গাজা যুদ্ধ: ইসরাইলের প্রতি আন্তর্জাতিক সমাজের সমর্থন দিন দিন কমছে
(last modified Mon, 22 Jan 2024 12:31:21 GMT )
জানুয়ারি ২২, ২০২৪ ১৮:৩১ Asia/Dhaka

"মর্নিং কনসাল্ট" ইন্সটিটিউটের নতুন জরিপের ফলাফলে দেখা যায় যে গাজা যুদ্ধের পর ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এক মাস ব্যাপী পরিচালিত হওয়া মর্নিং কনসাল্ট জরিপটিতে ৪৩টি দেশের প্রতিটি দেশে ৩০০ থেকে ৬ হাজার ব্যক্তি অংশ নিয়েছেন।

প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে যে ৪৩টি দেশে এই সমীক্ষা চালানো হয়েছে, তার মধ্যে ৪২টি দেশে ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রতি জনপ্রিয়তা কমেছে। এই অঞ্চলে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন বিশেষ করে হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইলের বর্তমান যুদ্ধে গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের ওপর নজিরবিহীন অপরাধযজ্ঞ ও গণহত্যার কারণে বৈশ্বিক স্তরে ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর সমর্থন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। কয়েক দশক ধরে ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠী একদিকে হলোকাস্ট ইস্যু এবং বৈশ্বিক নৃশংসতাকে ব্যবহার করে এবং ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনকে সন্ত্রাসী হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করে বিশ্বে নিজের একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছিল।

যাইহোক, গত এক দশকে এই চিত্রটি পরিবর্তন হতে শুরু করে। গাজার নিপীড়িত জনগণের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর চাপিয়ে দেয়া একাধিক যুদ্ধের পাশাপাশি অধিকৃত পশ্চিম তীরে এবং জেরুজালেমে বিপুল সংখ্যক ইহুদিবাদী বসতি নির্মাণের মতো বেআইনি পদক্ষেপের সাথে জড়িত থাকার কারণে ইসরােইলের প্রতি বৈশ্বিক জনসমর্থন কমতে শুরু করে।  ফিলিস্তিনিদের তাদের বাড়িঘর ও জমি থেকে বিতাড়নের ক্রমাগত প্রক্রিয়ার পাশাপাশি পশ্চিম তীরে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের ফলে পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটেছে।

এই ক্ষেত্রে টার্নিং পয়েন্ট হল গাজা উপত্যকায় ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর নিষ্ঠুর ও পাশবিক যুদ্ধ  যা মানবাধিকারের সমস্ত নিয়ম কানুন লঙ্ঘন করেছে। গাজায় বেসামরিক মানুষ হত্যা ২৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। পাশাপাশি বাড়িঘর এবং অবকাঠামো ধ্বংসের পাশাপাশি গাজার ৯০ ভাগ জনগণের বাস্তুচ্যুত হওয়ার মাধ্যমে গাজায়  ইহুদিবাদীদের বর্বরতার গভীরতার প্রমাণ পাওয়া যায়।

প্রকৃতপক্ষে, গাজার যুদ্ধ এবং আত্মরক্ষার অজুহাতে গাজায় অপরাধমূলক হামলা চালিয়ে যাওয়ার জন্য ইহুদিবাদী শাসকদের জেদ পরিস্থিতিকে আরো খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আরেকটি বিষয় যা উল্লেখ করা খুবই প্রয়োজন তা হচ্ছে ইসরাইলের কৌশলগত মিত্র হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার পশ্চিমা মিত্র জার্মানি ও ব্রিটেনের মতো ইউরোপীয় দেশগুলোর পূর্ণ সমর্থন বিশ্বজুড়ে ইসরাইলের ভাবমূর্তির ওপর উল্লেখযোগ্যভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল এবং ল্যাটিন আমেরিকার বেশ কয়েকটি দেশের জনগণ, যারা ইহুদিবাদী শাসন সম্পর্কে আগে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেছিল, তারা এখন এই শাসক গোষ্ঠী সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেছে। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং যুক্তরাজ্যের মতো দেশের লোকেরা যারা আগে থেকেই ইসরাইল সম্পর্কে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করছিল তারা এখন এই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির বৃদ্ধির সাক্ষী। মর্নিং কনসাল্টের রাজনৈতিক তথ্য বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর "স্যান্ট ফ্রিসবি" বলেছেন: এই তথ্যগুলোর মাধ্যমে দেখায় যে আন্তর্জাতিক সমাজে ইসরাইল কতটা কঠিন পথে রয়েছে৷

অন্যদিকে ফিলিস্তিনের গাজায় ‘গণহত্যার অপরাধে’ ইসরাইলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মামলা দায়ের করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। গাজায় প্রায় তিন মাস ধরে অব্যাহতভাবে চালানো ধ্বংসযজ্ঞ ও বোমা হামলায় ২১ হাজার ৫০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হওয়ার পর এমন অভিযোগে মামলা করল দেশটি। ওই আদালতে করা মামলার আবেদনে গাজায় ইসরাইলের কর্মকাণ্ডকে ‘গণহত্যামূলক’ উল্লেখ করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। কেননা ইসরায়েল উদ্দেশ্যমূলকভাবে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ, জাতিগত ও জাতিগোষ্ঠী ধ্বংস করেছে। গাজায় ফিলিস্তিনিদের হত্যাসহ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং মানুষের জীবন বিপর্যস্ত করে তোলা হয়েছে বলেও মামলার আবেদনে বলা হয়। ইসরাইলের বিরুদ্ধে মামলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। পরিশেষে এটা বলা যায় যে আন্তর্জাতিক সমাজে ইসরাইলের প্রতি নৈতিক সমর্থন দিন দিন কমছে এবং এই প্রবণতা গাজায় আগ্রাসন বন্ধ করার জন্য মার্কিন যুৃক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ বাড়বে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। #

পার্সটুডে/বাবুল আখতার/২২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।