ইয়েমেনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতার কথা স্বীকার করলেন জাতিসংঘের দূত
(last modified Tue, 01 Jun 2021 09:52:06 GMT )
জুন ০১, ২০২১ ১৫:৫২ Asia/Dhaka

ইয়েমেন বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত মার্টিন গ্রিফিথ ইয়েমেনে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠায় তার ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে এ ব্যাপারে তার হতাশার কথা ব্যক্ত করেছেন।

সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট গত প্রায় ছয় বছর ধরে ইয়েমেনের বিরুদ্ধে একটানা আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে। এই আগ্রাসনে পর্যন্ত ১৭ হাজারের বেশি ইয়েমেনি নিহত এবং বহু মানুষ আহত হয়েছে। এছাড়া দেশটির গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে যা কিনা মানবতার বিরুদ্ধে বড় ধরনের যুদ্ধাপরাধ। তারপরও এত বড় মানবিক বিপর্যয় ঠেকাতে জাতিসংঘ সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। ইয়েমেনে বিপর্যয়রোধে জাতিসংঘ কি ধরনের ভূমিকা পালন করতে পারত সেটাই এখন প্রশ্ন। জাতিসংঘের নীতিমালা অনুযায়ী ইয়েমেনে সৌদি আরবের ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যা রোধে এই সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ছিল।

বাস্তবতা হচ্ছে, ইয়েমেনের বিরুদ্ধে সৌদি আগ্রাসন বন্ধ করা, সৌদি জোটের পক্ষ থেকে ইয়েমেনের উপর আরোপিত সর্বাত্মক নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়া, ইয়েমেনে সৌদি আগ্রাসনের নিন্দা জানানো এবং বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে আলোচনার পরিবেশ তৈরিতে জাতিসংঘ ভূমিকা রাখতে পারতো। গত ছয় বছরে জাতিসংঘ কেবলমাত্র যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠায় আলোচনার জন্য মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করেছে, এর বেশি কিছু নয়। জাতিসংঘের বিশেষ দূত গতকাল ইয়েমেন ত্যাগ করার আগে সানা বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘জ্বালানিসহ সমস্ত জরুরি পণ্য প্রবেশের উপর থেকে সব ধরনের বাধা তুলে নিতে হবে। এর সঙ্গে কোন রকমের রাজনৈতিক ও সামরিক ইস্যু যুক্ত করা ঠিক হবে না’। তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছরে আমরা ইয়েমেনে যুদ্ধবিরোধী প্রতিষ্ঠার জন্য সৌদি ও ইয়েমেন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করেছি’।

এ অবস্থায় আরেকটি প্রশ্ন হচ্ছে ইয়েমেনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ কেন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এর উত্তরে বলা যায়, বিরাজমান সংকট নিরসনে জাতিসংঘ আসলে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছে। এ কারণেই ইয়েমেনের হুথি সমর্থক 'ন্যাশনাল সালভেশন' সরকার বহুবার জাতিসংঘের সমালোচনা করেছে। ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ সংগঠনের মুখপাত্র মোঃ আব্দুস সালাম এক বিবৃতিতে সৌদি আগ্রাসনে ইয়েমেনের অধিকার রক্ষায় জাতিসংঘের ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ‘সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ও তাদের পৃষ্ঠপোষকরা ইয়েমেনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে দেয়নি এমনকি জাতিসংঘ ইয়েমেন বিরোধী অবরোধের নিন্দা করারও সাহস পায়নি’।

ইয়েমেন ইস্যুতে জাতিসংঘের নিষ্ক্রিয় ভূমিকার আরেকটি কারণ হচ্ছে বৃহৎ শক্তিগুলোর নীরবতা অথবা সৌদি আগ্রাসনের প্রতি তাদের নির্লজ্জ সমর্থন। বৃহৎ শক্তিগুলোর সমর্থনের কারণেই সৌদি আরব এতটা উদ্ধত্য দেখাতে সাহস পেয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সমাজের প্রতিবাদকে মোটেই আমলে নেয়নি। বাস্তবতা হচ্ছে বৃহৎ শক্তিগুলো যদি ইয়েমেন সংকট নিরসনে পদক্ষেপ না নেয় তাহলে এ সংকটের কোনো সুরাহা হবে না।

আরেকটি বিষয় হচ্ছে, জাতিসংঘ আর্থিকভাবে স্বাধীন নয় অর্থাৎ এ সংস্থাটি সাম্রাজ্যবাদী বৃহৎ শক্তিগুলোর অর্থের উপর নির্ভরশীল। এছাড়া সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো কয়েকটি ধনী আরব দেশের অর্থনীতির উপরও জাতিসংঘ নির্ভরশীল। ইয়েমেনের শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের ব্যর্থতা এসবও বড় কারণ। তাই জাতিসংঘ কেবল নীরব দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং তারা কেবল বৃহৎ শক্তিগুলোর স্বার্থ রক্ষায় ব্যস্ত।#

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১