দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা
আফগানিস্তানকে সহযোগিতার ওপর জাতিসংঘ মহাসচিবের গুরুত্বারোপ
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস বলেছেন, আফগানিস্তানে মানবিক সাহায্য কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং আফগান অভিবাসীদের জন্য প্রায় ৫০০ কোটি ডলারের প্রয়োজন। এ ছাড়া আগামী শীত মৌসুমেও আফগান জনগণের জন্য ১২০ কোটি ডলার সাহায্যের দরকার রয়েছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, খাদ্য, কৃষিকাজ, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবা, সুপেয় পানি ও শিক্ষা খাতে আফগান জনগণের ব্যাপক সাহায্য জরুরি হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, গত বছর জাতিসংঘ ও তার সহযোগী দুর্যোগ ও ত্রাণ বিষয়ক সংস্থাগুলো এক কোটি ৮০ লাখ ডরার আফগানিস্তানকে সাহায্য দিয়েছে যা ছিল এর আগের বছরে দেয়া সাহায্যের চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি। মোট কথা যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তানের জনগণের অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ায় তাদেরকে সাহায্যের জাতিসংঘ মহাসচিব প্রায়ই অর্থ সাহায্যের কথা বলে থাকেন।
প্রকৃতপক্ষে, তালেবান গত বছর আগস্টে কাবুলের ক্ষমতা নেয়ার পর থেকে দেশটির অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে চরম বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। বিশেষ করে আমেরিকা কোটি কোটি ডলার অর্থ আটকে দেয়ায় আফগানিস্তানে মুদ্রাস্ফিতি ও বেকারত্ব বহুগুণে বেড়েছে। মার্কিন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে বিদেশ থেকে কোনো অর্থ সাহায্য সেদেশে পাঠানো যাচ্ছে না। ফলে মানবিক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, আফগানিস্তানের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি অর্থাৎ প্রায় দুই কোটি ২০ লাখ মানুষ চরম ক্ষুধার সম্মুখীন। এ ছাড়া প্রতিবেশী পাঁচটি দেশে আশ্রয় নেয়া ৫৭ লাখ মানুষের জন্য জরুরি সাহায্যের প্রয়োজন। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল আইএমএফ সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, আফগানিস্তানে অর্থনৈতিক বিপর্যয় শরণার্থীদের ওপর ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
গত আগস্টে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর মার্কিন সরকার বিদেশে থাকা আফগানিস্তানের ৯৫০ কোটি ডলার আটকে দেয়। কেননা আমেরিকাসহ বিশ্বের কোনো দেশই এখন পর্যন্ত তালেবানকে স্বীকৃতি দেয়নি। তালেবান এখনো আমেরিকার সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তালিকায় থাকায় তাদের ব্যাংক খাতে নিষেধাজ্ঞা বলবত রয়েছে। কিন্তু এতে করে কেবল আফগান জনগণের জন্য দুর্ভোগ তৈরি হয়েছে। ফলে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য দেশ চীন ও রাশিয়া আফগানিস্তানের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের এ আচরণের তীব্র সমালোচনা করেছে।
ব্যাপক সমালোচনার মুখে মার্কিন সরকার এবং নিরাপত্তা পরিষদে পাশ্চাত্যের অন্য সদস্য দেশ গত ২২ ডিসেম্বর আফগানিস্তানে অর্থ সাহায্য পাঠানোর প্রক্রিয়াকে সহজ করার প্রস্তাবের প্রতি ইতিবাচক রায় দেয়। এ প্রস্তাব পাশ পাওয়ায় আফগানিস্তানে মানবিক ত্রাণ সাহায্য পাঠানো সহজ হলেও এসব সাহায্য তালেবানের হাতে পৌঁছে দেয়ার বিষয়ে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়।
বর্তমানে আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক ও জনসেবা খাতে ভয়াবহ বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে খাদ্য সংকট দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দিচ্ছে যুদ্ধবিধ্বস্ত এ দেশটিকে। ইরানের আফগানিস্তান বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ফেরেইদুন অযান্দ বলেছেন, আফগানিস্তানে যুদ্ধের অবসান ঘটলেও সাধারণ মানুষের দুর্দশার অবসান ঘটেনি। তাই যুদ্ধে না যতটা প্রাণহানি ঘটেছে তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হতে পারে ক্ষুধা ও দারিদ্রের কারণে। #
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।