যুক্তরাষ্ট্রের ৪৩ দিনের সরকারি কর্মবিরতি জনগণের ওপর কী প্রভাব ফেলল?
https://parstoday.ir/bn/news/world-i154012-যুক্তরাষ্ট্রের_৪৩_দিনের_সরকারি_কর্মবিরতি_জনগণের_ওপর_কী_প্রভাব_ফেলল
পার্সটুডে: ২০২৫ সালের ১৩ নভেম্বর, ৪৩ দিনের অভূতপূর্ব সরকারি কর্মবিরতির পর যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকার আবার কাজ শুরু করেছে। এই শাটডাউনটি পূর্বের রেকর্ড ভঙ্গ করে এবং ওয়াশিংটনে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের তীব্রতার ইঙ্গিত দেয়।
(last modified 2025-11-28T10:09:50+00:00 )
নভেম্বর ১৩, ২০২৫ ২০:৩২ Asia/Dhaka
  • মার্কিন সিনেট
    মার্কিন সিনেট

পার্সটুডে: ২০২৫ সালের ১৩ নভেম্বর, ৪৩ দিনের অভূতপূর্ব সরকারি কর্মবিরতির পর যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকার আবার কাজ শুরু করেছে। এই শাটডাউনটি পূর্বের রেকর্ড ভঙ্গ করে এবং ওয়াশিংটনে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের তীব্রতার ইঙ্গিত দেয়।

২০২৫ সালের ১৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্র ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘ সরকারি শাটডাউনের (সরকারি কার্যক্রম বন্ধ) সমাপ্তি দেখেছে। ১ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত ৪৩ দিন ধরে চলা এই সংকট ২০১৯ সালের ৩৫ দিনের রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে যায় এবং ওয়াশিংটনের গভীর রাজনৈতিক বিভেদের নতুন প্রতীক হয়ে ওঠে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বাক্ষরে পাস হওয়া একটি অস্থায়ী বাজেট বিলের মাধ্যমে সরকার ২০২৬ সালের ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত পুনরায় চালু রাখা সম্ভব হয়েছে। এই বিল সিনেটে আলোচনা শেষে গৃহীত হয়েছিল, তবে এটি “অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট” (ACA বা ওবামাকেয়ার)-এর অধীনে সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যবিমার ভর্তুকি নবায়ন করতে ব্যর্থ হয়। প্রধান বিতর্কটি ছিল ২০২৬ অর্থবছরের ফেডারেল বাজেটকে ঘিরে, যা ১ অক্টোবর থেকে শুরু হয়। ট্রাম্প এবং কংগ্রেসের উভয় কক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা রিপাবলিকানরা ব্যয় কমানোর উপর জোর দেন। তারা 'অপ্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ বাতিল' এর জন্য একটি বিল প্রস্তাব করে, যার মধ্যে রয়েছে ৯ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক সাহায্য ও পাবলিক ব্রডকাস্টিং মিডিয়ার অর্থায়ন বাতিল এবং কংগ্রেস কর্তৃক অনুমোদিত বাজেট ব্যয় করতে বাধা দিতে সরঞ্জাম ব্যবহার করা।

ট্রাম্প এই পদক্ষেপগুলোকে সরকারের আকার ছোট করার প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে দেখেন, অন্যদিকে ডেমোক্র্যাটরা এই পদ্ধতিকে "জনসেবার ওপর আক্রমণ" বলে অভিহিত করেন এবং ACA ভর্তুকি নবায়নের দাবি করেন। ২০২১ এবং ২০২২ সালে বাড়ানো এই ভর্তুকিগুলো নভেম্বর ২০২৫-এ মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল এবং সেগুলো নবায়ন না করা লাখ লাখ মার্কিন নাগরিকের জন্য বিমা প্রিমিয়াম ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়ে যেত। ডেমোক্র্যাটরা সিনেটে রিপাবলিকান বিলটি ১৪ বার বাতিল করেন এবং স্বাস্থ্যখাতে ১ ট্রিলিয়ন ডলার বর্ধিত করার প্রস্তাব দেন, যা রিপাবলিকানদের সমর্থন পায়নি।

এই শাটডাউন বা সরকারি অচলাবস্থা ফেডারেল বেসামরিক বাজেটের ৪০ শতাংশেরও বেশি অংশ বন্ধ করে দেয় এবং বিভিন্ন খাতে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। যেমন- দরিদ্রদের খাদ্য সহায়তা বন্ধ হয়, বিমান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে, ফেডারেল কর্মচারীদের বেতন বন্ধ থাকে এবং কংগ্রেস বাজেট অফিসের হিসাব অনুযায়ী, মার্কিন অর্থনীতিতে প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়।

সংকটের বিজয়ী ও পরাজিত

এই সংকটের প্রধান বিজয়ী ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ কংগ্রেস। ট্রাম্প তার 'ছোট সরকার' কথাটির প্রচারে এই সংকটের ব্যবহার করেন এবং সরকারি বন্ধকে ডেমোক্র্যাটদের আক্রমণের হাতিয়ারে পরিণত করেন। রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ কংগ্রেসও সিনেটে 'ফিলিবাস্টার' বাতিলের জন্য ট্রাম্পের দাবি মেনে না নিয়েই এই সংকট কাটিয়ে উঠেন।

কিন্তু এই সরকারি বন্ধের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আমেরিকার জনগণ এবং কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট সংখ্যালঘুরা। প্রায় ৯ লাখ ফেডারেল কর্মী বেতন ছাড়া ছিলেন এবং তাদের অনেকেই জরুরি ঋণ নিতে বাধ্য হন। নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো খাদ্য সহায়তা (SNAP) পেতে বিলম্বের সম্মুখীন হয়, শিক্ষাব্যবস্থা বিঘ্নিত হয় এবং পর্যটন ও পরিবহন শিল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের উপর জনসাধারণের আস্থাও ১৫ শতাংশ কমে যায় এবং বৈষম্য তীব্রতর হয়।

এদিকে, ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পকে পরাজিত করতে ব্যর্থ হন। রক্ষণশীলদের মধ্যে সরকারি বন্ধ ;সংকটের জন্য দায়ী; হিসেবে চিহ্নিত হয়। যদিও জরিপে দেখা যায় যে, ৪৫ শতাংশ মানুষ ট্রাম্পকে প্রধান দায়ী বলে মনে করেন।

যদিও বাজেট মাত্র দুই মাসের জন্য পাস হয়েছে, তবে পক্ষগুলোর মধ্যে মতবিরোধ অব্যাহত থাকলে, ২০২৬ সালের ২০  জানুয়ারি সরকার আবারও অচলাবস্থার সম্মুখীন হতে পারে।#

পার্সটুডে/এমএআর/১৩