৈঠকে আরো বলেন,

ইরানের ইসলামি বিপ্লবী আদর্শের ভিত্তি হচ্ছে, কুরআন শরীফ এবং বিশ্ব নবীর আহলে বাইতের ইমামদের খাঁটি শিক্ষা যেখানে চরমপন্থার কোনো স্থান নেই।

আয়াতুল্লাহ আলিরেজা আরাফী এই সভায় দেয়া বক্তৃতার অন্য অংশে,ইসলামের আলোকে ইসলামি বিপ্লবের বার্তা ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন,

ইমাম খোমেনি  (র.) এবং কোমের ধর্মতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র থেকে ইসলামের যে প্রকৃত বাণী এবং ইসলামি বিপ্লবের যে বার্তা  তুলে ধরা হয়েছে তা থেকে ইসলামের সঠিক এবং ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানের উঠে এসেছে।

তিনি আরো বলেন,

বর্তমানে আমরা ইসলাম সম্পর্কে দুই ধরণের ভুল বার্তা বা ব্যাখ্যা প্রত্যক্ষ করছি। প্রথম ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে, বলা হচ্ছে ইসলামে উদারতার অবস্থান সর্বনিম্নে। এ ধররণের দাবির মাধ্যমে ইব্রাহিমি এবং একেশ্বরবাদী ধর্ম হিসাবে ইসলামের মৌলিক নীতিমালাগুলোকে উপেক্ষা করা হয়েছে এবং এটা পাশ্চিমাদের হীন স্বার্থে করা হয়েছে। ইসলাম সম্পর্কে এই ব্যাখ্যাকে আমরা বলি 'আমেরিকান ইসলাম'।

আয়াতুল্লাহ আলিরেজা আরাফী মস্কো সম্মেলনে আরো বলেন,

ইসলাম সম্পর্কে দ্বিতীয় ভুল বার্তা বা ব্যাখ্যা হচ্ছে, শান্তির ধর্ম ইসলামকে উগ্র ও হিংস্র ধর্ম হিসাবে চিত্রায়িত করা। আর এটা করা হচ্ছে, ধর্মের নামে গড়ে ওঠা উগ্র তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডকে অজুহাত করে। পশ্চিমাদের সমর্থনে এই বিভ্রান্ত ও উগ্র গোষ্ঠীর মাধ্যমে এভাবে ইসলাম সম্পর্কে সারা বিশ্বে ভুল বার্তা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ পশ্চিম এশিয়ায় উগ্র তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দায়েশ বা আইএস জঙ্গিদের উত্থানের কথা উল্লেখ করা যায়, যাদের বিরুদ্ধে ইরান ও রাশিয়া যৌথভাবে সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছিল। কিন্তু তারপরও এই উগ্র গোষ্ঠীগুলো বিভিন্ন স্থানে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রয়েছে।

আয়াতুল্লাহ আলিরেজা আরাফী আরো বলেছেন,

এ অবস্থায়, ইমাম খোমেনি  (র.) এবং কোমের  ধর্মতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র থেকে প্রকৃত ইসলামের যে বাণী প্রচার করা হয়েছিল সেটাই ছিল ইসলামের সঠিক এবং ভারসাম্যপূর্ণ বার্তা। তাই প্রকৃত ইসলামের ওপর ভিত্তি করে আমরা যে অগ্রযাত্রা শুরু করছি,তা দার্শনিক এবং যুক্তিবাদী চিন্তার আলোকে অত্যন্ত সঠিক ও যৌক্তিক।

আয়াতুল্লাহ আলিরেজা আরাফী আরো বলেছেন, এরই আলাকে আমরা মানবতা এবং মানুষের কল্যানের জন্য চিন্তা করি এবং আমরা ধর্মগুলোর মধ্যেও ঐক্যের আহ্বান জানাই। তাই বিভিন্ন ধর্ম, সংস্কৃতি ও সভ্যতার মধ্যে গঠনমূলক সংলাপ জরুরি।

আরাফি বলেছেন, এই সংলাপ ও পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে অবশ্যই ন্যায়বিচার এবং সকল মানুষের কল্যাণের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। যেখানে প্রয়োজন সেখানে ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করতে হবে।

মস্কো সম্মেলনে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের রাষ্ট্রদূত কাজেম জালালিও তেহরান-মস্কো সম্পর্কের ধারাবাহিক অগ্রগতির ওপর একটি প্রতিবেদন পেশ করেন এবং দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এই সম্পর্কের গুরুত্বের বিষয়টি তুলে ধরেন।

এই বৈঠকে মস্কোর ইসলামিক সেন্টারের প্রধান, রাশিয়ান একাডেমী অফ সায়েন্সেসের প্রাচ্য বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্রের বেশ ক'জন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ইরানের জমিয়তুল মোস্তফার আঞ্চলিক প্রধান,ইরান দূতাবাসের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের প্রধান উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া, ইবনে সিনা ইসলামিক স্টাডিজ ফাউন্ডেশনের প্রধানও উপস্থিত ছিলেন। #

পার্সটুডে/ রেজওয়ান হোসেন

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