লক্ষ্য পূরণের জন্য সবচেয়ে ভালো মডেল হল ইসলাম: রুশ নওমুসলিম
https://parstoday.ir/bn/news/uncategorised-i67110-লক্ষ্য_পূরণের_জন্য_সবচেয়ে_ভালো_মডেল_হল_ইসলাম_রুশ_নওমুসলিম
নওমুসলিমদের আত্মকথা অনুষ্ঠানের এ পর্বে আমরা রুশ নওমুসলিম জনাব 'সের্গেই অফানাসিভ'-এর মুসলমান হওয়ার কাহিনী এবং ইসলাম সম্পর্কে  তাঁর কিছু বক্তব্য ও চিন্তাধারা তুলে ধরব।  
(last modified 2025-09-26T18:07:30+00:00 )
জানুয়ারি ০৫, ২০১৯ ১৭:০১ Asia/Dhaka
  • লক্ষ্য পূরণের জন্য সবচেয়ে ভালো মডেল হল ইসলাম: রুশ নওমুসলিম

নওমুসলিমদের আত্মকথা অনুষ্ঠানের এ পর্বে আমরা রুশ নওমুসলিম জনাব 'সের্গেই অফানাসিভ'-এর মুসলমান হওয়ার কাহিনী এবং ইসলাম সম্পর্কে  তাঁর কিছু বক্তব্য ও চিন্তাধারা তুলে ধরব।  

রুশ নওমুসলিম 'সের্গেই অফানাসিভ' কোনো ধর্মেই বিশ্বাস করতেন না। কিন্তু ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতার প্রতি তার ভালোবাসা এবং দারিদ্র, জুলুম ও বৈষম্যের বিরোধিতা তার মন-প্রাণকে টেনে আনে আধ্যাত্মিকতার জগতে। একটা দীর্ঘ সময় ধরে গবেষণার পর এইসব প্রশংসনীয় আদর্শ তথা সত্য ও বাস্তবতা প্রোজ্জ্বল হয়ে ওঠে তার কাছে।

'সের্গেই অফানাসিভ' ইতিহাস গবেষণা করে দেখতে পান যে মানুষের গড়া সরকারগুলো যুগে যুগে উচ্চতর আদর্শগুলোকে বাস্তবায়ন করতে পারেনি। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন: মানবসমাজ সৃষ্টির সূচনা-লগ্ন থেকেই মানুষ ন্যায়বিচারকে ভালোবেসেছে। যুগে যুগে মানুষের প্রতিবাদ বা বিদ্রোহগুলোর মূল কারণই ছিল ন্যায়বিচারের প্রতি ভালোবাসা। কিন্তু আমরা সব সময়ই দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার প্রত্যক্ষ করছি। তাই মানব সমাজে এমন রাষ্ট্র ও শাসন-ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি যেখানে উচ্চতর আদর্শ বাস্তবায়নের গ্যারান্টি থাকে।

ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় মানব সমাজ অল্প কিছু সময়ের জন্য হলেও ন্যায়বিচারের স্বাদ আস্বাদন করেছে। আর এই যুগটি হল বিশ্বনবী (সা.)'র শাসনামল। এ কারণেই 'সের্গেই অফানাসিভ' ধর্ম সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।

আসলে সব ধরনের অন্যায়, অনাচার, বৈষম্য, জুলুম, কুপ্রথা, কুসংস্কার, অশ্লীলতা ও শির্কের বিরুদ্ধে সংগ্রাম এবং সত্য, সৎ কাজ আর সততা ও এক আল্লাহর দিকে তথা মানুষকে মুক্তি ও সৌভাগ্যের দিকে পরিচালিত করাই ছিল যুগে যুগে নবী-রাসূলদের মিশনের মূল উদ্দেশ্য।  রুশ নওমুসলিম 'সের্গেই অফানাসিভ' এ প্রসঙ্গে বলেছেন: 'খোদায়ী ধর্মগুলোর মধ্যেই আমি পেয়েছি সুন্দরতম রাষ্ট্র ও শাসন-ব্যবস্থা। নবী-রাসূলরা স্বৈরশাসন, জুলুম ও অবিচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তারা একত্ববাদী হিসেবে যে দু'টি বড় লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করেছেন তা হল: আল্লাহর দিকে আহ্বান ও তাঁর নৈকট্য অর্জন এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা। আর তাই আমরা দেখি যে ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা ও সাম্যের মত মূল্যবোধগুলো নবী-রাসূলদের প্রচারিত শিক্ষাগুলোয় এবং তাদের জীবনে অত্যন্ত সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে।'

রুশ নওমুসলিম 'সের্গেই অফানাসিভ' একই প্রসঙ্গে আরো বলেছেন: 'নবী-রাসূলরা মানুষের সৌভাগ্য চাইতেন বলেই মানুষকে শান্তি ও পবিত্রতার দিকে আহ্বান জানিয়েছেন এবং মানুষকে মূর্তি আর বলদর্পীদের আনুগত্য করা থেকে রক্ষা করেছেন। আমার মতে মহান আল্লাহর এই প্রিয় বান্দারা  ব্যক্তিগত ও বস্তুগত  স্বার্থ হাসিলের পেছনে ছুটেননি। বরং তারা কেবল মানুষের মুক্তির জন্য সচেষ্ট ছিলেন। আমি নবী-রাসূলদের শিক্ষাগুলো গভীর মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করেছি। এই শিক্ষাগুলোর সুবাদে আমি মহান আল্লাহর বেশি কাছে পৌঁছতে পেরেছি ও তাঁর অস্তিত্ব অনুভব করতে পেরেছি। মহান আল্লাহ জীবন যাপনের সঠিক পদ্ধতি ও আদর্শই মানুষের কাছে তুলে ধরেছেন নবী-রাসূলদের মাধ্যমে।'

