ইরান সমর্থক বসরার গভর্নরকে হটাতে ভেতরে ও বাইরের নানামুখী ষড়যন্ত্র
(last modified Sun, 23 Aug 2020 10:53:09 GMT )
আগস্ট ২৩, ২০২০ ১৬:৫৩ Asia/Dhaka

ইরাকের বসরা নগরী হঠাৎ করেই অশান্ত হয়ে উঠেছে। পরিস্থিতি এমন অবস্থায় এসে ঠেকেছে যে প্রধানমন্ত্রী মোস্তফা আল কাজেমি আমেরিকা সফর শেষ করে দেশে ফিরেই বসরার উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনার জন্য জরুরি বৈঠক ডেকেছেন।

গত পাঁচ বছর ধরে প্রতি গ্রীষ্মে বসরায় সরকার বিরোধী বিক্ষোভ হতে দেখা যায় যা পরবর্তীতে সামাজিক সহিংসতায় রূপ নেয়। বেশ ক’বছর ধরে ইরাকে বেকারত্ব সমস্যা এবং বিদ্যুত ও পানি সরবরাহে ঘাটতি থাকায় প্রশাসনের প্রতি জনমনে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এসব সমস্যা একদিনের নয়। এ কারণে সাবেক প্রধানমন্ত্রী আদেল আব্দুল মাহদি মাত্র এক বছর ক্ষমতায় থেকে এসব সমস্যার সমাধান করতে পারেননি। অন্যদিকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মোস্তফা আল কাজেমির পক্ষেও রাতারাতি এসব সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। সাবেক স্বৈরাচারী প্রেসিডেন্ট সাদ্দামের আমল থেকে এসব সমস্যা তৈরি হয়ে তা বর্তমান প্রশাসনের হাতে এসে পৌঁছেছে।

দুটি বড় সমস্যা ইরাকের জনগণকে পীড়া দিচ্ছে। প্রথমটি হচ্ছে দুর্নীতি এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে নাগরিক আন্দোলন কর্মীদের হত্যার ঘটনা। ইরাকে সীমাহীন দুর্নীতি দেশটির জন্য মহাসংকটে পরিণত হয়েছে। ২০০৩ সালে সাদ্দামের পতনের পর থেকে এ পর্যন্ত অর্থাৎ ১৭ বছরে ৪০ হাজার কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ তসরুপের ঘটনা ঘটেছে। এটা ইরাকের জনগণের কাছে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ জনগণ মনে করে এতো বিশাল পরিমাণ অর্থ দিয়ে বেকার সমস্যা সমাধান এবং পানি ও বিদ্যুতের সরবরাহ ঠিক রাখা সম্ভব। এ ছাড়া, সরকারের শক্তিশালী অবকাঠামো গড়ে তোলাও সম্ভব। বসরার জনগণের ক্ষোভের অন্যতম কারণ হচ্ছে ওই এলাকার মানুষ সম্পদশালী হলেও তারা পানি ও বিদ্যুতের তীব্র সংকটে ভুগছে। সমাজে বেকার সমস্যাও বাড়ছে। অথচ ওই  প্রদেশে ৬৫০০ কোটি ব্যারেল তেলের মজুদ রয়েছে এবং দৈনিক ৩৫ লাখ ব্যারেল তেল রপ্তানি করা হয়। কিন্তু তারপরও শিয়া মুসলিম অধ্যুষিত বসরা প্রদেশের জনগণ তেল বিক্রি বাবদ অর্থের তেমন কোনো সুবিধা পায় না।

বসরার জনগণের ক্ষোভ ও প্রতিবাদের আরেকটি কারণ হচ্ছে, একের পর এক নাগরিক আন্দোলনের কর্মীদের হত্যার ঘটনা, বিস্ফোরণ ও নিরাপত্তাহীনতা। প্রধানমন্ত্রী মোস্তফা আল কাজেমি যদিও বসরার পুলিশ প্রধানসহ আরো বেশ ক’জন কর্মকর্তাকে অপসারণ করে জনগণকে শান্ত করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তারপরও সরকার বিরোধী বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। অজ্ঞাত ব্যক্তিদের পরিকল্পিত হামলায় গত  এক মাসে আট ব্যক্তি এবং গত এক সপ্তাহে তিন ব্যক্তি নিহত হয়েছে। বিশেষ করে পুষ্টি বিজ্ঞানী ড. রাহাম ইয়াকুব নিহত হওয়ায় সহিংসতা ও জনগণের মধ্যে ক্ষোভের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে।

ইরাকের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা মনে করেন, বসরায় যে গুপ্তহত্যা হচ্ছে তা বাইরের এবং ভেতরের বিশেষ মহলের কারসাজি। ইরাকের আহলুল হক গ্রুপের মহাসচিব কেইস আল খাজাআলি মনে করেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বসরাকে অস্থিতিশীল করে তোলা হচ্ছে এবং প্রভাবশালী কোনো কোনো মহল এর  সঙ্গে জড়িত। তাদের দুটি উদ্দেশ্য রয়েছে। প্রথমত, বসরার গভর্নর আসাদ আল এইদানিকে অপসারণ করা। এইদানি এক সময় প্রধানমন্ত্রীর পদের প্রার্থী ছিলেন এবং আল আরাবিয়ার মতো সৌদিপন্থী গণমাধ্যমগুলো তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। বসরার গভর্নর ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তীব্র বিরোধী। এ কারণে আমেরিকা ও সৌদিপন্থীরা তার বিরুদ্ধে নানান তৎপরতায় লিপ্ত। দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হচ্ছে, বসরায় রয়েছে সবচেয়ে বড় কারাগার। সাদ্দাম সমর্থক ও সৌদিপন্থী অনেক অপরাধী ওই জেলখানাতে আটক রয়েছে। সব মিলিয়ে বসরার পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে। #                   

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/২৩

ট্যাগ