গাজা যুদ্ধে পরাজিত ইসরাইলের মনোবল চাঙ্গা করাই ব্লিংকেনের টার্গেট
গাজায় ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ১২ দিনের যুদ্ধে দখলদার ইসরাইলের পরাজয়ের পর তাদের প্রধান মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরপরই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেন গত মঙ্গলবার পশ্চিম এশিয়া সফরে আসেন। এই সফরকালে তিনি ইসরাইলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করা ছাড়াও রামাল্লায় ফিলিস্তিন স্বশাসন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।
এরপর তিনি গাজা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য মিশর ও জর্দানের উদ্দেশ্যে রওনা হন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেছেন তার এ সফরের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে উভয় পক্ষের যুদ্ধবিরতি টিকিয়ে রাখা এবং বিরাজমান উদ্বেগের অবসান ঘটানো। তিনি বলেন সবকিছু যদি অনুকূলে থাকে তাহলে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের চেষ্টা করা হবে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মার্কিন কর্মকর্তারা এমন সময় ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের মধ্যকার যুদ্ধবিরতি টিকিয়ে রাখার জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছেন যখন খোদ মার্কিন সরকারই গাজায় সাম্প্রতিক যুদ্ধ চলাকালে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে ইসরাইলের বিরুদ্ধে বিবৃতি প্রকাশে বাধা দিয়েছিল এবং সরাসরি ইসরাইলের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিল।
ধারণা করা হচ্ছে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পশ্চিম এশিয়া সফরের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ১২ দিনের যুদ্ধ অবসানের পর ইসরাইলের প্রতি ওয়াশিংটনের সমর্থন ঘোষণা করা। বিশেষ করে ইসরাইলকে আবারও অস্ত্রে সজ্জিত করা এবং সাম্প্রতিক যুদ্ধে তাদের যে সামরিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেটাকে পুষিয়ে দেয়া যাতে ইসরাইলি সেনা বাহিনীতে আবারো মনোবল ফিরে আসে। কেননা গাজা থেকে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের শতশত রকেটের আঘাতে জর্জরিত ইসরাইলের ভিত্তি কেঁপে উঠেছে এবং তারা এখন হতাশ। সে কারণে ইসরাইল সফরে এসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরাইলের নিরাপত্তা রক্ষায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গুরুত্বারোপের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, আমরা এটা নিশ্চিত হতে চাই ইসরাইল যেন আত্মরক্ষা করতে পারে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট সম্প্রতি বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্থনি ব্লিংকেনের মধ্যপ্রাচ্য সফরের উদ্দেশ্য হচ্ছে ইসরাইলের নিরাপত্তা রক্ষায় ওয়াশিংটনের বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন। তিনি বলেছেন, ১২ দিনের যুদ্ধে ইসরাইলের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোমে যেসব ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে তা আবারও ইসরাইলকে পুষিয়ে দেয়া হবে।
তাই বলা যায়, যুদ্ধবিরতিকে টেকসই করা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফরের উদ্দেশ্য বলে দাবি করা হলেও বাস্তবতা হচ্ছে ইসরাইলকে পরিপূর্ণ সমর্থন দেয়া এবং ইসরাইলের সামরিক বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করাই মূল উদ্দেশ্য। এ বিষয়ে হামাসের রাজনৈতিক দফতরের উপপ্রধান মুসা আবু মারজুক বলেছেন, রাজনৈতিক উপায়ে ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধান করা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্দেশ্য নয় বরং তাঁর লক্ষ্য হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকানোর উপায় খুঁজে বের করা।
বাস্তবতা হচ্ছে, সাম্প্রতিক গাজা যুদ্ধে ফিলিস্তিন প্রতিরোধ যোদ্ধাদের মুহুর্মুহু ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেট হামলা ইসরাইলের সামরিক ও রাজনৈতিক কর্মকর্তাদেরকে হতবিহবল করে দিয়েছে। ইসরাইলে এমন নজিরবিহীন নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছিল যে ওয়াশিংটন ইসরাইলকে আরও অস্ত্রে সজ্জিত করা এবং তাদের মনোবল চাঙ্গা করার জন্য মাঠে নেমে পড়েছে।#
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/২৭