ইসরাইলের ইউনিট ৮২০০: গুজব প্রচার, চরিত্র হনন ও ধর্মীয় রাজনৈতিক সংঘাত বাঁধানোর কেন্দ্র
(last modified Thu, 04 Apr 2024 10:04:08 GMT )
এপ্রিল ০৪, ২০২৪ ১৬:০৪ Asia/Dhaka
  • ইসরাইলি গোয়েন্দা বিভাগের বিশেষ ইউনিট ও তার বিচিত্র তৎপরতা
    ইসরাইলি গোয়েন্দা বিভাগের বিশেষ ইউনিট ও তার বিচিত্র তৎপরতা

ইহুদিবাদী ইসরাইলের ইউনিট ৮২০০ নামক ইউনিট ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থার একটি শাখা। এর কর্মীদের কাজ হল মিডিয়াতে প্রচার-প্রোপাগান্ডার যুদ্ধ চালানো, গুজব প্রচার,সামাজিক সংঘাত বাঁধানো, আঁড়ি পেতে তথ্য শোনা ও সাংকেতিক গোপন বার্তার অর্থ বা কোড উন্মোচন করা।

ইউনিট ৮২০০ প্রতিষ্ঠা: 

এই সংস্থা বা ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৯৫২ সালে ইসরাইল প্রতিষ্ঠার চার বছর পর মার্কিন যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে। এই ইউনিটের স্থায়ী ঘাঁটি হল তেলআবিবের উত্তরে জিলোট শহরে। ইউনিট ৮২০০ ইসরাইলি যুদ্ধ-মন্ত্রণালয়ের সবচেয়ে বড় ইউনিট। এর বেশিরভাগ সদস্যের বয়স ১৬ থেকে ১৮। প্রতিরক্ষা বার্তা নামক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী ২০০৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত ইসরাইল হাইস্কুল পর্যায়ের হাজার হাজার ছাত্রকে এখানে নিয়োগ করেছে।

ইউনিট ৮২০০'র নানা দায়িত্ব : 

ইউনিট ৮২০০'র কর্মী তথা গোয়েন্দা বাহিনীর দায়িত্ব হল ইহুদিবাদী চিন্তাধারার প্রসার ঘটানো, প্রাচ্যে ও মুসলিম বিশ্বে প্রভাব সৃষ্টি এবং প্রাচ্যের জাতিগুলো ও মুসলমানদের মধ্যে নানা বিষাক্ত সংস্কৃতি ও চিন্তা-ভাবনা ছড়িয়ে দেয়া। আদর্শিক, মানবীয় ও নৈতিক মূল্যবোধগুলোর ওপর নানা আঘাত হানাও এই সংস্থার অন্যতম কাজ। ইসরাইল একটি সাইবার-বাহিনী গঠন করেছ যাতে ভারত ও পাকিস্তান, চীন ও জাপান এবং মুসলিম সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে সংঘাত বাঁধিয়ে দেয়া যায়।  আর এসব কাজ করে ইসরাইল তার সম্প্রসারণবাদী ও আধিপত্যকামী অ্যাজেন্ডাগুলোকে  আর শান্তভাবে এগিয়ে নিতে চায়। 

ইউনিট ৮২০০'র সাইবার বাহিনী 

ইউনিট ৮২০০'র হাজার হাজার সদস্য এখন বিভিন্ন দেশের ইন্টারনেট ও সামাজিক মিডিয়াগুলোর গ্রাহকের ছদ্মবেশে নানা ধরনের গুজব ছড়ানো, স্বাধীন দেশগুলোর স্বাধীনচেতা নেতাদের চরিত্র হনন এবং ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সংঘাতসহ নানা ধরনের সংঘাত বাঁধানোর কাজে সক্রিয়।

ইসরাইলের বিরোধী দেশগুলোতে সাইবার আঘাত হানার জন্য নানা ধরনের ভাইরাস বা ম্যালওয়ার তৈরি ও সেসবের প্রয়োগ ঘটানোও ইউনিট ৮২০০'র অন্যতম কাজ। যেমন, ইসলামি ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচিতে নৈরাজ্য বাঁধানোর জন্য ইসরাইল স্টুক্সনেট নামক ভাইরাস প্রয়োগের চেষ্টা করেছিল।

দৈনিক রাই আল ইয়াওম কিছুকাল আগে ইহুদিবাদী সূত্রগুলোর উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছিল ইউনিট ৮২০০ ইলেকট্রনিক ও সাইবার যুদ্ধে ইসলামী ইরানকে তাদের সবচেয়ে বড় শত্রু ও প্রতিদ্বন্দ্বী বলে মনে করে।

এইসব সূত্রের বর্ণনা অনুযায়ী ইউনিট ৮২০০'র অনেক সেনা ফার্সি ভাষাসহ বিভিন্ন ভাষায় দক্ষ। সাইবার-স্পেস বা ইন্টারনেট-ভিত্তিক মাধ্যমগুলোর পরিবেশকে ইরানের বিরুদ্ধে বিষিয়ে তোলার জন্য এই ইউনিটের সদস্যদেরকে প্রাইমারি স্কুল থেকেই ফার্সি ভাষা শেখানো হয়। এই গ্রুপের কোনো কোনো সদস্য লেখক হিসেবে এমনসব লেখা বা পোস্ট প্রচার করেন এবং মিডিয়ার জগতে প্রচারের ঝড় তোলার চেষ্টা করেন যাতে ইরানের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও কর্মকর্তাদের উপনিবেশবাদ বিরোধী মতামতগুলো বিশ্বে দুর্বল হয়ে পড়ে। 

ইসরাইলের ইউনিট ৮২০০'র সদস্যরা গোয়েন্দা তৎপরতা চালানোর উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দেশে তথ্য সংগ্রহ ও পর্যবেক্ষণের কাজেও জড়িত থাকে। পশ্চিম এশিয়ায় নানা গুপ্ত হত্যা বা সন্ত্রাসী হত্যাকাণ্ডের দিক-নির্দেশনা দিয়েছে এই ইউনিটের সেনারা।

২০১০ সালে নিউইয়র্ক টাইমস সিরিয়ায় এই ইউনিটের অভিযানের বিষয়ে খবর দিয়েছিল একজন মার্কিন নিরাপত্তা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে। ওই পত্রিকার তথ্য অনুযায়ী ২০০৭ সালে ইউনিট ৮২০০ সিরিয়ার দেইর আজ যুর অঞ্চলে অবস্থিত পরমাণু স্থাপনার ওপর হামলার জন্য প্রয়োজনীয় নানা তথ্য ইসরাইলি বিমান বাহিনীকে সরবরাহ করেছিল।  

ইসরাইলি নিরাপত্তা সূত্রগুলোর তথ্য অনুযায়ী ইউনিট ৮২০০ পশ্চিম এশিয়া ও আশপাশের অঞ্চলে নানা সন্ত্রাসী অভিযান পরিচালনার কাজে ড্রোন ব্যবহার করে থাকে।

ইসরাইলের বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সামরিক বিশেষজ্ঞ ইয়োসসি মিলম্যান জানিয়েছেন, ইউনিট ৮২০০'র অনুপস্থিতিতে অধিকৃত ফিলিস্তিনে কোনো গোয়েন্দা অভিযান চালানো হয় না এবং এ অঞ্চলের বাইরেও  ইসরাইলের যে কোনো অভিযান এই ইউনিটের গোয়েন্দা সহায়তা নিয়ে থাকে। #

পার্সটুডে/এমএএইচ/০৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।            

ট্যাগ