হিজবুল্লাহর সঙ্গে প্রকৃত যুদ্ধে ইহুদিবাদী ইসরাইলিরা কেন অনুতপ্ত?
পার্সটুডে: যদিও লেবাননে ইহুদিবাদী ইসরাইলের শাসক গোষ্ঠীর ব্যাপক আক্রমণ শুরুর আগে প্রায় ৭০ ভাগ ইহুদিবাদী এই আগ্রসনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিল কিন্তু যুদ্ধের ময়দানে লেবাননের প্রতিরোধকামীরা যুদ্ধের সমীকরণ পাল্টা দেয়ার পর ইসরাইলিদের মধ্যে এ সংঘাত নিয়ে নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে।
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী ইসরাইলের যুদ্ধের প্রথম বছরে ইসরাইলের দখলকৃত অঞ্চলগুলোতে বেশিরভাগ জনমত চেয়েছিল যে এই সরকারের মন্ত্রিসভা লেবাননের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করুক এবং দুই মাস আগে ৬৭ ভাগ ইহুদিবাদী লেবাননের হিজবুল্লাহকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে যুদ্ধের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছিল। কিন্তু লেবাননের বিরুদ্ধে দখলদার শাসকগোষ্ঠীর ব্যাপক যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এবং দেশটির বিরুদ্ধে স্থল অভিযান শুরু হওয়ার পর তাদের মতের ব্যাপক পরিবর্তন আসে। মেহের নিউজ এজেন্সির উদ্ধৃতি দিয়ে পার্সটুডে জানিয়েছে, লেবাননে হামলার আগে ইহুদিবাদী সেনাবাহিনী ২ থেকে ৩ সপ্তাহের মধ্যে দেশটিতে স্থল হামলার জন্য সময় বেঁধে দিয়েছিল এবং বিশ্বাস করেছিল যে হিজবুল্লাহ অধিকৃত ফিলিস্তিনের উত্তরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বন্ধ করতে বাধ্য হবে।
এছাড়াও ইহুদিবাদী ইসরাইল ভেবেছিল যে লেবাননের বিরুদ্ধে একটি বড় ধরনের যুদ্ধ শুরু করে তারা হিজবুল্লাহর অব কাঠামো ধ্বংস করার পাশাপাশি এবং তারা একে নিরস্ত্র করতে সক্ষম হবে এবং হিজবুল্লাহকে তারা লিতানি নদীর দিকে পিছু হটাতে বাধ্য করতে পারবে। একইসঙ্গে হিজবুল্লাহর হামলার ভয়ে উত্তর ইসরাইল থেকে পালিয়ে যাওয়া ইহুদিরা শেষ পর্যন্ত তাদের নিজ এলাকায় ফিরতে সক্ষম হবে। যাইহোক, লেবাননের সীমান্তে ইসরাইলের স্থল হামলার দেড় মাস পরে দখলদার সরকার দেশটির একটি ছোট গ্রামও দখলে নিতে পারে নি। উপরন্তু হিজবুল্লাহর সঙ্গে সংঘর্ষে ইহুদিবাদী ইসরাইল মারত্মক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে এবং ক্রমাগতভাবে তারা হিজবুল্লাহর অতর্কিত হামলায় মুখে পড়ছে। একই সময়ে অধিকৃত ফিলিস্তিনের উত্তর অঞ্চল থেকে তেল আবিবের কেন্দ্র পর্যন্ত হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা অব্যাহত রয়েছে।
স্থল হামলা শুরু হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে লেবাননের দক্ষিণে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর ধারাবাহিক পরাজয়ের সঙ্গে সঙ্গে লেবাননের হিজবুল্লাহর সাথে যুদ্ধের জন্য ইহুদিবাদী বসতি স্থাপনকারীদের সমর্থন ৬৭ ভাগ থেকে কমে ৪৭ ভাগ এসে দাঁড়িয়েছে। মোট কথা প্রতিরোধকামীদের দৃঢ়চেতা মনোভাব এবং প্রতিরোধকামী সংগঠনগুলোর প্রতি লেবাননের জোর রাজনৈতিক সমর্থন হানাদার ইসরাইলের হিসেব নিকেশ এলোমেলো করে দিয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে যেখানে তেল আবিবের বাসিন্দারাও হিজবুল্লাহ হামলার ভয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল সেখানে উত্তর অধিকৃত ফিলিস্তিনের কিরিয়াত আতা বসতিতে বসতি স্থাপনকারীদের একজন ইহুদিবাদী ইসরাইলের যুদ্ধমন্ত্রীকে উপহাস করে বলেছিলেন: এটা কি সেই বিজয় যেটি ইসরাইল হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে জয়লাভ করেছে? হিজবুল্লাহ কিভাবে পরাজিত হলো যে কিনা আধা ঘন্টার মধ্যে ৯০টি রকেট নিক্ষেপ করতে পারে? তাই আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করছি বিজয় নিয়ে কাল্পনিক গল্প শুনিয়ে আমাদের বুদ্ধিমত্তাকে যেন অপমান না করে।
যাইহোক হাইফার মেয়র ইয়োনা ইয়াহাভ শহরের উপর হিজবুল্লাহর ব্যাপক হামলার পর বলেছেন, হিজবুল্লাহ হুমকি দিয়েছে যে তারা হাইফাকে কিরিয়াত শেমুনার মতো করে দেবে এবং এর সমস্ত বাসিন্দাদের পালিয়ে যেতে হবে বলে হুমকি দিয়েছে। বর্তমানে হাইফার অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ভেঙে পড়ছে এবং সব ক্ষেত্রেই হিজবুল্লাহ হামলার নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
জায়নবাদী সংবাদপত্র "ইয়েদিওট আহারোনট" একটি প্রতিবেদনে ঘোষণা করেছে যে পূর্ব গ্যালিলি এবং গোলানের ৮০ ভাগেরও এরও বেশি ছোট ব্যবসার মালিকরা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তাদের আয় মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে এবং তাদের মধ্যে ৬৫ ভাগের বেশি লোকের আয় অর্ধেক হয়ে যাওয়ার কারণে তারা ভুগছে।
যুদ্ধের পরিণতিতে উত্তর ফ্রন্টের শিল্প, কৃষি, বাণিজ্য এবং পর্যটন খাতও প্রায় পঙ্গু হয়ে গেছে এবং ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত ইহুদিবাদী মন্ত্রিসভা ইসরাইলের উত্তর অংশের ক্ষতিগ্রস্ত কোম্পানিগুলোকে ক্ষতিপূরণ হিসাবে এক বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ প্রদান করেছে। অবশ্যই, এই অর্থ হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলার কারণে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা কোম্পানি অন্তর্ভুক্ত নয়।
হিজবুল্লাহর নেতা ও কমান্ডারদের হত্যা এবং দক্ষিণ লেবাননে দখলদার ইসরাইলি সেনাবাহিনীর স্থল অভিযানের ব্যর্থতার পরে ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর কৃতিত্ব ম্লান হওয়ার সাথে সাথে ইহুদিবাদী বসতি স্থাপনকারীরা যখন তাদের সেনাবাহিনী থেকে নতুন নতুন মৃতদেহ গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছে তখন তারা ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর প্রতি প্রতিদিনই যুদ্ধ অবসানের দাবি করছে।#
পার্সটুডে/এমবিএ//১৯
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।