নিরাপত্তা পরিষদে ইয়েমেনের চিঠি
যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিষদ সহযোগিতা করছে: ইয়েমেনিদের অভিযোগ
-
মোহাম্মদ আলী আল হুথি
ইয়েমেনের রাজনৈতিক উচ্চ পরিষদের সচিব মোহাম্মদ আলী আল হুথি তার দেশের বিরুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের আগ্রাসনের ব্যাপারে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, সৌদি জোট ভয়াবহ যুদ্ধাপরাধ করলেও নিরাপত্তা পরিষদ এ ব্যাপারে টু শব্দটিও করছে না।
২০১৫ সালে ইয়েমেন যুদ্ধ শুরুর পর ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত নিরাপত্তা পরিষদ ইয়েমেন ইস্যুতে ১৭টি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। এ সব প্রস্তাবের বিষয়ে ইয়েমেনের হুথি সমর্থক ন্যাশনাল সালভেশন সরকার নিরাপত্তা পরিষদের সমালোচনা করে আসছে। সম্প্রতি ন্যাশনাল সালভেশন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেশাম শারাফ নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান সভাপতি আব্দুহ এবাদির কাছে একটি চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে তিনি বলেছেন, সৌদি আরব ভয়াবহ সামরিক আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে নিরাপত্তা পরিষদসহ আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থাই এর কোনো নিন্দা জানাচ্ছে না। অথচ জাতিসংঘের আইন অনুযায়ী ইয়েমেনের জনগণের ন্যায্য অধিকার আদায়ে যখনই ন্যাশনাল সালভেশন সরকার সরব হয়েছে কিংবা কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে তখনই আন্তর্জাতিক সমাজের কেউ কেউ বিরক্ত বোধ করেছে ও অস্থির হয়ে উঠেছে'।
বাস্তবতা হচ্ছে, নিরাপত্তা পরিষদ ইয়েমেন সংকট অবসানে কোনো ভূমিকা তো রাখেনি বরং সংকট দীর্ঘায়িত হওয়ার ক্ষেত্রে কাজ করে যাচ্ছে। ইয়েমেন ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদের বিভিন্ন প্রস্তাবে দেশটির সৌদিপন্থী পলাতক প্রেসিডেন্ট আব রাব্বু মানসুর হাদিকে সমর্থন জানানোর পাশাপাশি জনপ্রিয় আনসারুল্লাহ সংগঠন ও তাদের মিত্রদের সমালোচনা করা হয়েছে। এমনকি ইয়েমেনের বিরুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের অন্যায় আগ্রাসনের বিষয়েও কিছু উল্লেখ করা হয়নি নিরাপত্তা পরিষদের এসব প্রস্তাবে।
নিরাপত্তা পরিষদের এসব প্রস্তাব রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক। ইয়েমেন ইস্যুতে এ পর্যন্ত যতগুলো প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে তার মধ্যে মধ্যে ২২১৬ নম্বর প্রস্তাব সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৫ সালের ১৪ এপ্রিল নিরাপত্তা পরিষদে এ প্রস্তাব পাশ হয়েছিল। এতে স্পষ্টভাবে ইয়েমেনের জনপ্রিয় আনসারুল্লাহ সংগঠনকে নিন্দা জানানো হয়। অথচ সৌদি আরবই ইয়েমেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছিল। এ প্রস্তাবে সৌদি আরবের নাম উল্লেখ করা না হলেও সরাসরি আনসারুল্লাহর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তাদের সমালোচনা করা হয়েছে। এমনকি ইয়েমেনের বিরুদ্ধে বোমা হামলা বন্ধের জন্যও সৌদি আরবের প্রতি কোনো আহ্বান জানানো হয়নি। ফলে সৌদি আরব আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এবং সাত বছর ধরে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ইয়েমেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরুকারী হিসেবে নিরাপত্তা পরিষদ সৌদি আরবের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়নি কিন্তু ইয়েমেনে অস্ত্র বিক্রির ওপর ঠিকই নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। এর সুযোগ নিচ্ছে আমেরিকা এবং সৌদি আরবের কাছে আমেরিকা কোটি কোটি ডলার মূল্যের অস্ত্র বিক্রি করেছে। এ অবস্থায় নিরাপত্তা পরিষদের কর্মকাণ্ড ও আচরণের প্রতি ইয়েমেনিদের সমালোচনা যথার্থ বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।#
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১৩
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।