আইএস জঙ্গিদের পরিবারের সদস্যদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা: তীব্র বিরোধিতা ইরাকে
ইরাকের সংসদের জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বিষয়ক কমিশনের সদস্য বদর আল জিয়াদি সিরিয়ার আল-হুল আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থিত উগ্র আইএস সন্ত্রাসীদের পরিবারের সদস্যদেরকে ইরাকে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টার পরিণতির ব্যাপারে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন।
সিরিয়াল আল-হুল আশ্রয় শিবিরে বহু শরণার্থী অবস্থান করছে যারা কিনা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আন্তর্জাতিক সংবাদ ও রাজনৈতিক মহলের গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। কোন কোন সূত্র জানিয়েছে এই আশ্রয় কেন্দ্রে অন্তত ৭৫ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে যাদের মধ্যে অন্তত ৫০ হাজার শিশু রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখানে আশ্রয় নেয়া বেশিরভাগ শরণার্থী উগ্র দায়েশ বা আইএস জঙ্গি সন্ত্রাসীদের পরিবারের সদস্য যারা কিনা ২০১৭ সালে সন্ত্রাসীরা পরাজিত হওয়ার পর ইরাক থেকে সেখানে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। এই আশ্রয় কেন্দ্রটি ইরাক ও সিরিয়ার মধ্যবর্তী হাসাকা এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে।
প্রত্যন্ত এলাকায় এবং মরু অঞ্চলে জীবনধারণ এতটাই কঠিন যে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সেখান থেকে শরণার্থীদেরকে ইরাকের মাটিতে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। কিন্তু তাদেরকে ইরাকের মাটিতে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে ইরাকের ভেতরেই ব্যাপক বিরোধিতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ইরাকের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ব্যক্তিত্ব ও সংগঠন বলছে সেদেশে গণহত্যায় আইএস সন্ত্রাসীদের ব্যাপক ভূমিকা থাকায় তাদের পরিবারের সদস্যদেরকে ইরাকে ফিরিয়ে আনা অত্যন্ত বিপদজনক হবে আর এ কারণেই তারা এর বিরোধিতা করছে। ইরাকের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা কাসেম আল আরাজি ওই শরণার্থী শিবিরে অবস্থিত আইএস জঙ্গি সন্ত্রাসীদের সন্তানদেরকে আগামী দিনের আইএস হিসেবে অভিহিত করেছেন যারা কিনা ভবিষ্যতে ইরাকসহ সমগ্র অঞ্চলের জন্য বিপদজনক হতে পারে।
এদিকে ইরাকের অভ্যন্তরে ব্যাপক বিরোধিতা ও হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও বিভিন্ন খবরে জানা গেছে ইরাক সরকার একরকম বাধ্য হয়ে সিরিয়ার আল-হুল আশ্রয় কেন্দ্র থেকে শরণার্থীদেরকে ইরাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। এর আগে ইরাকের অভিবাসন ও শরণার্থী বিষয়ক মন্ত্রণালয় নেইনাভা প্রদেশের আলেক্সাস শরণার্থী শিবিরকে সিরিয়ায় আশ্রয় নেয়া আইএস জঙ্গিদের পরিবারের সদস্যদেরকে জায়গা করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু ইরাকের ভিতরে প্রচণ্ড সমালোচনা ও বিরোধিতার কারণে শেষ পর্যন্ত সরকার ওই সিদ্ধান্ত বাতিল কোরে ওই এলাকাকে সামরিক ঘাঁটিতে পরিণত করে।
বাস্তবতা হচ্ছে, ইরাক বহু বছর ধরে উগ্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দায়েশ বা আইএস জঙ্গিদের হামলার শিকার হয়েছিল। জঙ্গিদের হামলায় ইরাকের হাজার হাজার নিরীহ মানুষ হতাহত হওয়া ছাড়াও লাখ লাখ সাধারণ মানুষ শরণার্থীতে পরিণত হয়েছিল। এছাড়া সন্ত্রাসীদের হামলায় ইরাকে বহু গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। এসব কারণে ইরাকের বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব ও সংগঠন আইএস সন্ত্রাসীদের পরিবারের সদস্যদেরকে ইরাকে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনার বিরোধিতা করছে। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে ইউরোপীয় দেশগুলো কেন সিরিয়ায় অবস্থিত ইউরোপীয় জঙ্গিদেরকে নিজ নিজ দেশে ফিরিয়ে নিচ্ছে না?
ধারণা করা হচ্ছে, মার্কিন সরকারের প্রবল চাপের মুখে ইরাক সরকার সিরিয়ার আল-হুল আশ্রয় কেন্দ্র থেকে শরণার্থীদেরকে ইরাকে ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিয়েছে। ইরাকের সংসদের জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বিষয়ক কমিশনের সদস্য বদর আল জিয়াদি মার্কিন চাপের বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন।
এদিকে ইরাকের জনপ্রিয় হাশদ আল শাবি সংগঠনের কমান্ডার আব্বাস আল যেইদি বলেছেন, মার্কিন সরকার ইরাকে সন্ত্রাসীদেরকে আবারো সংগঠিত করে এদেশে তাদের সেনা উপস্থিতি বজায় রাখার চেষ্টা করছে। দায়েশ বা আইএস জঙ্গিদের পরিবারের সদস্যদেরকে ইরাকে ফিরিয়ে আনার পেছনে তাদের উদ্দেশ্য এটাই।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন এতে কোন সন্দেহ নেই যে আইএস সন্ত্রাসীদের পরিবারের সদস্যদেরকে ইরাকে ফিরিয়ে আনা হলে দেশটির নিরাপত্তা জন্য বিরাট হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। ইরাকের সংসদের জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বিষয়ক কমিশনের সদস্য বদর আল জিয়াদিও বিষয়টি স্বীকার করেছেন।#
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/৩