যে কারণ আইএস ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে
ইরাকে হঠাৎ বেড়েছে আইএস জঙ্গিদের হামলা: হাতে এসেছে নতুন অস্ত্র
সমগ্র বিশ্বের গণমাধ্যমগুলোর নজর যখন আফগানিস্তানের তালেবানের দিকে তখন সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইরাকে উগ্র তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দায়েশ বা আইএস’র তৎপরতা হঠাৎ বেড়ে গেছে। আইএস জঙ্গিরা গতকাল ইরাকের উত্তরাঞ্চলীয় কিরকুক শহরে হামলা চালিয়ে সাতজন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করেছে এবং আহত হয়েছে আরো অনেকে।
এদিকে, ইরাকের সূত্রগুলো জানিয়েছে, বাবেল প্রদেশের উত্তরে জারেফ আল নাসর এলাকায় সন্ত্রাসীদের পেতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হাশদ আশ শাবির একজন সামরিক কমান্ডার শহীদ হয়েছেন। এ ছাড়া তার আরো দুই সহযোগীও শাহাদাত বরণ করেছেন। হাশদ আশ শাবির একজন কমান্ডার জানিয়েছেন, ইরাকের বিভিন্ন শহরে সম্প্রতি আইএস জঙ্গিদের হামলা বেড়েছে। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এসব সন্ত্রাসীরা নতুন করে অস্ত্রশস্ত্র হাতে পেয়েছে এবং বিগত সময়ের তুলনায় এরা আরো নৃশংস ও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে।
ইরাকের গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, দায়েশ বা আইএস জঙ্গিরা ফের সংগঠিত হচ্ছে এবং তারা গোপনে এবং কখনো কখনো প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী তাণ্ডব চালাচ্ছে। ইরাকি পার্লামেন্টের প্রতিনিধি আরশাদ আল সালেহি সেদেশে আইএস জঙ্গিদের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, তাদের সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলা ও হত্যাকাণ্ড থেকে বোঝা যায় তারা আরো ভয়ঙ্কর রূপে আত্মপ্রকাশ করেছে।
ইরাকে আর মাত্র প্রায় এক মাস পর পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বলা হচ্ছে নির্বাচনকে ভণ্ডুল কিংবা একে প্রভাবিত করার জন্যই আইএস জঙ্গিরা ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে এবং ইরাককে নিরাপত্তাহীনতার দিকে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা করছে। সে কারণে কারা সন্ত্রাসীদেরকে সমর্থন যোগাচ্ছে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ধারনা করা হচ্ছে ইরাকে যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রয়েছে তা অনেকের কাছেই অসহ্যকর এবং তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য সন্ত্রাসীদেরকে ব্যবহার করছে। এ কারণে হঠাৎ ইরাক অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। বলা যায় হঠাৎ আইএস জঙ্গিরা তৎপর হয়ে ওঠার পেছনে কয়েকটি উদ্দেশ্য রয়েছে। প্রথমত, হামলা চালিয়ে ইরাককে নিরাপত্তাহীন করে তোলা এবং হাশদ আশ শাবির দুর্বলতা বা অক্ষমতা প্রমাণ করা যাতে আসন্ন নির্বাচনে তাদের সম্পর্কে জনমনে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। কারণ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো ও তাদের সমর্থকরা ইরাকে হাশদ আশ শাবির জনপ্রিয়তা সম্পর্কে খুব ভালোভাবে অবহিত আছে।
সন্ত্রাসীদের দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হচ্ছে, অব্যাহত হামলা চালিয়ে ইরাকে এমনভাবে নিরাপত্তাহীনতা ছড়িয়ে দেয়া যাতে সেদেশে মার্কিন সেনাদের উপস্থিতির পক্ষে যুক্তি দাঁড় করানো যায় এবং মার্কিন সামরিক প্রশিক্ষক ও ঠিকাদাররাও যেন ওই দেশে থাকতে পারে।
আইএস জঙ্গিদের তৃতীয় উদ্দেশ্য হচ্ছে, মোস্তফা আল কাজেমি সরকারের ওপর থেকে চাপ কামানো। কেননা ইরাকের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জনগণ চায় সেদেশ থেকে মার্কিন সেনা বহিষ্কারের জন্য সংসদে যে প্রস্তাব পাশ করা হয়েছিল তা বাস্তবায়ন হোক। কিন্তু কাজেমি সরকার এখনই এ প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিরোধী। তাই সন্ত্রাসীরা হামলা অব্যাহত রেখে মার্কিন সেনা উপস্থিতির প্রয়োজনীয়তা প্রমাণের চেষ্টা করছে যাতে সরকারের ওপর চাপ কমে।
যাইহোক আইএস জঙ্গিরা যে তৎপরতা শুরু করেছে তাতে কেবল যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল ও এ অঞ্চলে তাদের মিত্র কয়েকটি আরব দেশই লাভবান হবে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। #
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/৬