ফিলিস্তিনি খেলোয়াড়দের ওপর ইসরাইলের ইচ্ছাকৃত হত্যাযজ্ঞ 
(last modified Mon, 15 Jul 2024 11:40:06 GMT )
জুলাই ১৫, ২০২৪ ১৭:৪০ Asia/Dhaka
  • ফিলিস্তিনি খেলোয়াড়দের ওপর  পরিকল্পিতভাবে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল
    ফিলিস্তিনি খেলোয়াড়দের ওপর পরিকল্পিতভাবে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল

ফিলিস্তিনের ক্রীড়া বিষয়ক কর্মকর্তারা ফিলিস্তিনি খেলোয়াড়দের ওপর ইহুদিবাদীদের ব্যাপক হত্যাযজ্ঞের খবর দিয়েছেন।

খেলোয়াড় ও ক্রীড়ামোদী ব্যক্তিরা প্যারিস গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক অনুষ্ঠানের জন্য যখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন তখন গাজায় ফিলিস্তিনি খেলোয়াড়দের ওপর ইসরাইলি গণহত্যার সর্ব-সাম্প্রতিক বর্বর ও দানবীয় অধ্যায় শুরু হওয়ার খবর এল। আগামী ২৬ জুলাই এই বিশ্ব অলিম্পিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা শুরু হচ্ছে। 

পার্সটুডে জানিয়েছে, ফিলিস্তিন জাতীয় অলিম্পিক কমিটির প্রেসিডেন্ট জিব্রাইল রজব বলেছেন, গত ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে ৪০০ ফিলিস্তিনি খেলোয়াড়, প্রশিক্ষক ও ক্রীড়া কর্মকর্তা হতাহত হয়েছেন। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টা অলিম্পিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সংগ্রামী ফিলিস্তিনি দৌড়বিদ মজিদ আবু মেরাহিল জুন মাসে মারা যান। তিনি কিডনির অচলতাজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। ইসরাইলি আগ্রাসনে গাজার (বেশিরভাগ) হাসপাতালগুলো ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় এবং চিকিৎসা সেবার অভাবে মেরাহিল মারা যান। 

ফিলিস্তিনের ফুটবল ফেডারেশনও জানিয়েছে, বিশিষ্ট ফিলিস্তিনি ফুটবলার আহমাদ আবুল আতা ও তাঁর পরিবারের সব সদস্য গত জুন মাসে ইসরাইলি বিমান হামলায় শহীদ হয়েছেন। তিনি গাজার আল-আহালি ক্লাবের খেলোয়াড় ছিলেন। আবুল আতার স্ত্রী ছিলেন একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। ইসরাইলি ওই বিমান হামলায় তার স্ত্রী ও দুই সন্তানও শহীদ হন। 

এ ছাড়াও আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বিচারক বা রেফারির ভূমিকা পালনকারী ফিলিস্তিনি ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব হানি মাসমা ইসরাইলি বিমান হামলায় মারাত্মকভাবে আহত হয়ে শাহাদাত বরণ করেন।

ফিলিস্তিনি ক্রীড়াবিদদের বিরুদ্ধে ইসরাইলি পৈশাচিকতা এমন সময় ঘটছে যখন আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি ও ফেডারেশনগুলো এইসব ক্রীড়াবিদদের সমর্থনে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না। এর আগে রাশিয়ার ক্রীড়াবিদরা ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অলিম্পিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। অবশ্য তাদেরকে অলিম্পিক কমিটির পতাকার আওতায় এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল।

এদিকে ইরানসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ইসরাইলকে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বহিষ্কারের গণদাবী ক্রমেই জোরদার হচ্ছে। আন্তর্জাতিক ফুটবলসহ অলিম্পিক গেইম থেকে ইসরাইলকে বহিষ্কারের ন্যায্য দাবি নিয়ে অনেকেই নানা আবেদনপত্রে স্বাক্ষর দিচ্ছেন।  তারা বৈশ্বিক বা আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর দ্বিমুখী নীতিরও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।  তারা বলছেন ইউক্রেনের ওপর হামলার কারণে যদি রাশিয়াকে আন্তর্জাতিক নানা ক্রীড়া প্রতিযোগিতা থেকে বাদ দেয়া হয় তাহলে ৭৫ বছর ধরে দখলদারিত্ব, গণহত্যা ও বিশেষ করে বর্তমানে গাজায় পৈশাচিক গণহত্যা চালানোর দায়ে কেন ইসরাইলকেও আন্তর্জাতিক খেলাধুলা থেকে বহিষ্কার করা হবে না? এ অবস্থায় প্যারিস অলিম্পিক নিয়ে ইসরাইল আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। 

আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গনের মত আন্তর্জাতি ক্রীড়া-অঙ্গনেও ইহুদিবাদী ইসরাইলকে বর্ণবাদের দায়ে ও দখলদারিত্বের দায়ে একঘরে বা বয়কট করার চেষ্টা চালানো উচিত বলে নিরপেক্ষা ও মানবতাবাদী বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এ ব্যাপারে দক্ষিণ আফ্রিকাকে বয়কট করার দৃষ্টান্তের মত পদক্ষেপের পুনরাবৃত্তি করা যেতে পারে বলে তারা মনে করছেন। 

ইহুদিবাদী ইসরাইল ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে পশ্চিমা সরকারগুলোর সর্বাত্মক সহায়তা ও সমর্থন নিয়ে পশ্চিম তীর ও গাজায় মজলুম ও প্রতিরক্ষাহীন ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যা অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। এর জবাবে গাজায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন ও লেবানন, ইরাক, ইয়েমেন ও সিরিয়ার প্রতিরোধ আন্দোলনগুলো ইসরাইলের এইসব অপরাধযজ্ঞের প্রতিশোধ নেবে বলে ঘোষণা করেছে।

ইসরাইলি বর্বরতায় এ পর্যন্ত গাজায় ৩৮ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি শহীদ ও ৮৭ হাজারেরও বেশি আহত হয়েছে। 

ইসরাইলের অস্তিত্ব গড়ে ওঠে ১৯১৭ সালে উপনিবেশবাদী ব্রিটেনের ব্যালফোর নামক ঘোষণার আলোকে এবং বিশ্বের নানা অঞ্চল থেকে ইহুদিদেরকে ফিলিস্তিনে অভিবাসন করতে উৎসাহ যুগিয়ে। ১৯৪৮ সালে ইসরাইল তার আনুষ্ঠানিক অস্তিত্ব ঘোষণা করে। সেই থেকে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যার এবং গোটা ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডগুলোকে দখলে নেয়ার  নানা ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। 

বিশ্বের কয়েকটি দেশ ইসলামী জনশাসনতান্ত্রিক ইরানের দাবির সঙ্গে সুর মিলিয়ে ইসরাইলি উপনিবেশবাদী শাসন বিলুপ্ত করার ও ইহুদিদেরকে তাদের নিজ নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার জোরালো দাবি জানাচ্ছে। #

পার্সটুডে/এমএএইচ/১৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন

 

ট্যাগ