মে ১৯, ২০২৪ ১২:৫৭ Asia/Dhaka
  • ইহুদিবাদে ঘৃণা এবং বিদ্বেষ কেন এই মাত্রায় পৌঁছাল?

ইহুদিবাদ একটি রাজনৈতিক আন্দোলন হিসাবে সবসময়ই বিতর্কিত হয়েছে এবং এই আন্দোলনে ঘৃণার উচ্চ অনুভূতির কারণে ইহুদিবাদী জনগোষ্ঠী অনেক নেতিবাচক মতামতের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। এই আন্দোলনে ঘৃণার চেতনা বৃদ্ধির একটি মৌলিক বিষয় হল ইহুদিদের অধিকার রক্ষা এবং ইসরাইল রাষ্ট্র গঠনের নামে পরিচালিত পন্থা ও কর্ম। এই চরমপন্থি আন্দোলনের অনুসারীদের মধ্যে ঘৃণার চেতনা ছড়িয়ে দেওয়ার কিছু প্রধান কারণ এখানে আমরা তুলে ধরছি।

অভ্যন্তরীণ বর্ণবাদ

ইহুদিবাদীদের মধ্যে বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়ার একটি প্রধান কারণ হল অভ্যন্তরীণ বর্ণবাদ যা তাদের অনেকেই অন্যান্য ইহুদিদের কাছ থেকে অনুভব করে। এই বর্ণবাদ ইহুদি-বিদ্বেষের দীর্ঘ ইতিহাস এবং অন্যান্য ইহুদিদের মাধ্যমে ইহুদিদের প্রতি বৈষম্যের প্রতিক্রিয়ার ফল। কিছু ইহুদিবাদী জনগোষ্ঠী তিক্ত ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতার কারণে এবং অন্যান্য ইহুদি দলের কাছ থেকে অনিরাপত্তা বোধ করায় বর্তমানে ইহুদি যারা নিজেদেরকে উচ্চতর মনে করে তাদের মধ্যে এক ধরনের হীনমন্যতার অনুভূতি রয়েছে যা অন্যদের প্রতি বিশেষ করে ফিলিস্তিনিদের প্রতি আক্রমনাত্মক, হিংসাত্মক এবং বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব প্রকাশ করে।

এছাড়াও, ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের আক্রমণ এবং সামরিক নীতিতে এই অনুভূতিগুলো দেখা যায়।

ধর্মীয় উগ্রবাদ এবং বহিরাগত বর্ণবাদ

ইহুদিবাদে ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়ার আরেকটি প্রধান কারণ হলো নিজেদেরকে ধর্মীয় এবং জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বে বিশ্বাস করা। ইহুদিবাদী মতাদর্শ এমন এক চরমপন্থি ধর্মীয় এবং জাতিগত আধিপত্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে যার আলোকে ইহুদিরা বিশ্বাস করে যে ইহুদিরা সৃষ্টিকর্তার "নির্বাচিত লোক" এবং ফিলিস্তিনের ভূমি এবং পশ্চিম এশিয়ার অংশে কেবল তাদেরই শাসন করার অধিকার রয়েছে। এই বিশ্বাস ও অনুভূতিগুলো দখলদারিত্ব, বর্ণবাদ এবং এমনকি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের মতো নীতির দিকে পরিচালিত করেছে যা বিভিন্ন ইহুদি এবং ইহুদিবাদী সম্প্রদায়ের মধ্যে ঘৃণা ও বিদ্বেষের অনুভূতিকে শক্তিশালী করেছে। অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরা‌ইলের বসতি নির্মাণ এবং উন্নয়ন যা জাতিসংঘের মাধ্যমে বারবার নিন্দা করা হয়েছে এই নীতিগুলো একটি উদাহরণ।

