দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে আফগান জনগণ: মেনে নিতে নারাজ তালেবান কর্তৃপক্ষ
(last modified Thu, 03 Feb 2022 11:15:01 GMT )
ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০২২ ১৭:১৫ Asia/Dhaka

আফগানিস্তানের তালেবান সরকার সেদেশের জনগণের দুর্দশার ব্যাপারে প্রকাশিত বিভিন্ন খবরাখবর প্রত্যাখ্যান করে আসছে। বিশেষ করে তারা ক্ষমতা দখলের পর সেদেশে সামাজিক অবস্থার বিষয়ে কথা বলতে তারা নারাজ।

আফগানিস্তানে শীত মৌসুম শুরু হওয়ার পর সেদেশের উন্নয়ন কার্যক্রম অনেকটাই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ডলারের বিপরীতে আফগানিস্তানের টাকার মান পড়ে যাওয়ায়, আমেরিকা বিদেশে থাকা আফগানিস্তানের অর্থ আটকে দেয়ায় এবং আফগানিস্তানের সরকারী কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ না হওয়ায় সেদেশে মারাত্মক অর্থনৈতিক মন্দা চলছে এবং জিনিসপত্রের মূল্য বহুগণে বেড়ে যাওয়ায় জনগণ চরম বিপাকে পড়েছে।

তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা নেয়ার পর সেদেশে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসান ঘটেছে এবং তুলনামূলক নিরাপত্তা বিরাজ করছে। কিন্তু অর্থনৈতিক সংকট এমন চরম আকার ধারণ করেছে যে জনগণের নাভিশ্বাস উঠে গেছে এবং এমনকি রাজধানীর জনগণও সাধারণ রুটির ব্যবস্থা করতেও হিমশিম খাচ্ছে। যদিও আফগানিস্তানের জনগণের পরিস্থিতির ব্যাপারে পাশ্চাত্যের কোনো কোনো খবরের সঙ্গে তালেবানের দৃষ্টিভঙ্গির মতভিন্নতা রয়েছে বা তারা অস্বীকার করে কিন্তু বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির নির্বাহী প্রধান ডেভিড বিয়েসলের বক্তব্যকে তালেবান উপেক্ষা করতে পারে না। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির নির্বাহী প্রধান বলেছেন, আফগানিস্তানের দুই কোটি ৩০ লাখ মানুষের খাদ্যের প্রয়োজন রয়েছে এবং তারা দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে। এ ছাড়া, আরো ৮৭ লাখ আফগান এরই মধ্যে দুর্ভিক্ষের কবলে পড়েছে। এই পরিস্থিতির অর্থ হচ্ছে তালেবান যদি ক্ষমতায় থাকতে চায় তাহলে তাদেরকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক সমাজের দাবি অনুযায়ী সব দল ও গোত্রকে নিয়ে অংশগ্রহণমূলক সরকার গঠনের বিষয়টি মেনে নিতে হবে। গত দুই দশকের তুলনায় বর্তমানে সেদেশে যে চরম দুরবস্থা তৈরি হয়েছে সেটা তালেবানকে অবশ্যই মেনে নিতে হবে।

তালেবান বহু প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়ে নারীসহ বহু কর্মীকে বেকার বানিয়েছে। এ ছাড়া গত দুই দশকে আফগানিস্তানে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পালা বদলের অভিজ্ঞতাও তাদের সামনে রয়েছে। তারপরও তারা আফগানিস্তানের বুদ্ধিজীবী  শ্রেণীকেও তালেবান শাসন মেনে নিতে তারা বাধ্য করার চেষ্টা করছে। আফগানিস্তান বিষয়ক ইরানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক পির মোহাম্মদ মোল্লাযেহি মনে করেন, গত দুই দশকের তুলনায় আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি স্বীকার করে নেয়া ছাড়া তালেবানের সামনে অন্য কোনো পথ খোলা নেই। তাহলেই কেবল তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে বিরাজমান সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারবে।

যদিও প্রতিবেশী অনেক দেশ আফগান জনগণের জন্য খাদ্য ও ওষুধ পাঠাচ্ছে কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় এ সাহায্য অনেক কম। বিশেষ করে ওষুধের স্বল্পতা আফগান জনগণের জীবনকে দুর্বিসহ করে তুলেছে। এ অবস্থায় জনগণের সমস্যা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া তালেবানের উচিত হবে না এবং বাস্তবতা মেনে নিয়ে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।

যাইহোক, তালেবান ফের ক্ষমতায় আসার পর বিদেশিদের হস্তক্ষেপ ছাড়াই দেশ পুনর্গঠনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। কিন্তু এর অর্থ এ নয় যে অন্য রাজনৈতিক দল, সংগঠন কিংবা ধর্মীয় মতাদর্শের অনুসারীদের উপেক্ষা করে তারা দেশ চালাবে। বরং সবাইকে নিয়ে জাতীয় ঐকমত্যের সরকার গঠন করলেই কেবল তারা জনগণের জীবন মান উন্নত করার পাশাপাশি নিজস্ব কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকেও রক্ষা করতে পারবে।#   

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। 

ট্যাগ