"তোমার সন্তানরা কালো কফিনে ফিরে আসবে"; ইসরাইলি বন্দীদের পরিবারকে হামাস
-
• \"তোমার সন্তানরা কালো কফিনে ফিরে আসবে\"; ইসরাইলি বন্দীদের পরিবারকে হামাস
পার্সটুডে- ইহুদিবাদীদের ক্ষোভ উপেক্ষা করে, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী হামাসের আহতে আটক ইহুদি বন্দীদের ফিরিয়ে আনার অজুহাতে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ এবং গণহত্যা অব্যাহত রাখার উপর জোর দিয়েছে।
তেল আবিবের হিসাব অনুযায়ী গাজা উপত্যকায় ৫৯ জন ইসরাইলি বন্দী রয়েছে, যাদের মধ্যে ২৪ জন এখনও জীবিত। মানবাধিকার প্রতিবেদন এবং ফিলিস্তিনি ও ইসরাইলি গণমাধ্যমের তথ্য অনুসারে, ৯,৫০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি ইসরাইলের কারাগারে বন্দী, নির্যাতন, অনাহার এবং চিকিৎসা অবহেলার শিকার যাদের অনেকেই এরইমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন। ইরনার বরাত দিয়ে পার্সটুডে জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জোর দিয়ে বলেছে যে তারা গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ ও গণহত্যা চালিয়ে যাবে। নেতানিয়াহু দাবি করেছে যে তিনি গাজা থেকে ইসরাইলি বন্দীদের ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছেন। তিনি আরো বলেন, সরকার ইসরাইলি বন্দীদের মুক্ত করতে এবং যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
ইসরাইলি বন্দীদের পরিবারকে সতর্ক করেছে হামাস
এদিকে, বুধবার ইরানি সম্প্রচার সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলনের (হামাস)এর সামরিক শাখা কাসাম ব্রিগেড গাজা উপত্যকায় তাদের কাছে আটক ইহুদি বন্দীদের পরিবারকে উদ্দেশ্য করে এক ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেছে, যেখানে তাদের সতর্ক করা হয়েছে যে ইসরাইলের যুদ্ধবিমানগুলো এই বন্দীদের আটকে রাখার স্থানগুলোতে বোমা হামলার চেষ্টা করছে। কাসসাম ব্রিগেড ঘোষণা করেছে: "প্রস্তুত থেকো, যখন তোমাদের সেনাবাহিনীর ছোঁড়া ক্ষেপণাস্ত্র তোমাদের সন্তানদের দেহ ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলবে শীঘ্রই তারা কালো কফিনে ফিরে আসবে।" তোমার সরকার বন্দীদের মৃত্যু দেখতে চায় এবং তোমাকে তাদের কবরস্থান প্রস্তুত করতে হবে।
হামাসের ডাক: "গাজা কাঁদছে"
মঙ্গলবার, হামাস এক বিবৃতি জারি করে বিশ্বের সকল মুক্তিকামী মানুষকে "গাজা তোমার জন্য চিৎকার করছে" শীর্ষক আন্তর্জাতিক সপ্তাহের কার্যক্রমে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। হামাস আগামী শুক্রবার, শনিবার এবং রবিবার (১৮-২০ এপ্রিল) ইসরাইলের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী ক্ষোভ প্রকাশ এবং ইসরাইলের প্রতি আমেরিকার সমর্থন ও ইসরাইলের সাথে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার নিন্দা জানানোর আহ্বান জানিয়েছে।
প্রতিরোধ যোদ্ধাদেরকে নিরস্ত্রীকরণের বিরোধিতা করেছে ফিলিস্তিনিরা
অন্যদিকে, গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার অন্যতম শর্ত হিসেবে প্রতিরোধযোদ্ধাদেরকে অস্ত্র সমর্পনের জন্য বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে প্যালেস্টাইন ন্যাশনাল অ্যান্ড ইসলামিক ফোর্সেস। ইরনা জানিয়েছে, প্যালেস্টাইন ন্যাশনাল অ্যান্ড ইসলামিক ফোর্সেস এক বিবৃতি জারি করে আরও বলেছে: "এই কমিটি শর্তসাপেক্ষে নতুন প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতির খবর পেয়েছে যেখানে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের নিরস্ত্রীকরণ এবং ইসরাইলি বন্দীদের ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে একটি ধারা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, অথচ সেখানে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও যুদ্ধ অবসান এবং গাজা উপত্যকা থেকে ইহুদি সেনাবাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের কোনও গ্যারান্টি নেই।" এই প্রসঙ্গে, প্যালেস্টাইন ন্যাশনাল অ্যান্ড ইসলামিক ফোর্সেস বলেছে: "এমন পরিস্থিতিতে যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হত্যাকারী ও দখলদার ইসরায়েলি শাসনব্যবস্থার কাছে মারাত্মক অস্ত্র এবং ভারী বোমার বিশাল চালান সরবরাহের ঘোষণা দিচ্ছে, যা আমাদের অসহায় জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে, তাই আমরা এই ধরনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করি।"
গাজায় ইসরাইলি বিমান হামলা অব্যাহত
এদিকে, গাজা উপত্যকার আবাসিক এলাকা এবং শরণার্থী শিবিরগুলোতে ইসরাইলি বিমান ও কামান হামলা গত রাত এবং বুধবার ভোরের দিকেও অব্যাহত ছিল। পূর্ব গাজা শহরের আল-তুফাহ পাড়ায় একটি বাড়িতে ইসরাইলি যুদ্ধবিমানের হামলায় ছয় ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজা শহরের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত ইয়ারমুক স্টেডিয়ামে বাস্তুচ্যুতদের একটি তাঁবুতে বোমা হামলায় তিনজন শহীদ এবং অনেকে আহত হয়েছেন। খান ইউনুসের নাসর হাসপাতাল কম্পাউন্ডের একটি আবাসিক ভবনে ইসরাইলি বিমান হামলায় এক ফিলিস্তিনি মেয়ে শহীদ এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। গাজা উপত্যকার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত নুসিরাত ক্যাম্পের উত্তরে ইসরাইলি বিমান হামলা চালানো হয়। স্থানীয় সূত্রগুলো দক্ষিণ গাজা উপত্যকার খান ইউনুসের পূর্ব ও দক্ষিণে দখলদার সেনাবাহিনীর কামান হামলার খবরও দিয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ঘোষণা করেছে যে আজ গাজায় ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ২৩ জন বেসামরিক নাগরিক শহীদ হয়েছেন বলে নিশ্চিত করা হয়েছে, তবে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
গাজা উপত্যকায় ১,৪০০ জনেরও বেশি চিকিৎসা কর্মী শহীদ হয়েছেন
মঙ্গলবার গাজা উপত্যকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে যে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরাইলি গণহত্যার সময় ১,৪০০ জনেরও বেশি চিকিৎসা কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন এবং প্রায় ৩৬০ জন স্বাস্থ্য খাতের কর্মী এখনও আটক রয়েছেন।#
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১৬
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।