রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সহিংসতা গণহত্যার শামিল: আমেরিকা
মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর যে দমন-নিপীড়ন চলেছে অবশেষে সেটাকে গণহত্যার স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে আমেরিকা। দেশটির ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বাইডেন প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তের কথা ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন। তবে এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে যেহেতু আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি তাই নিজের নাম প্রকাশ করতে চাননি ওই কর্মকর্তা।
ওই মার্কিন কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর চালানো সহিংসতা গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল বলে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে আমেরিকা।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন স্থানীয় সময় আজ (সোমবার) ওয়াশিংটনের হলোকাস্ট মেমোরিয়াল মিউজিয়াম পরিদর্শন করবেন। এ সময় তিনি রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সহিংসতাকে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বলে যে সিদ্ধান্তে বাইডেন প্রশাসন উপনীত হয়েছে, তা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করবেন। বাইডেন প্রশাসনের আগে ট্রাম্প প্রশাসনের ওপরও এ ঘোষণা দেওয়ার জন্য চাপ দিয়েছিল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
রোববার এক বিবৃতিতে ডেমোক্র্যাটিক দলের সিনেটর ও সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির সদস্য জেফ মার্কলে বলেছেন, 'অবশেষে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত সহিংস ঘটনাগুলোকে গণহত্যা হিসেবে অভিহিত করায় আমি বাইডেন প্রশাসনকে সাধুবাদ জানাই। যদিও এ ঘোষণা আরও অনেক আগেই আসা উচিত ছিল, তবুও এটি এ নির্দয় শাসকগোষ্ঠীকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার পথে একটি শক্তিশালী ও গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে নেতৃত্বের ভার নিতে হবে এবং সারা বিশ্বের কাছে এ বিষয়টি পরিষ্কার করতে হবে যে, এ ধরনের নৃশংসতার ঘটনা পৃথিবীর যেখানেই ঘটুক না কেনো, কখনোই তা ধামাচাপা দেওয়া যাবে না।'
দ্য হেগে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে। ২০১৯ সালে গাম্বিয়া নিয়ে আসা মামলায় আইসিজে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা গণহত্যা রোধে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে। ১৭ জন বিচারকের একটি প্যানেল সর্বসম্মতিক্রমে শাসিত আদেশে আদালত ১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশনের বিধানকে বহাল রেখেছে- মিয়ানমার 'রোহিঙ্গাদের অধিকারের অপূরণীয় ক্ষতি সাধন করেছে' বলে জানিয়েছে। এখানে আন্তর্জাতিক আদালত মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা মুসলিমদের রক্ষা এবং গণহত্যার সব ক্রিয়া রোধ করার নির্দেশ দিয়েছে। জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত স্টেট কাউন্সেলর অং সান সুকির যুক্তিতর্ক প্রত্যাখ্যান করেছে। এতে বলা হয়েছে, মিয়ানমারকে অবশ্যই ১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশন মেনে চলতে হবে। আইসিজের আদেশ অস্থায়ী, তবে মিয়ানমারের সরকারকে রোহিঙ্গাদের রক্ষার জন্য জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয় এবং মামলা চলমান থাকাকালীন এবং গণহত্যার অভিযোগের সঙ্গে সম্পর্কিত যে কোনো প্রমাণ সংরক্ষণ করতে পারে।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নৃশংস হামলা থেকে প্রাণে বাঁচতে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এর আগে অন্তত লাখ চারেক রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছিল। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে বাংলাদেশে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযানে গণধর্ষণ, হত্যা, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।#
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/২১
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।