রুশ নওমুসলিম 'সের্গেই অফানাসিভ' মনে করেন একত্ববাদ মানুষের আত্মা ও প্রাণকে দেয় অপার সৌন্দর্য। তিনি বলেছেন:

'আমাদের চারপাশে রয়েছে মহান আল্লাহর অনেক নিদর্শন। যদি আমরা খুব ভালোভাবে চিন্তা-ভাবনা করি তাহলে দেখব যে জ্ঞান আমাদেরকে মহান আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের দিকে পরিচালিত করে। কারণ, প্রতিদিনই বাড়ছে বিজ্ঞানের আবিস্কারের পরিধি। প্রতিদিনই সৃষ্টি জগতের বা সৃষ্টি-রহস্যের নানা দিক আগের চেয়েও স্পষ্ট হচ্ছে। আর এ থেকেই এ বাস্তবতা ফুটে উঠে যে কোনো জড় বস্তুই নিজ থেকেই অস্তিত্ব লাভ করতে পারে না।'

জীবনের সব দিকের জন্য ইসলামের বিধান থাকা তথা ধর্ম হিসেবে ইসলামের পরিপূর্ণতা মুগ্ধ করেছে 'সের্গেই অফানাসিভ'-কে। বিশ্বনবী (সা.) যে রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তার উদ্দেশ্য ছিল খোদায়ী বিধান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠাসহ সম্পদের সুষম বণ্টন, সৎ কাজে উতসাহ দেয়া ও অসৎ কাজ প্রতিরোধের মত উচ্চতর নানা লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা। ঈমান, আধ্যাত্মিকতা, ন্যায়বিচার, পরিপূর্ণ পক্ষপাতহীন আইনের শাসন, চারিত্রিক উন্নয়ন, আন্তরিকতা, পবিত্রতা, ভ্রাতৃত্ব, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সচেতনতা জোরদার ছিল বিশ্বনবী (সা.)'র রাষ্ট্র ব্যবস্থার কয়েকটি প্রধান বৈশিষ্ট্য।

ব্যক্তি-স্বার্থকেন্দ্রীক দলাদলি, মুনাফা ও সম্পদের লালসা-এইসবের কোনো স্থান ছিল না বিশ্বনবী (সা.)'র রাষ্ট্র-ব্যবস্থায়। আর এইসব কারণেই বিশ্বনবী (সা.)'র  প্রবর্তিত ইসলামী রাষ্ট্র-ব্যবস্থা মানব জাতির জন্য সবচেয়ে উন্নত রাষ্ট্র ব্যবস্থা।  তাওহিদ বা একত্ববাদ-ভিত্তিক এই রাষ্ট্র ব্যবস্থায় ছিল ইহকালীন ও পরকালীন তথা আধ্যাত্মিক এবং বস্তুগত ক্ষেত্রে সার্বিক উন্নয়ন বা চিরস্থায়ী সৌভাগ্য অর্জনের গ্যারান্টি।

রুশ নওমুসলিম 'সের্গেই অফানাসিভ' ইসলামের এইসব শ্রেষ্ঠ বৈশিষ্ট্যের প্রেক্ষাপটে বলেছেন: 'আমি সৌভাগ্যময় জীবনের অধিকারী হওয়ার ক্ষেত্রে ইসলামের চেয়ে পরিপূর্ণ ও সর্বাঙ্গীন কোনো ধর্ম বা মতবাদের অস্তিত্ব দেখিনি। মানবজাতির উচ্চতর নানা লক্ষ্য পূরণের জন্য সবচেয়ে ভালো মডেল হল ইসলাম। মহান আল্লাহ মানুষকে দিয়েছেন বিবেক-বুদ্ধি ও জীবনাদর্শ বেছে নেয়ার স্বাধীনতা। আর এইসব ক্ষমতা ব্যবহার করে ন্যায়বিচার, মুক্তি ও শান্তির খোদায়ী পথ তথা ইসলামকেই বেছে নেয়া উচিত।

রুশ নওমুসলিম 'সের্গেই অফানাসিভ' ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর নিজের অনুভূতি তুলে ধরতে গিয়ে বলেছেন:

'আমি একজন বিশ্বাসী মুমিনে পরিণত হয়েছি। অবশ্য মাঝে মধ্যে আমার কোনো কোনো ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও আপনজন আমাকে এ জন্য তিরস্কারও করেন। কিন্তু আমি তাদেরও সৌভাগ্য কামনা করছি যাতে তারাও আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের অনুভূতি তথা ঈমানের সুমিষ্টতা উপভোগ করতে পারেন। আমি মনে করি প্রতিপালক স্রস্টা তথা মহান আল্লাহর প্রতি আনুগত্য মানুষের আত্মার সবচেয়ে গভীরে অবস্থান করছে। তাই মানুষ কখনও আল্লাহ থেকে ও তাঁর বিধান  থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ক্ষমতা রাখে না। মহান আল্লাহর বিধান না মানাই হল বর্তমান বিশ্বের সমস্ত সংকট, যুদ্ধ ও দ্বন্দ্বের উৎস।'#

 পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আশরাফুর রহমান/৫

খবরসহ আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সব লেখা ফেসবুকে পেতে এখানে ক্লিক করুন এবং নোটিফিকেশনের জন্য লাইক দিন