অপপ্রচার এবং মিথ্যা প্রচার

চলমান বিদ্বেষের একটি অংশ মিডিয়া এবং ইহুদিবাদী প্রতিষ্ঠান দ্বারা প্রচারিত অপপ্রচার এবং মিথ্যাচারের কারণেও ঘটে। নিরাপত্তা হুমকি এবং ফিলিস্তিনি কর্মকান্ড সম্পর্কে মিথ্যা এবং অতিরঞ্জিত তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে এসব মিডিয়া তাদের সহিংস ও নিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ডকে ন্যায্যতা দেওয়ার পাশাপাশি তাদের অনুসারী বাড়ানোর চেষ্টা করে। উদাহরণস্বরূপ গত ৭ অক্টোবরে ইহুদিবাদী ইসরাইলে হামাসের প্রতিশোধমূলক হামলার সময় কিছু মিডিয়া হামাসের দ্বারা সংঘটিত সহিংসতা সম্পর্কে অতিরঞ্জিত এবং মিথ্যা দাবি প্রকাশ করেছিলযা পরে মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছিল।

সামরিক উদ্দেশ্যে ঘৃণা ও বিদ্বেষকে লালন করা হচ্ছে

ফিলিস্তিনি ও অন্যান্য প্রতিরোধ গোষ্ঠীর সঙ্গে মোকাবিলায় ইসরাইলের সামরিক কর্মক্ষমতা বা সামরিক ক্ষমতা প্রয়োগ ইহুদিবাদীদের মধ্যে ঘৃণা বৃদ্ধির আরেকটি কারণ। সামরিক আগ্রাসন, বেসামরিক মানুষ হত্যা, বাড়িঘর ও অবকাঠামো ধ্বংস এবং অর্থনৈতিক অবরোধ সবই সহিংস আচরণের উদাহরণ যা কোনো না কোনোভাবে ইহুদিবাদীদের মধ্যে ঘৃণা ও বিদ্বেষের নৈতিকতাকে লালন করে চলেছে। কেবলমাত্র গাজার বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক যুদ্ধে ইসরাইলি বোমা হামলার ফলে অনেক বেসামরিক নাগরিকসহ ৩৪ হাজারেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে এবং গাজার গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। এটা সত্য যে ঘৃণা ও বিদ্বেষ নিয়ে এই ধরনের সামরিক অপরাধযজ্ঞ ও  হত্যাকাণ্ড তখনই টিকে থাকতে পারে বা চলতে পারে যতক্ষণ পর্যন্ত ইহুদিবাদীরা এটিকে সমর্থন করবে। আর এটিই বাস্তব ঘটনা।

কূটনীতি এবং সংলাপের প্রতি মনোযোগের অভাব

অনেক ক্ষেত্রে, এমনকি আমেরিকা ও ইউরোপেও ইহুদিবাদ সমস্যা সমাধানে কূটনীতি ও সংলাপ ব্যবহার না করে বলপ্রয়োগ ও রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগের আশ্রয় নিয়েছে। ইহুদিবাদীদের মধ্যে ক্রমাগত বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব তৈরি করা এবং উত্তেজনা বৃদ্ধির পাশাপাশি এই অ-গঠনমূলক পদ্ধতির কারণে অনেক মানুষ এবং পশ্চিমা সমাজ মনে করে যে ইহুদিবাদ কেবল নিজের স্বার্থ সুরক্ষিত করতে চায় এবং অন্যের অধিকার ও মতামতের প্রতি যত্নশীল নয়।

সংক্ষেপে, ইহুদিবাদে ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়ার মূল কারণগুলো হচ্ছে অভ্যন্তরীণ বর্ণবাদ, ধর্মীয় ও জাতিগত চরমপন্থা,  মিথ্যা প্রচারণা, সামরিক নৃশংসতা এবং কূটনীতি ও সংলাপে জড়িত হওয়ার অনিচ্ছার অনুভূতি। # 

Image Caption

 

পার্সটুডে/এমবিএ/১৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। 

 

ট্যাগ