গাজাকে পুনর্গঠনে প্রয়োজন ৭০ বিলিয়ন ডলার ও কয়েক দশক: জাতিসংঘ
https://parstoday.ir/bn/news/west_asia-i154464-গাজাকে_পুনর্গঠনে_প্রয়োজন_৭০_বিলিয়ন_ডলার_ও_কয়েক_দশক_জাতিসংঘ
পার্সটুডে: জাতিসংঘের নতুন প্রতিবেদন গাজা যুদ্ধের ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় সম্পর্কে নতুন তথ্য তুলে ধরেছে।
(last modified 2025-11-27T18:34:40+00:00 )
নভেম্বর ২৭, ২০২৫ ১৫:০৬ Asia/Dhaka
  • যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকা
    যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকা

পার্সটুডে: জাতিসংঘের নতুন প্রতিবেদন গাজা যুদ্ধের ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় সম্পর্কে নতুন তথ্য তুলে ধরেছে।

জাতিসংঘ ঘোষণা করেছে, ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠী গাজায় যে যুদ্ধ চালিয়েছে, তা একটি ভয়াবহ বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। এই ভূখণ্ডটি পুনর্গঠনে কমপক্ষে ৭০ বিলিয়ন ডলার এবং কয়েক দশক সময় লাগবেএই পরিসংখ্যানটি নিঃসন্দেহে বিপর্যয়ের গভীরতা স্পষ্ট করে।

জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা (UNCTAD) তাদের নতুন প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর অভিযান মানবিক বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় সব উপাদানকে মারাত্মকভাবে দুর্বল করেছে এবং গাজায় অবশিষ্ট থাকা ২৩ লাখেরও বেশি মানুষ বহুমাত্রিক তীব্র দারিদ্র্যের মুখোমুখি হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে গাজার অর্থনীতি ৮৭ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে এবং মাথাপিছু আয় নেমে এসেছে মাত্র ১৬১ ডলারে, যা বিশ্বের সর্বনিম্ন হারগুলোর একটি।

জাতিসংঘ সতর্ক করে বলছে, বড় আন্তর্জাতিক সহায়তা সত্ত্বেও গাজায় মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) যুদ্ধের পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরতে দশকের পর দশক সময় লেগে যেতে পারে।

এদিকে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, গাজার অধিকাংশ পরিবার মৌলিক খাদ্যপণ্য কিনতে অক্ষম। সাম্প্রতিক সপ্তাহে দাম কিছুটা কমলেও মানুষের দৈনিক খাদ্যগ্রহণ যুদ্ধ-পূর্ব সময়ের তুলনায় এখনো অত্যন্ত কম।

মার্কিন মধ্যস্থতায় দুই বছরের গণহত্যার পর ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে অক্টোবর মাসে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। যুদ্ধবিরতি নাজুক হলেও এখনো বহাল রয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির পর থেকে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৩৪২ জন ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন।

এই নতুন জাতিসংঘ প্রতিবেদন গাজা যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপ ও মানবিক বিপর্যয়ের এক হৃদয়বিদারক চিত্র তুলে ধরে। প্রতিবেদনে গাজাকে "মানুষের তৈরি গভীর খাদ" হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে—অর্থাৎ এই পরিস্থিতি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফল নয়, বরং ইসরায়েলের সামরিক ও রাজনৈতিক পদক্ষেপের সরাসরি পরিণতি।

এই বিপর্যয়ের কারণগুলোকে কয়েকটি মূল পয়েন্টে ব্যাখ্যা করা যায়—

১) ইসরায়েলি সামরিক ধ্বংসযজ্ঞ:

বিমান হামলা ও স্থল আক্রমণে হাসপাতাল, স্কুল, পানি ও বিদ্যুৎ নেটওয়ার্ক, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বেসামরিক অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। ফলে জীবনধারণের প্রতিটি স্তম্ভ ভেঙে পড়েছে।

২) দীর্ঘমেয়াদি অবরোধ:

দীর্ঘদিনের অবরোধ ও পণ্য ও মানুষের চলাচলে কঠোর নিষেধাজ্ঞা গাজার অর্থনীতিকে সম্পূর্ণভাবে পঙ্গু করেছে। পুনর্গঠন তো দূরের কথা—মানুষ মৌলিক চাহিদা পূরণ করতেও লড়াই করছে।

৩) দখলনীতি ও বসতি সম্প্রসারণ:

পশ্চিম তীরে দখলদারিত্ব ও বসতি সম্প্রসারণ ফিলিস্তিনের উন্নয়ন ও স্বনির্ভরতার আশা কেড়ে নিয়েছে।

ভয়াবহ মানবিক ও সামাজিক প্রভাব

অর্থনীতি ধসে পড়েছে, বেকারত্ব ভয়াবহ মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে, ব্যবসা-বাণিজ্য ধ্বংস হয়েছে এবং জনগণ সম্পূর্ণরূপে মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ২৩ লাখ মানুষের ওপর নেমে এসেছে বহুমাত্রিক দারিদ্র্য। তাদের কাছে আয় নেই, শিক্ষা নেই, চিকিৎসা নেই, নিরাপদ পানি-বিদ্যুৎ নেই এবং নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তাও নেই।

যুবসমাজ, যাদের উন্নয়নের চালিকাশক্তি হওয়া উচিত, তারা এখন ব্যাপক বেকারত্ব এবং একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি। পরিবারগুলো ভেঙে গেছে, লক্ষাধিক মানুষ ঘর হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়েছে। টানা যুদ্ধ ও ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যকে বিধ্বস্ত করেছে।

আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পরিণতি

গাজার অর্থনৈতিক ধস ও পশ্চিম তীরে দমন-পীড়ন পুরো পশ্চিম এশিয়ায় নতুন রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। শুধু ফিলিস্তিন নয়, পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তা হুমকির মুখে। গাজা পুনর্গঠনে প্রয়োজন বিপুল আন্তর্জাতিক অর্থায়ন ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা।

মূলত এই প্রতিবেদন ইসরায়েলি অপরাধের ‘মানবিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পর্যায়ে ভয়াবহতা’ স্পষ্ট করে তুলে ধরে। এটি শুধু সতর্কবার্তা নয়, অবরোধ প্রত্যাহার, সামরিক অভিযান বন্ধ ও পুনর্গঠন শুরু করার জন্য আন্তর্জাতিক সমাজকে অবিলম্বে এগিয়ে আসার আহ্বান।

যদি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, গাজা হয়তো আরও বহু দশক ধ্বংসস্তূপে পড়ে থাকবে আর এর মানবিক সংকট আধুনিক ইতিহাসের দীর্ঘতম ও ভয়াবহতম বিপর্যয়গুলোর একটিতে পরিণত হবে।

এই যুদ্ধ কেবল সামরিক সংঘর্ষ নয়, এটি এমন একটি পরিকল্পিত প্রকল্প, যা জীবনের ভিত্তিকে লক্ষ্য করে পরিচালিত হয়েছে। এর প্রভাব সীমান্তের বাইরে ছড়িয়ে পড়বে। একমাত্র কার্যকর আন্তর্জাতিক চাপ, বৃহৎ মানবিক তহবিল এবং রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিই পারে এই ‘মানুষের তৈরি গভীর খাদকে আবার বাসযোগ্য ভূমিতে’ রূপান্তরিত করতে।#

পার্সটুডে/এমএআর/২৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।