আফগানিস্তান পরিস্থিতি:
আফগানিস্তানে নিরাপত্তাহীনতার জন্য দায়ি আমেরিকার দখলদারিত্ব: কাজেমি কোমি
ইরানের প্রেসিডেন্টের আফগানিস্তান বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি বলেছেন, আমেরিকা ২০ বছর ধরে আফগানিস্তান দখল করে দেশটির অবকাঠামো ধ্বংস করেছে এবং ব্যাপকভাবে মানুষ হত্যা করেছে। হাসান কাজেমি কোমি এক সাক্ষাত্কারে একথা বলেন।
তিনি বলেন: মার্কিনীরা আফগানিস্তানে এমন একটি সরকার গঠন করেছে যারা ছিল অদক্ষ, অনভিজ্ঞ এবং আর্থিকভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত। আমেরিকানরা আফগানিস্তানে একটি পেশাদার সেনাবাহিনীও গঠন করতে দেয় নি বলে তিনি উল্লেখ করেন। একটি সরকার এবং একটি সেনাবাহিনী অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। কিন্তু সেরকম বাহিনী গড়তে না দিয়ে আমেরিকা তাদের সেনাবাহিনীর উপস্থিতি জায়েজ করার চেষ্টা চালিয়েছে। আফগানিস্তান সরকারকে এভাবেই আমেরিকানদের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল করে তোলার চেষ্টা চালিয়েছে।
জনাব কোমি আরও বলেন: দু:খজনকভাবে তারা সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও এমন সব কর্মকাণ্ড করেছে যা একটি ইসলামি দেশের ধর্মীয় সমাজের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে লিবারেল সংস্কৃতিতে পাল্টে দিতে চেয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই তাদের ওই লিবারেল সংস্কৃতি গ্রহণ করতে রাজি হয় নি।
প্রেসিডেন্টের এই বিশেষ প্রতিনিধি বলেন: আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টির জন্য আমেরিকাই দায়ী। দেশটিতে যে নতুন করে সন্ত্রাসী গোষ্ঠির অনুপ্রবেশ ঘটেছে বিগত ২০ বছর ধরে তারাই এর ক্ষেত্র তৈরি করেছে।
মার্কিনীরা কোত্থাও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে নি। আফগানিস্তান থেকে মার্কিনীদের পলায়নের পরও সবাই দায়েশের আবির্ভাব প্রত্যক্ষ করেছে। আমেরিকার সহযোগিতায় দায়েশ বাহিনীর কর্মকর্তারা চোরাই পথে সিরিয়া, ইরাকের বিভিন্ন দুর্গম এলাকায় লুকিয়ে রয়েছে। সেসব এলাকা থেকে তাদেরকে আফগানিস্তান এবং ইয়েমেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
২০০১ সালে ১১ সেপ্টেম্বরে অঅমেরিকার টুইন টাওয়ারে হামলার অজুহাতে আফগানিস্তানে হামলা চালায় জর্জ বুশ। তার পরবর্তী ২০ বছরে আফগানিস্তানে দারিদ্র্য, নিরাপত্তাহীনতা আর মাদকদ্রব্য উৎপাদনই সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ বছরে আফগানিস্তানের প্রায় দশ শতাংশ মানুষ মাদকাসক্ত হয়েছে।
অবশেষে আমেরিকা এবং তাদের পশ্চিমা মিত্ররা আফগানিস্তান থেকে তাড়াহুড়ো করে লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে। যেই তালেবানের বিরুদ্ধে তারা ২০ বছর ধরে যুদ্ধ করেছে সেই তালেবানই পুনরায় আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসীন হয়েছে। যদিও বিশ্বের কোনো দেশ এখনও তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয় নি। এদিকে দেশটির জনগণের অবস্থা খুবই খারাপ। জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা আফগানিস্তানের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং মানবীয় বিপর্যয়ের ব্যাপারে হুশিয়ারি দিয়েছে। তালেবান সরকার দেশে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম না হওয়ায় দায়েশ এখন দেশটিতে বিশেষ করে শিয়াদের ওপর হামলা বাড়িয়ে দিয়েছে।
আফগানিস্তানের এই করুণ পরিস্থিতির জন্য আমেরিকার ২০ বছরের দখলদারিত্বকেই দায়ি করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্টের এই আফগান বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি।#
পার্সটুডে/এনএম/১৫
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন