শ্রোতাদের মতামত
হযরত ঈসা (আ.)’র জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্পর্কে ৩ শ্রোতার অভিমত
২৫ ডিসেম্বর হচ্ছে হযরত ঈসা (আ.)-এর পবিত্র জন্মদিন। তাঁর শুভ জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল রেডিও তেহরান একটি বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করেছে। অনুষ্ঠানটি সম্পর্কে মতামত জানিয়েছেন বাংলাদেশ ও ভারতের তিনজন শ্রোতা। তাদের মতামত এখানে তুলে ধরা হলো:
প্রিয় মহোদয়,
আসসালামু আলাইকুম। আমার প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানবেন। রেডিও তেহরানের বাংলা বিভাগ থেকে আজকের (২৪/১২/২০২১, শুক্রবার) প্রচারিত অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর্পন আমাদের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। হযরত ঈসা (আ.)-এর শুভ জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রচারিত আজকের এই অনুষ্ঠানটি আমাদেরকে আল-কুরআনের আলোকে বিবি মরিয়ম ও হযরত ঈসা (আ.) সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দিয়েছে। চমৎকার এই অনুষ্ঠানটির জন্য রেডিও তেহরানকে ধন্যবাদ জানাই।
অনুষ্ঠান থেকে আমরা জানতে পারি যে, ২৫ ডিসেম্বর হযরত ঈসা (আ.)-এর শুভ জন্মদিন। পবিত্র কুরআনে তাঁকে রুহুল্লাহ্ নামে উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁর শুভ জন্মদিনে আপনাদের মত আমরাও সকল মুসলমানদেরকে শুভ কামনা জানাই।
বিবি মরিয়মের অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন হযরত জাকারিয়া (আ.)। তিনি যখনই বিবি মরিয়মের কক্ষে যেতেন, তখনই তাঁর কক্ষে বেহেশতি খাবার দেখতে পেতেন। উক্ত বিবি মরিয়মের গর্ভেই জন্ম নেন হযরত ঈসা (আ.)। তবে যেহেতু হযরত ঈসা (আ.) এর কোনো পিতা ছিলেন না, সেহেতু তাঁর মায়ের প্রতি অনেকে সন্দেহ পোষণ করতেন। সেজন্য মহান আল্লাহ জন্মের পরই হযরত ঈসা (আ.)-কে কথা বলার অলৌকিক শক্তি দান করেন।
অতঃপর আজকের অনুষ্ঠানে বিবি মরিয়মের জীবনের কিছু ঘটনা, হযরত ঈসা (আ.) এর জন্ম ও জীবন সম্পর্কে আলোচনা করা হল। পবিত্র কুরআনের আলোকে এসব বিবরণ শুনতে শুনতে হৃদয় আবেগে ভরে গিয়েছে। আল্লাহর ক্ষমতা ও সৌন্দর্য প্রকাশের অভিনব পদ্ধতি আমাদেরকে মুগ্ধ করেছে, তাঁর প্রতি আরো অধিক অনুগত হতে উদ্বুদ্ধ করেছে।
মহান আল্লাহ হযরত ঈসা (আ.)-কে অনেক অলৌকিক ক্ষমতা দিয়েছিলেন। সেসব বিবরণ শুনতে শুনতে ইসলামের প্রতি আমাদের ভালোবাসা আরো বেড়ে গেল। এমন সুন্দর একটি অনুষ্ঠান উপহার দেয়ায় রেডিও তেহরান বাংলা বিভাগকে আবারো অনেক অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
ধন্যবাদান্তে,
মোঃ শাহাদত হোসেন
সহকারী অধ্যাপক, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ
গুরুদয়াল সরকারি কলেজ
কিশোরগঞ্জ- ২৩০০, বাংলাদেশ।
জনাব,
সালাম নেবেন। হজরত ঈসা আলাইহিস সালাম-এর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রেডিও তেহরানের দর্পন অনুষ্ঠানে তাঁর সম্পর্কে প্রচলিত খ্রিষ্ট্রীয় ধ্যান-ধারণার বিপরীতেপবিত্র কুরআনপাকের দৃষ্টিভঙ্গি সত্যিই অভিভূত ও ধন্য হবার পাশাপাশি অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরে বেশ ভালো লাগল।
আমরা জানি যে, আল্লাহ তায়ালার অসীম কুদরতে হজরত আদম (আ.)-কে আল্লাহতায়ালা যেমন পিতা-মাতা ছাড়াই সৃষ্টি করেছেন, ঠিক তেমনি হজরত ঈসা ইবনে মারিয়াম (আ.)-কেও তাঁর অসীম কুদরতে পিতা ছাড়াই জন্ম দিয়েছেন। যাকে সহৃদয় ও প্রশান্তির নবী বলে জানা যায়। এখানে উল্লেখ্য যে, খ্রিষ্টান ধর্মের লোকেরা ঈসাকে যেমন আল্লাহর পুত্র বলে মানে ও তাকে ক্রুশ বিদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে মানে। আমরা ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা তা মানি না। পবিত্র কুরআনপাকে হজরত ঈসা (আ.) সম্পর্কে যা বর্ণিত হয়েছে তা আমরা মেনে চলি ও বিশ্বাস করি।
