আরব বিশ্ব কি ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি এবং ওয়াদি আরাবা থেকে মুক্তি পাবে?
-
ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্য বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ
ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক মিশরে স্থানান্তরে বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনা কায়রো এবং অন্যান্য দেশে কঠোর বিরোধিতার মুখে পড়েছে।
গাজা উপত্যকার চলমান সমস্যা সমাধানের জন্য এক বিতর্কিত বক্তব্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইহুদিবাদী ইসরাইলের স্বার্থে এ অঞ্চল থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে প্রতিবেশী আরব দেশগুলোতে পুনর্বাসনের আহ্বান জানিয়েছেন।
পার্সটুডেন মতে, গাজা উপত্যকার জনগণকে জোরপূর্বক জর্ডান ও মিশরে স্থানান্তরিত করার ট্রাম্পের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সমালোচকরা ট্রাম্পের এ পদক্ষেপকে মানবাধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন এবং জাতিগত নির্মূলের প্রচেষ্টা বলে অভিহিত করেছেন।
আরব বিশ্বের বিশ্লেষক আবদেল বারী আতওয়ান গাজার অধিবাসীদের মিশর ও জর্ডানে স্থানান্তরের পরিকল্পনার বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জেদের কথা উল্লেখ করে এর পরিণতি বিশ্লেষণ করেছেন।
আতওয়ান বলেন, ট্রাম্প "গাজা পরিষ্কার করা" শব্দটি ব্যবহার করেছেন এবং ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পরিকল্পনা এবং তার যুদ্ধনীতি লক্ষ্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে অধিবাসীদের আবার বাস্তুচ্যুত করার চেষ্টা করছেন। যদি এ বিষয়ে ফিলিস্তিনি জনগণ এবং মিশরীয় সেনাবাহিনীর বিরোধিতা না থাকত তাহলে গাজার অধিবাসীরা হয়ত এখন সিনাইতে বসবাস করত।
এই আরব বিশ্লেষক সামরিক বাহিনীর সমর্থিত মিশরের কূটনৈতিক স্থিতিশীলতাকে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে প্রধান বাধা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। মিশরীয় জাতি, দেশটির সামরিক প্রতিষ্ঠান এবং রাজনৈতিক নেতাদের ঐক্যবদ্ধ করার একমাত্র কারণ হিসেবে তিনি ফিলিস্তিনের সমস্যার সমাধান এবং ফিলিস্তিনের প্রতি তাদের জোরালো সমর্থন ও গাজার অধিবাসীদের বাস্তুচ্যুতি করার তাদের বিরোধিতাকে বিবেচনা করেছেন।
আতওয়ান আরও বলেন, "ট্রাম্পের হাতে এখন একটি শক্তিশালী অস্ত্র হল মিশর ও জর্ডানকে শাস্তি দেওয়ার জন্য আর্থিক সহায়তা বন্ধ করে দেয়ার হুমকি কিন্তু এর ফলে পশ্চিম এশীয় অঞ্চলে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে এবং আমেরিকান স্বার্থ এবং সামরিক ঘাঁটিগুলো আগের চেয়ে আরো বেশি লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে এবং এতে শান্তি চুক্তি বাতিল হলে তা হবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি বড় আঘাত।
বিশ্লেষক ট্রাম্পের ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি এবং ইহুদি সম্প্রসারণবাদের প্রতি তার সমর্থনের দিকেও ইঙ্গিত করে বলেছেন যে শতাব্দীর চুক্তির লক্ষ্য হল ইহুদিবাদী শাসনকে শক্তিশালী করা এবং পশ্চিম তীরসহ সিরিয়া, লেবানন, ইরাক ও জর্ডানের কিছু ভূমি দখল করে পূর্ব জেরুজালেমের সঙ্গে সংযুক্ত করে বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্য তৈরি করা।
আতওয়ান বলেন: 'পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলে ট্রাম্পের ভূমি বিষয়ক দালাল,আইনজীবী এবং দূত হিসেবে স্টিভ উইটকফকে পাঠানো কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়।' তার প্রথম লক্ষ্য হল গাজায় অনুপ্রবেশ করা এবং বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যের গঠনে ইহুদিবাদী প্রকল্প বাস্তবায়নের পথ প্রশস্ত করার জন্য গাজা খালি করা।
আরব বিশ্বের এই বিশ্লেষক আরও বলেন: 'মিশর ও জর্ডানের বিরোধিতার মুখে গাজা এবং সম্ভবত দক্ষিণ লেবাননে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে যাওয়ার এবং ট্রাম্প প্রশাসনের পূর্ণ সমর্থনে যুদ্ধ পুনরায় শুরু হওয়ার সম্ভাবনা এখন আরো প্রবল হচ্ছে এবং এটি নতুন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও'র বক্তব্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।" এটা বোঝা উচিত যে ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজায় যুদ্ধবিরতি অব্যাহত রাখার বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন।
আতওয়ান আরও বলেন, গাজায় গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রায় ৫০০ দিন ধরে দাঁড়িয়ে থাকা এবং তার শীর্ষ কমান্ডারদের হারানো প্রতিরোধকামী শক্তি কখনোই আত্মসমর্পণ করবে না। যদি ট্রাম্পের গাজা খালি করার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে মিশর এবং জর্ডানের বিরোধিতা অব্যাহত থাকে তাহলে এটি ক্যাম্প ডেভিড এবং ওয়াদি আরাবা চুক্তি ভেঙে যাবে যার ফলে এই দুটি দেশ এবং তাদের জনগণ লজ্জাজনক পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাবে। যদি এমনটা ঘটে তাহলে এটি হবে আল-আকসা তুফান অভিযানের প্রথম ফলাফল। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে সমগ্র পশ্চিম এশীয় অঞ্চল ইহুদিবাদ এবং তার পশ্চিমা সমর্থকদের বিরুদ্ধে আরো শক্তি প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।#
পার্সটুডে/এমবিএ/৩
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।