কাম্পালায় পৌঁছেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ন্যাম সম্মেলনে ইরানের দৃষ্টিভঙ্গি: ফিলিস্তিনের পক্ষে ঐক্য ও বহুপাক্ষিকতা জোরদার
-
কাম্পালায় পৌঁছেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পার্সটুডে: ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি জোট নিরক্ষেপ আন্দোলনের (ন্যাম) পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে অংশ নিতে উগান্ডার রাজধানী কাম্পালায় পৌঁছেছেন।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাকায়ি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স–এ এক বার্তায় আরাকচির সফর সম্পর্কে লিখেছেন, “ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের ১৯তম অন্তর্বর্তী পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনে অংশ নিতে উগান্ডার রাজধানী কাম্পালায় পৌঁছেছেন।”
এই ১৯তম অন্তর্বর্তী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠকটি আগামী ১৫ ও ১৬ অক্টোবর উগান্ডার রাজধানী কাম্পালায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সম্মেলনটির সভাপতিত্ব করছেন উগান্ডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং এতে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন।
আরাকচি এই সম্মেলনের সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি বিষয়ে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের অবস্থান ব্যাখ্যা করবেন। পাশাপাশি, তিনি অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গেও বৈঠক ও মতবিনিময় করবেন।
এই বৈঠকে মূল আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে— আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক পরিবর্তনসমূহ পর্যালোচনা, জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের মূলনীতি অনুসারে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বহুপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদার করা এবং বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলো—যেমন জলবায়ু পরিবর্তন, মানবিক সঙ্কট, আন্তর্জাতিক কাঠামো সংস্কার এবং গাজা পরিস্থিতি সম্পর্কে দেশগুলোর অবস্থান তুলে ধরা।
জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন (ন্যাম) একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন, যাতে ১২০টিরও বেশি দেশ সদস্য। এটি শীতল যুদ্ধের সময় গঠিত হয়। ইরান এই আন্দোলনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী সদস্য, যা একতরফা নীতির বিরোধিতা ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর স্বাধীনতা রক্ষায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে।
২০১২ সালে ইরান জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের ১৬তম শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজক ছিল এবং পরবর্তী তিন বছর এই আন্দোলনের সভাপতিত্ব করেছে। ইরান সবসময় জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের মৌলিক নীতিসমূহ—বড় শক্তিগুলোর ওপর নির্ভর না করা, জাতীয় সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা এবং একতরফা নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা—সমর্থন করেছে।
ইরান পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়েছে এবং এই বিষয়ে সদস্য দেশগুলোর সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেছে। ইরান সভাপতি থাকাকালে জাতিসংঘ সনদ সংস্কার, সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রস্তাবও উত্থাপন করা হয়েছিল।
ন্যামের মাধ্যমে ইরান আফ্রিকা, এশিয়া ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করতে সক্ষম হয়েছে। এই সংগঠনের অধীনে আয়োজিত বৈঠক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলো ইরানের দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্বব্যাপী উপস্থাপনের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে।
উগান্ডায় অনুষ্ঠিত এই ১৯তম পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠক স্বাধীন দেশগুলোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ তৈরি করেছে—ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি সংহতি প্রকাশ ও বৈশ্বিক একতরফা আধিপত্যের মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য। গাজায় চলমান মানবিক বিপর্যয়ের প্রেক্ষিতে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের বহু দেশ ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। সম্মেলনে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের ফিলিস্তিন কমিটি একটি বিশেষ অধিবেশন করবে, যেখানে ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি পুনর্নিশ্চিত করা হবে।
বিশ্ব যখন গাজার যুদ্ধ, বড় শক্তিগুলোর একতরফা নীতি, জলবায়ু পরিবর্তন ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের মতো জটিল সংকটে রয়েছে, সেই প্রেক্ষাপটে কাম্পালা সম্মেলন বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে। এটি স্বাধীন দেশগুলোর জন্য এমন একটি সুযোগ, যেখানে তারা বড় শক্তিগুলোর প্রভাবের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার পক্ষে একক কণ্ঠে কথা বলতে পারে।
এই সম্মেলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান তার নিজস্ব অবস্থান ব্যাখ্যা করবে এবং জাতীয় ও আঞ্চলিক স্বার্থের ভিত্তিতে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করার সুযোগ পাবে। এই বৈঠক কেবল একটি কূটনৈতিক আয়োজন নয়—এটি স্বাধীন দেশগুলোর ন্যায়ভিত্তিক, মানবিক ও ভারসাম্যপূর্ণ বিশ্ব নির্মাণের সম্মিলিত প্রয়াসের প্রতীকও বটে। মানবিক ও নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে, এটি আজকের বিশ্বে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের ভূমিকা নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করার এক গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ।
ইরানের পররাষ্ট্রনীতির মৌলিক লক্ষ্য—একতরফা নীতির বিরোধিতা ও স্বাধীন দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা জোরদার, কাম্পালা সম্মেলন জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের সদস্য দেশগুলোর জন্য ভবিষ্যৎ সহযোগিতা ও মতবিনিময়ের একটি সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে দেখা দিচ্ছে।#
পার্সটুডে/এমএআর/১৫