একদিকে সৌদি সামরিক আগ্রাসন অন্যদিকে সর্বাত্মক অবরোধ: ভয়াবহ বিপর্যয়ে ইয়েমেন
(last modified Wed, 11 Aug 2021 12:48:23 GMT )
আগস্ট ১১, ২০২১ ১৮:৪৮ Asia/Dhaka

ইয়েমেনে গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে রাজধানী সানার আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের ওপর সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের কঠোর অবরোধের কারণে দেশটিতে ভয়াবহ ও নজিরবিহীন মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে।

২০১৫ সালের ২৬ মার্চ সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ইয়েমেনের বিরুদ্ধে আগ্রাসন শুরু করে। সৌদি সরকার ভেবেছিল খুব অল্প সময়ের মধ্যে তারা ইয়েমেন যুদ্ধে বিজয়ী হতে পারবে এবং পলাতক প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মানসুর হাদিকে ফের দেশটির ক্ষমতায় বসাতে পারবে। কিন্তু তাদের এ হিসাব নিকাশ সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত হয়েছে। সৌদি আরব তাদের লক্ষ্যে পৌছার জন্য এখনো ইয়েমেনের বিরুদ্ধে প্রতিদিন ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইয়েমেনের হুথি সরকারের অনুগত সেনাবাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবী যোদ্ধারা তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলায় সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট প্রতিনিয়ত বোমা বর্ষণের পাশাপাশি দেশটির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে যার ফলে কোনো পণ্য সামগ্রী আসতে না পারায় ইয়েমেনে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।

যুদ্ধের শুরুতেই সৌদি আরব ইয়েমেনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিলেও এর পরের বছর অর্থাৎ ২০১৬ সালের আগস্টে তারা ইয়েমেনের সানা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ইয়েমেনের জনগণের  ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করা যাতে ওষুধ ও খাদ্যের ঘাটতি সৃষ্টি করে সেনাবাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবী বাহিনীকে বেকায়দায় ফেলা যায়।

সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট সানা বিমান বন্দরে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ কোরে এমনভাবে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টির চেষ্টা করছে যাতে দেশটির জনগণকে ইয়েমেনের জনপ্রিয় হুথি সমর্থিত স্যালভেশন সরকার, সেনাবাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবী বাহিনীর বিরুদ্ধে খেপিয়ে তোলা যায়। এ কারণেই তারা  নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি বিরামহীন বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

প্রকৃতপক্ষে, গত পাঁচ বছরে সৌদি আগ্রাসন সত্বেও ইয়েমেনের সেনাবাহিনী ও জনগণের মধ্যে কোনো ধরনের দূরত্ব সৃষ্টি হয়নি বরং তাদের মধ্যকার ঐক্য জোরদার হয়েছে। তবে সেখানে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। সানা বিমান বন্দরের প্রধান খালেদ আল শারিফ ইরানের প্রেস টিভিকে দেয়া সাক্ষাতকারে বলেছেন, সৌদি নিষেধাজ্ঞার কারণে পাঁচ বছরে প্রায় এক লাখ মানুষ জরুরি চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে না পারায় প্রাণ হারিয়েছে। ইয়েমেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাজিব আল কাবাতিও বলেছেন, সেদেশের ওপর সৌদি নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রতি পাঁচ মিনিটে একটি করে শিশু প্রাণ হারাচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি বছর পর্যাপ্ত চিকিৎসার অভাবে প্রায় আট হাজার নারী প্রাণ হারাচ্ছে।

শুধু যে সৌদি আগ্রাসনে সাধারণ মানুষ নিহত হচ্ছে তা নয় একইসঙ্গে নিষেধাজ্ঞার কারণে চিকিৎসা না পেয়ে এবং অপুষ্টিতে ভুগে এ পর্যন্ত বহু নারী ও শিশু প্রাণ হারিয়েছে। বিমান চলাচল করতে না পারায় খাদ্য ও ওষুধসহ কোনো জরুরি পণ্যই আসতে পারছে না। এতে করে বেঘোরে মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে এতোবড় মানবিক বিপর্যয়ের পরও সৌদি আগ্রাসন রোধ আজ পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। আন্তর্জাতিক সমাজ নীরবে ইয়েমেনের বিপর্যয় চেয়ে চেয়ে দেখছে।#

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১১

ট্যাগ