'ইরাক থেকে মার্কিন সেনাদের জোর করে তাড়ানো হতে পারে'
ইরাকের প্রভাবশালী দল আসায়েবে আহলে হক ( সংক্ষেপে এএএইচ বা সত্যনিষ্ঠদের জোট) বা লিগ অফ রাইটিয়স-এর মহাসচিব শেইখ কেইস আল খাজআলী বলেছেন, ইরাকে ওয়াহাবিবাদী-ইহুদিবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দায়েশ বা আইএস-এর পরাজয়ের পর মার্কিন সেনা উপস্থিতির কোনো যৌক্তিকতা ও অজুহাতই নেই।
তিনি বলেছেন, ইরাকি সংসদের অর্ধেকেরও বেশি সদস্য তাদের দেশে মার্কিন সেনা উপস্থিতির বিরোধী। খাজআলী বলেন, ইরাক থেকে মার্কিন সেনা সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে ইরাকি সংসদে ভোট অনুষ্ঠানের চেষ্টা চালাচ্ছেন মার্কিন সেনা উপস্থিতির বিরোধী সাংসদরা। কিন্তু মার্কিন সরকার যদি ইরাকি সাংসদদের ইচ্ছার প্রতি সম্মান দেখাতে ব্যর্থ হয় তাহলে মার্কিন সেনাদেরকে ইরাক থেকে জোর করে তাড়ানো হতে পারে।
ইরাকের রেডিও-টেলিভিশন ইউনিয়নের সভাপতি সাইয়্যেদ হামিদ আল হুসাইনি সম্প্রতি বলেছিলেন দেশটির সংসদের প্রায় ২০০ জন সদস্য তথা সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যই তাদের দেশে মার্কিন দখলদারিত্বের কঠোর বিরোধী।
দায়েশ বা আইএস-এর বিরুদ্ধে মার্কিন সরকারের নেতৃত্বাধীন কথিত আন্তর্জাতিক জোট গঠনের পর ২০১৪ সালে ইরাকে হাজার হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন করা হয়। ইরাকের সশস্ত্র বাহিনী ও জনপ্রিয় গণবাহিনী হাশদ আশশাবির প্রচেষ্টায় দেশটিতে দায়েশ বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয়ের পর ইরাকি জনগণ আশা করছিল যে তাদের দেশে দায়েশ দমনের নামে আর বিদেশি সেনা উপস্থিতির কোনো সুযোগ বা অজুহাত নেই। তাই তারা ইরাক থেকে বিদেশী সেনা সরিয়ে নেয়ার দাবি জানিয়ে আসছে।
ইরাকি সংসদ সম্প্রতি মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে একটি বিল বা পরিকল্পনা তৈরির চেষ্টা করছেন। ইরাকি সাংসদরা মার্কিন সেনা সরিয়ে নেয়ার সময়সীমা তৈরি করা ও এ বিষয়ে মার্কিন সরকারের সঙ্গে ইরাক সরকারের সংলাপের দাবিও জানাচ্ছেন।
সাদ্দাম সরকারের কাছে গণ-বিধ্বংসী অস্ত্র আছে এই অজুহাত দেখিয়ে ২০০৩ সালে ইরাকে হামলা চালিয়েছিল ইঙ্গ-মার্কিন বাহিনী। অথচ ইরাককে মার্কিন সরকার ও তার মিত্ররাই রাসায়নিক অস্ত্রসহ নানা গণ-বিধ্বংসী অস্ত্র দিয়েছিল ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে এবং উদ্বৃত্ত সেসব অস্ত্র দ্বিতীয় উপসাগরীয় যুদ্ধের পরপরই জাতিসংঘের মাধ্যমে ধ্বংস করা হয়েছিল।
ইরাকের তেল সম্পদ লুট করা ও দেশটিতে দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠাই ছিল দেশটিতে ইঙ্গ-মার্কিন হামলার আসল লক্ষ্য। ৮ বছরের দখলদারিত্বের পর বিশ্ব জনমতের চাপে ২০১১ সালে ইরাক থেকে সেনা সরাতে রাজি হয় মার্কিন সরকার। কিন্তু ২০১৪ সালে মার্কিন সহায়তায় গড়ে তোলা দায়েশ দমনের নামে আন্তর্জাতিক জোটের ব্যানারে আবারও ইরাকে ঢোকে মার্কিন সেনা।
ইরাকে মার্কিন সেনা উপস্থিতি বজায় রেখে মার্কিন সরকার সেখানে মোড়লীপনা করতে এবং ইরাককে টুকরা টুকরা করাসহ নানা ধরনের অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করতে চায়। ইরাকে নানা সময়ে মার্কিন উপস্থিতির ফলে সন্ত্রাস তো কমেনি বরং আল-কায়দা ও দায়েশের মত সন্ত্রাসী নানা গোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়েছে। মার্কিন সেনা উপস্থিতির বিরুদ্ধে ইরাকিদের গণ-বিক্ষোভ ব্যাপক রূপ নিলে দখলদার এই গোষ্ঠী আবারও ২০১১ সালের মতই ইরাক থেকে সেনা ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হবে। #
পার্সটুডে/এমএএইচ/২৯
খবরসহ আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সব লেখা ফেসবুকে পেতে এখানে ক্লিক করুন এবং নোটিফিকেশনের জন্য লাইক দিন