ইরাকে আইএস-মার্কিন আঁতাতের রহস্য, ঘরোয়া চক্রান্ত ও ইরান সম্পর্কে মালিকি
https://parstoday.ir/bn/news/west_asia-i81166-ইরাকে_আইএস_মার্কিন_আঁতাতের_রহস্য_ঘরোয়া_চক্রান্ত_ও_ইরান_সম্পর্কে_মালিকি
ইরাকের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি বলেছেন, ২০১৪ সালে ইরাকের ভেতরে তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দায়েশ তথা আইএসএল বা কথিত আইএস-এর অভিযান সফল হওয়ার পেছনে ছিল ঘরোয়া ষড়যন্ত্র।
(last modified 2025-07-29T12:16:04+00:00 )
জুলাই ০৩, ২০২০ ১৯:৩৮ Asia/Dhaka
  • ইরাকি হাশদ আশ শাবি নামক জনপ্রিয় বাহিনীর সামরিক অভিযানের একটি দৃশ্য (ফাইল ফটো)
    ইরাকি হাশদ আশ শাবি নামক জনপ্রিয় বাহিনীর সামরিক অভিযানের একটি দৃশ্য (ফাইল ফটো)

ইরাকের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি বলেছেন, ২০১৪ সালে ইরাকের ভেতরে তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দায়েশ তথা আইএসএল বা কথিত আইএস-এর অভিযান সফল হওয়ার পেছনে ছিল ঘরোয়া ষড়যন্ত্র।

দায়েশের সাফল্যের দ্বিতীয় প্রধান কারণ হিসেবে ইরাকের প্রতি মার্কিন অসহযোগিতা ও দায়েশের প্রতি মার্কিন সহযোগিতার কথাও তুলে ধরেছেন নুরি আল মালিকি। 

সম্প্রতি 'আলমা'লুমাহ' টেলিভিশনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মালিকি আরও বলেছেন, সে সময় দায়েশ-বিরোধী সংগ্রামে তথা সন্ত্রাস বিরোধী সংগ্রামে সাহায্য করতে একমাত্র ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানই এগিয়ে এসেছিল এবং হাশদ্ আশ শা'বি তথা পপুলার মবিলাইজেশন ফোর্স নামের জনপ্রিয় স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী গঠন  কথিত আইএস বা দায়েশকে দমনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

দায়েশ বা কথিত আইএস ২০১৪ সালের জুন মাসে ইরাকে হামলা শুরু করে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই নাইনাভা প্রদেশের রাজধানী মসুল (আরবিতে মাওসিল বলা হয়) দখল করে নেয়। হামলার শুরুতেই ইরাকের তৃতীয় বৃহত্তম শহর মসুল ও পরে আরও অনেক অঞ্চল দায়েশের দখলে চলে যাওয়ায় বিশ্বজুড়ে বিস্ময় ও চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছিল। আসলে নেইনাভা অঞ্চলের একদল ইরাকি সরকারি কর্মকর্তাই ষড়যন্ত্র করায় দায়েশ বিনা বাধায় মসুল দখল করে এবং একই কারণে ইরাকি সেনাবাহিনীও দায়েশের হামলা প্রতিরোধের কোনো উদ্যোগই নেয়নি।

নুরি আল মালিকি বলেছেন,  কথিত আইএস বা দায়েশের অনুপ্রবেশ অপ্রত্যাশিত ছিল না, কারণ মসুল থেকে ইরাকি সশস্ত্র বাহিনীকে সরিয়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র আগেই পাকানো হয়েছিল এই বাহিনীর ভেতরেই।


একই সাক্ষাৎকারে ইরাকি স্টেট অফ ল শীর্ষক জোটের প্রধান নুরি আল মালিকি আরও জানান যে, মার্কিন সরকার ইরাকে হস্তক্ষেপের জন্য দায়েশ বা কথিত আইএস-কে ব্যবহার করেছে। ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন হামলার পর থেকে দেশটিতে দখলদারিত্ব বজায় রেখেছিল মার্কিন সেনারা। ২০১১ সালে ইরাক থেকে মার্কিন সেনা সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে বাগদাদের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছিল মার্কিন সরকারের।

ইরাকের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি 

 

মার্কিন সেনাদের ইরাক থেকে ফেরত নেয়ার ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও নুরি আল মালিকি সরকারের চাপের মুখে বেশিরভাগ মার্কিন সেনাকেই প্রত্যাহারের পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়। তাই দায়েশের হামলার সময় ইরাক দায়েশকে ঠেকাতে মার্কিন সাহায্য চাইলে তৎকালীন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী নুরি আল মালিকিকে ইরাকের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারণের শর্ত আরোপ করে। কারণ মার্কিন সরকারের দৃষ্টিতে মালিকির সরকার ইরাকে মার্কিন স্বার্থের অনুকূল নয়। 

মালিকি ইরাকের প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকায় সে সময় দায়েশ-বিরোধী সংগ্রামে কোনো সামরিক সহায়তাই দেয়নি ওয়াশিংটন, বরং মার্কিন মদদেই দায়েশ সিরিয়া থেকে বিপুল অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে ইরাকে ঢোকে।

মালিকি আরও বলেছেন, মার্কিন সরকার সেই মহাবিপদের সময় ইরাককে বিন্দুমাত্র সামরিক সহায়তা না দিলেও ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান ব্যাপক সামরিক সহায়তা দেয় ইরাককে। এর আগেও ইরাকি কুর্দিস্তানের নেতা মাসুদ বারজানি দায়েশের মোকাবেলায় সে সময় কুর্দিস্তানের সহায়তার আবেদনে কেবল ইরানই সাড়া দিয়েছিল। ইরান খুব দ্রুত সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। ইরান সব সময়ই ইরাকের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষাকে তার অন্যতম প্রধান নীতি হিসেবে গুরুত্ব দিয়ে এসেছে। ইরাকের দায়েশ বিরোধী সংগ্রামে অসাধারণ ও প্রধান ভূমিকা রেখেছিলেন ইরানের কুদস্‌ ব্রিগেডের প্রধান শহীদ কাসেম সুলায়মানি।

ইরাকে দায়েশের ব্যাপক হামলার প্রেক্ষাপটে দেশটির শীর্ষস্থানীয় শিয়া আলেম আয়াতুল্লাহ সিস্তানি স্বেচ্ছাসেবী গণ-প্রতিরোধ বাহিনী গঠনের ফতোয়া দেন এবং এর ফলে গড়ে ওঠে হাশদ্‌ আশশা'বি বা পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্স। ইরাকি সশস্ত্র বাহিনীর অকার্যকারিতার প্রেক্ষাপটে এই বাহিনী দায়েশকে প্রায় নির্মূল ও নাস্তানাবুদ করে। তাই নুরি আল মালিকির মতে নতুন নতুন বা সম্ভাব্য ষড়যন্ত্রগুলোর মোকাবেলায় হাশদ আশ শা'বি-বাহিনীকে টিকিয়ে রাখা এখনও জরুরি। ইরাকের সংসদের রায়ে বেশ কিছুকাল আগে এ বাহিনী জাতীয় সশস্ত্র বাহিনীর অংশে পরিণত হয়েছে।

উল্লেখ্য সন্ত্রাসী তাকফিরি গোষ্ঠী আইএস গঠনে মার্কিন সরকারের প্রধান ভূমিকার কথা স্বীকার করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। #   

পার্সটুডে/এমএএইচ/৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।