পবিত্র কুরআনে সুরা মারিয়াম এর ১৬ থেকে ১৯ আয়াত পর্যন্ত এ বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। হজরত মারিয়াম (সা.), জাকারিয়া (আ.)-এর তত্ত্বাবধানে থাকা অবস্থায় বেহেশতি ফল ভক্ষণ, পবিত্র দূত কর্তৃক পুত্র সন্তানের সুসংবাদ প্রদান, মারিয়াম গর্ভবতী হওয়া, পুত্র সন্তান প্রসব, শুকনো খুরমা গাছে আহারের ব্যবস্থা, পানির ঝর্ণা ধারা প্রবাহিত ইত্যাদি অনেক কুদরত আল্লাহতায়ালা মারিয়ামকে আল্লাহ দেখিয়েছেন।
অবিবাহিত গুণবতী ও খোদাভীরু মারিয়াম পুত্রসন্তান প্রসব করলে সমাজপতি ও ধর্মপতিদের রোষানলে পড়লেন এবং তারা মারিয়াম (আ.)-এর চরিত্র সম্পর্কে নানা প্রশ্ন উত্থাপন করে তাকে মানসিক নির্যাতন চালাতে লাগল। সে সময় আল্লাহ তাঁর পবিত্রতা সম্পর্কে শিশু ঈসার (আ.)-এর দ্বারা বিধর্মীদেরকে জবাব প্রদান করে তাদের মুখ বন্ধ করে দেন।
হজরত ঈসাকে আল্লাহ অনেক অলৌকিক ক্ষমতা দান করে ছিলেন। যেমন মাটি দিয়ে পাখি তৈরি, অন্ধলোককে চক্ষু দান, রোগগ্রস্তকে শেফা দানসহ আর অনেক মোজেজা তিনি দেখিয়েছেন।
হজরত ঈসা আলাইহিস সালাম ৩০ বছর কাল বনী ইসরাইলদের মাঝে ইসলাম প্রচার করেছেন। তখন তাদের ঘোর বিরোধিতা ও জীবনে মারার ষড়যন্ত্র করলে আল্লাহ তাকে চতুর্থ আসমানে উঠিয়ে নেন। আবারও তিনি হজরত ইমাম মাহদী (আ.)-এর আবির্ভাবের সময় পৃথিবীতে এসে মানুষকে মহান আল্লাহ এবং একেশ্বরবাদের পক্ষে আহ্বান করবেন।
হজরত ঈসা (আ.)-এর শুভ জন্ম বার্ষিকীতে তাঁর প্রতি অনেক সালাম ও জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। সেই সাথে সুন্দর অনুভবের অসাধারণ একটি অনুষ্ঠান উপহার দেবার জন্য রেডিও তেহরানকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে শেষ করছি।
ধন্যবাদান্তে,
আব্দুস সালাম সিদ্দিক
সভাপতি, সকাল-সন্ধ্যা রেডিও লিসেনার্স ক্লাব
কান্দুলিয়া, বড়পেটা, আসাম, ভারত।
মহাশয়,
গত ২৪ ডিসেম্বর দর্পন অনুষ্ঠানে হযরত ঈসার শুভ জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ পরিবেশনাটি শুনে আমার এই পত্রের অবতারণা।
ঈসা ইবনে মার ইয়াস ইসলাম ধর্মে একজন অদ্বিতীয় ও গুরুত্বপূর্ণ নবী ও রাসূল হিসাবে স্বীকৃত। ইসলাম ধর্মে ঈসাকে মাসীহ্ উপাধি দেওয়া হয়েছে যার অর্থ অভিষিক্ত।
২৫ ডিসেম্বর হচ্ছে হযরত ঈসা (আ.) এর পবিত্র জন্মদিন। শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর প্রায় সাড়ে ৫০০ বছর আগে পৃথিবীর বুকে আগমন করেছিলেন হযরত ঈসা (আ.)। হযরত ঈসা একদিকে ছিলেন মানবপ্রেম অন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার পথে অগ্রগামী অন্যদিকে ছিলেন জুলুম বৈষম্য ও অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অনুকরণীয় আদর্শ।
আল্লাহপাক মানবজাতিকে একত্ববাদের দিকে আহ্বান করার জন্য যুগে যুগে অসংখ্য নবী রাসুল পাঠিয়েছেন। নবী-রাসূলগণ আল্লাহর প্রতি মানুষের সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য একত্ববাদের কথা বলতে গিয়ে নানা ধরনের বাধা বিপত্তি ভয়-ভীতি জুলুম নির্যাতন ও জানমালের ক্ষতির শিকার হয়েছেন। হযরত ঈসাও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছিলেন না।
ইসলামের আদর্শ ও বিশ্বাস অনুযায়ী ঈসা (আ.) বেঁচে আছেন এবং শেষ জামানায় হযরত মাহদী (আ.) যখন আবির্ভূত হবেন তখন তার ও আগমন ঘটবে। শুধু তাই নয়, তিনি ইমাম মাহদীর ইমামতিতে নামাজ পড়বেন এবং বিশ্বব্যাপী শান্তি ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তাকে সহযোগিতা করবেন।
বর্তমান বিশ্বে অন্যায় অবিচার জুলুম নির্যাতন সহিংসতা বর্ণবৈষম্য মানুষে মানুষে ভেদাভেদ এমন এক অবস্থা এসে পৌঁছেছে যে, এখন সময় এসেছে ধর্মের প্রকৃত বাস্তবতা উপলব্ধি করার। আজ ঈসা (আ.) বা যিশুখ্রিস্টের বিশ্বাসীদের উচিত ফিলিস্তিন, ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন, বাহরাইন, আফগানিস্তানসহ বিশ্বের সব নির্যাতিত জনপদে শান্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা। তাহলেই ঈসা (আ.)-এর জন্মদিন বা বড়দিন পালন সার্থক হবে।
ধন্যবাদান্তে
বিধান চন্দ্র সান্যাল
ঢাকা কলোনী, বালুরঘাট
দক্ষিণ দিনাজপুর, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/২৫
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।