যে কারণে এবারের আরব লীগ শীর্ষ সম্মেলন একেবারেই ছিল ব্যতিক্রম
(last modified Sun, 21 May 2023 07:03:52 GMT )
মে ২১, ২০২৩ ১৩:০৩ Asia/Dhaka

সৌদি আরবের জেদ্দায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেল আরব লীগের ৩২তম শীর্ষ সম্মেলন। সম্মেলনে আরব লীগে সিরিয়ার প্রত্যাবর্তনের বিষয়টিকে সবাই স্বাগত জানানোর পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ যে কোনো সমস্যা সমাধানে আরব দেশগুলোর মধ্যে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। তবে ইয়েমেন, লেবানন, সুদান ও লিবিয়া সংকট সমাধানের উপায় নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো কিছু উত্থাপিত হয়নি।

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের উপস্থিতির বিষয়টি ছিল এবারের আরব লীগ শীর্ষ সম্মেলনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক। ১২ বছর পর তিনি এ সম্মেলনে অংশ নিলেন এবং অন্য দেশের শীর্ষ নেতাদের সাথে দেখা করেছেন। সম্মেলনের বিবৃতিতে সবচেয়ে গুরুত্ব পায় সিরিয়া ইস্যু। এতে যুদ্ধ পরবর্তী সিরিয়াকে সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয় যাতে তারা সংকট কাটিয়ে উঠতে পারে। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান সম্মেলন শেষে বলেছেন, 'আমাদের মতে সিরিয়ার দুর্ভাগ্যজনক এ অবস্থা চলতে পারে না। কেবলমাত্র দামেস্কের সাথে সহযোগিতা বিস্তারের মাধ্যমেই সিরিয়া সংকটের অবসান ঘটবে'।

সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের জেদ্দা সফর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ইসরাইলি গণমাধ্যম মন্তব্য করেছে, প্রেসিডেন্ট আসাদ আরব লীগে ফিরে আসেনি বরং বাস্তবতা হচ্ছে আরব লীগই সিরিয়ায় ফিরে এসেছে-এভাবে বলাই যুক্তিসঙ্গত।

জেদ্দা শীর্ষ সম্মেলনে সিরিয়া ইস্যুটি ছাড়াও আরব বিশ্বের অন্য আরো কিছু বিষয় নিয়ে কথাবার্তা হয়েছে। তবে তা কেবল আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল এবং একই কথার পুনরাবৃত্তি  হয়েছে মাত্র। ফিলিস্তিন সংকট এবং সম্প্রতি ইসরাইলি হামলার বিষয়ে আলোচনা হলেও ইসরাইলের নিন্দা এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন দানে জোরালো কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ইয়েমেন ইস্যুতে তারা সৌদি সমর্থিত ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট পরিষদের প্রতি  সমর্থন জানিয়ে রাজনৈতিক উপায়ে সংকট সমাধানে জাতিসংঘসহ এ অঞ্চলের অন্য দেশের প্রচেষ্টার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। তবে ইয়েমেনের হুথি আনসারুল্লাহ সমর্থিত ইসলামি স্যালভেশন সরকার পলাতক ও নির্বাসিত প্রেসিডেন্ট পরিষদের প্রতি আরব লীগের সমর্থনের নিন্দা জানিয়েছে। ইয়েমেনের বর্তমান রাজনৈতিক উচ্চ পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ আলী হুথি ইয়েমেনের ব্যাপারে আরব লীগের শীর্ষ সম্মেলনের বিবৃতি প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, এ থেকে বোঝা যায় আগ্রাসী দেশগুলো সংকট সমাধানে ইচ্ছুক নয় এবং তারা শান্তি চায় না।

আরব লীগের বৈঠকে লেবাননের ব্যাপারে তারা কেবল সেদেশে দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠান ও সরকার গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। এ ছাড়া লিবিয়ার সেনাবাহিনীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং দেশটিতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ের আনার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। সুদানেও বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে সংলাপের আহ্বান জানানো হয়েছে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এসব সমস্যা আরব বিশ্বের গুরুতর সমস্যা হলেও তা নিরসনে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে, অতীতে যেমন ইরানের বিরুদ্ধে নানান রকম অভিযোগ উত্থাপন করা হতো এবারের আরব লীগের বৈঠকে ইরান বিরোধী বক্তব্য দেয়া থেকে সবাই বিরত ছিল। বরং সব দেশ ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে।

মোটকথা, এবারের আরব লীগ শীর্ষ সম্মেলনে এ অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় জোর দেয়া হয়েছে এবং উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এমন যে কোনো কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার কথা বলা হয়েছে।#      

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/২১       

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