গাজায় ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর গণহত্যার মর্মান্তিক পরিসংখ্যান
https://parstoday.ir/bn/news/west_asia-i153472-গাজায়_ইহুদিবাদী_শাসকগোষ্ঠীর_গণহত্যার_মর্মান্তিক_পরিসংখ্যান
পার্সটুডে-গাজা যুদ্ধের নতুন পরিসংখ্যান প্রকাশিত হয়েছে। এই পরিসংখ্যানে ইহুদিবাদী সরকারের গণহত্যার ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। এতে অভূতপূর্বভাবে ইহু*দিবাদী অপরাধের শিকার হয়েছেন ৬৪,০০০ এরও বেশি ফিলিস্তিনি শহীদ এবং ১,৬৪,০০০ আহত, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
(last modified 2025-10-28T12:48:42+00:00 )
অক্টোবর ২৮, ২০২৫ ১৬:৫৩ Asia/Dhaka
  • গাজায় ইহুদিবাদী ইসরাইলি আক্রমণের পর ধ্বংসস্তূপের উপর একা বসে থাকা একটি ফিলিস্তিনি শিশু
    গাজায় ইহুদিবাদী ইসরাইলি আক্রমণের পর ধ্বংসস্তূপের উপর একা বসে থাকা একটি ফিলিস্তিনি শিশু

পার্সটুডে-গাজা যুদ্ধের নতুন পরিসংখ্যান প্রকাশিত হয়েছে। এই পরিসংখ্যানে ইহুদিবাদী সরকারের গণহত্যার ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। এতে অভূতপূর্বভাবে ইহু*দিবাদী অপরাধের শিকার হয়েছেন ৬৪,০০০ এরও বেশি ফিলিস্তিনি শহীদ এবং ১,৬৪,০০০ আহত, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

পার্সটুডে লিখেছে, গত দুই বছরে গাজা উপত্যকা আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী এবং নৃশংস সামরিক হামলা প্রত্যক্ষ করেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠী আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রকাশিত পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট হয়েছে সেখানে যে মানবিক বিপর্যয় হয়েছে তার মাত্রাটা কল্পনারও বাইরে।

নথিভুক্ত প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ৬৮,০০০ এরও বেশি মানুষ শহীদ এবং ১,৬৪,২৬০ জন আহত হয়েছে। ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত থাকায় এই সংখ্যা প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এই গণহত্যার শিকারদের উল্লেখযোগ্য অংশ নারী ও শিশু। প্রতিবেদন অনুসারে, ১৪,৮০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি শিশু প্রাণ হারিয়েছে এবং আরও শত শত শিশু ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে মারা গেছে। এই পরিসংখ্যানগুলো কেবল ইহুদিবাদী আক্রমণের তীব্রতাই নির্দেশ করে না বরং বেসামরিক নাগরিক, হাসপাতাল, স্কুল এবং সাহায্য কেন্দ্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলোকে সরাসরি লক্ষ্যবস্তু করার প্রমাণ দেয়।

মানুষের হতাহতের পাশাপাশি গাজার গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে। আবাসিক এলাকা, হাসপাতাল এবং সাহায্য কেন্দ্রগুলোতে ৩,০৫২ টিরও বেশি সরাসরি আক্রমণ রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়াও, হাসপাতালে ছয়টি গণকবর আবিষ্কৃত হয়েছে যা দখলদার বাহিনীর দ্বারা ফিলিস্তিনিদের সাথে অমানবিক আচরণের ইঙ্গিত বহন করে।

ইসরাইল সাহায্য কর্মী এবং সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে দ্বিধা করেনি। সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে দখলদারদের হামলায় ৪৯১ জনেরও বেশি চিকিৎসা কর্মী, ১৪১ জন সাংবাদিক এবং ৬৭ জন বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য শহীদ হয়েছে। বিষয়টি কেবল আন্তর্জাতিক আইন এবং মানবাধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘনই নয় বরং সত্যের কণ্ঠস্বরকে নীরব করার চেষ্টা। বাস্তবতার প্রচার রোধ করার জন্য ইহুদিবাদী শাষকগোষ্ঠীর একটি পরিকল্পিত চেষ্টা।

এই পরিসংখ্যান ছাড়াও, ৭,০০০ এরও বেশি মানুষ এখনও নিখোঁজ এবং তাদের অনেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি, খাদ্য, ওষুধ এবং পানীয় জলের তীব্র ঘাটতি এবং গাজার সম্পূর্ণ অবরোধ এই উপত্যকার পরিস্থিতিকে পূর্ণাঙ্গ বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে।

এদিকে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই গণহত্যার মুখে এক গভীর নীরবতা বজায় রেখেছে এবং আক্রমণ বন্ধ করার ও মানবিক পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য বারবার আহ্বান জানানো সত্ত্বেও প্রতিক্রিয়াগুলি মূলত কূটনৈতিক বিবৃতিতে সীমাবদ্ধ রয়েছে। এই নীরবতা কেবল যুদ্ধাপরাধীদের সাথে জড়িত নয় বরং প্রতিদিন শত শত নিরীহ মানুষের জীবন কেড়ে নেওয়া একটি বিপর্যয়ের ধারাবাহিকতার পথও প্রশস্ত করে।

পরিশেষে বলা যায় যে, গাজা যুদ্ধের মর্মান্তিক পরিসংখ্যান এমন একটি অপরাধের জীবন্ত প্রমাণ যা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ থাকতে হবে। গাজায় ইহুদিবাদী সরকারের গণহত্যা কেবল একটি আঞ্চলিক সংকট নয় বরং বিশ্বব্যাপী বিবেকেরও একটি পরীক্ষা; এমন একটি পরীক্ষা যা এখনও পর্যন্ত নৈতিক ও মানবিক ব্যর্থতার সাথে জড়িত।#

পার্সটুডে/জিএআর/২৮