ইসরাইলের টিবি চ্যানেল-১২'র ইহুদি বিশ্লেষকের মন্তব্য
'হামাসের আত্মসমপর্ণের কথা যারা চিন্তা করছে তারা অন্য জগতে হাঁটছে'
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে ইহুদিবাদী ইসরাইলি সেনাদের ফসফরাস বোমা দিয়ে পাশবিক হামলা এবং দক্ষিণ গাজায় প্রতিরোধ বাহিনী ও আগ্রাসী বাহিনীর মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ- ফিলিস্তিন সম্পর্কিত সর্বশেষ খবরের মধ্যে রয়েছে।
গাজা উপত্যকার আল-নুসিরাত, খান ইউনিস এবং দেইর আল-বালাহসহ বিভিন্ন এলাকায় ফিলিস্তিনি নাগরিকদের বাড়িঘরে আজ সকালে ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর বোমারু বিমান হামলা চালিয়েছে। ফিলিস্তিনি সূত্রগুলো জানিয়েছে, গাজার "কামাল আদওয়ান" হাসপাতাল, জাবালিয়া শরণার্থী শিবির এবং খান ইউনিস শহরে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর হামলা অব্যাহত রয়েছে।এই সূত্রগুলো আরো জানিয়েছে যে গতকাল রাতে কামাল আদওয়ান হাসপাতালের দিকে ইহুদিবাদী দখলদার ৭০টি কামানের গোলা নিক্ষেপ করেছে।
ফিলিস্তিনি সূত্রগুলি জাবালিয়া শিবিরে ইসরাইলি বাহিনীর বোমাবর্ষণের কথাও জানিয়েছে যেখানে ১০০টিরও বেশি পরিবার বাস করে। গাজা উপত্যকায় আবাসিক বাড়িঘরে ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর বিমান হামলায় আরও ১০ জনেরও বেশি বেসামরিক ব্যক্তি শহীদ এবং আরও কয়েক ডজন আহত হয়েছে।
সর্বশেষ প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ৭ অক্টোবর আল-আকসা তুফান অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর বর্বর হামলায় গাজার ১৬ হাজারের বেশি মানুষ শহীদ হয়েছেন। গাজার হাসপাতাল সূত্র আরো ঘোষণা করেছে, দখলদার বাহিনীর হুমকির মুখে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো একে একে গাজার উত্তর ছেড়ে দক্ষিণে চলে গেছে।
গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধে তেল আবিব শাসক গোষ্ঠীর পরিকল্পনা পরিবর্তন করা এবং এই উপত্যকার দক্ষিণে বর্বর এবং বেপোরোয়া হামলা শুরু করা থেকে এটা বোঝা যাচ্ছে যে ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হল খান ইউনিস শহরের ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা যার সঙ্গে হামাস এবং কাস্সাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অনেকের মতে খান ইউনিসে কাস্সামের কেন্দ্র এবং হামাসের প্রভাবশালী দু্ই সামরিক নেতা মোহাম্মদ দেইফ এবং ইয়াহিয়া সানোয়ারের জন্মস্থান।
যাইহোক বন্দী বিনিময়ের সময় যেমন দেখা গেছে ইহুদিবাদী ইসরাইলি সেনাদের সর্বাত্মক হামলা এবং ব্যাপক হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ হামাস ও প্রতিরোধের জনপ্রিয়তা তো কমায়ইনি বরং একে আরো শক্তিশালী করেছে এবং একই সঙ্গে তাদের প্রতি ফিলিস্তিনিরা জাতীয় সংহতি বাড়িয়েছে।
যুদ্ধ ক্ষেত্রের দৃশ্য থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদনগুলো ইঙ্গিত করে যে ফিলিস্তিনি বাহিনী দক্ষিণ গাজায় দখলদারদের অগ্রযাত্রার বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। এর ফলে খান ইউনিসের দিকে ইহুদিবাদী বাহিনীর অগ্রযাত্রাকে মারাত্মকভাবে থামিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে তারা ।
এদিকে কেবল সারায়া আল-কুদস, ফিলিস্তিনের ইসলামী জিহাদ আন্দোলনের সামরিক শাখা গত ২৪ ঘন্টায় ইসরাইলি সেনাবাহিনীর যানবাহন এবং সামরিক সরঞ্জাম ধ্বংস করার পাশাপাশি আরও ৯ জন ইসরাইলি অফিসার এবং সৈন্যকে লক্ষ্যবস্তু করতে সক্ষম হয়েছে। এভাবে আল-আকসা অভিযান শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত নিহত ইসরাইলি সেনার সংখ্যা ৪০৮ জনে পৌঁছেছে। গাজায় ইসরাইলি সেনাবাহিনীর ব্যর্থতার দিকে ইঙ্গিত করে ইহুদিবাদী বিশ্লেষকরা গাজার শুজাইয়েহ এলাকায় কঠিন যুদ্ধের কথা জানিয়েছেন। ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর চ্যানেল 12-এর বিশ্লেষক ইহুদ বেন হায়মো জার দিয়ে বলেছেন, "যে কেউ "আল-সিনওয়ার" এবং তার সহযোগী সৈন্যদের আত্মসমর্পণের কথা চিন্তা করছে তারা অন্য জগতে হাঁটছেন এবং এটা তাদের ভ্রান্ত ধারণা ছাড়া আর কিছুই নয়।
অন্যদিকে, ফিলিস্তিনের বাইরে ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতিদিন নতুন নতুন ফ্রন্ট খোলা হচ্ছে এবং সর্বশেষ ওয়াকিবহাল সূত্রে জানা গেছে, সিরিয়ার দারা প্রদেশের পশ্চিম উপকণ্ঠ থেকে প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলো দখলকৃত সীমান্তের কাছে ইহুদিবাদী শাসকদের ঘাঁটিগুলিতে ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা করেছে। তারা দখলকৃত গোলান মালভূমিতে ইসরাইলের অবস্থানকে লক্ষ্য করে এ হামলা চালায়। এসব ক্ষেপণাস্ত্র হামলার তীব্রতা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নজিরবিহীন ছিল এবং এর মাধ্যমে এটা দেখায় যে চারদিক থেকে প্রতিরোধকামী শক্তিগুলো দিনদিন ইসরাইলের বিরুদ্ধে দাঁত ভাঙা জবাব দেয়ার জন্য একতাবদ্ধ হচ্ছে।#
পার্সটুডে/ এমবিএ/ ৬
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।