আমেরিকার জন্য কড়া বার্তা
তাইওয়ানের চারপাশে মহড়া শেষ, তবে যুদ্ধ জাহাজ সরানো হবে না: চীন
চীন তাইওয়ান দ্বীপ অবরোধের অনুশীলনের জন্য ওই এলাকায় বিশাল নৌ মহড়া সমাপ্তির ঘোষণা দিয়েছে। তবে, চীনা টেলিভিশন জানিয়েছে মহড়া শেষ হলেও যুদ্ধের জন্য সামরিক সরঞ্জামের কার্যকারিতা পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্য এবং দ্বীপের আশেপাশের অবস্থান বোঝার জন্য সেখানে বেশ কয়েকটি যুদ্ধ জাহাজ মোতায়েন থাকবে।
দক্ষিণ চীন সাগরে আমেরিকা ও ফিলিপাইনের যৌথ সামরিক মহড়া শুরুর পর চীনের এ পদক্ষেপ থেকে বোঝা যায় বেইজিং ওই অঞ্চলে আমেরিকার মোকাবেলায় নিজের সামরিক শক্তি প্রদর্শনী অব্যাহত রাখতে চায়। চীন তাইওয়ানকে তাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে মনে করে এবং তাইওয়ান নিয়ে মার্কিন ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বহুবার ওয়াশিংটনকে সতর্ক করে দিয়েছে। কিন্তু তারপরও আমেরিকা তাইওয়ানের স্বাধীনতা আন্দোলনকে সমর্থন করছে এবং চীনের চারপাশে তার মিত্রদের সাথে করে সামরিক অনুশীলন করে চীনের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। ইরানের আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশ্লেষক আবুল ফজল জোহরেবান্দ এ ব্যাপারে বলেছেন, 'আমেরিকা চীনকে শুধু যে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে তাই নয় একই সাথে বিশ্বে চীনের ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারেও ওয়াশিংটন উদ্বিগ্ন এবং এটাকে সবচেয়ে বড় হুমকি বলে মনে করছে। এ কারণে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের সাথে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরুর পাশাপাশি তাইওয়ানের স্বাধীনতাকামীদেরকে সব রকমের সমর্থন দিয়েছেন যাতে চীন অভ্যন্তরীণ গোলযোগে ব্যস্ত থাকে'।
এ অবস্থায় চীন তাইওয়ানের চারদিকে নিজের সামরিক উপস্থিতি জোরদার করে এটা বুঝিয়ে দিয়েছে যে, কোনো অবস্থাতেই পাশ্চাত্য বিশেষ করে আমেরিকাকে তাইওয়ানের ব্যাপারে চীনের রেডলাইন অতিক্রমের সুযোগ দেয়া হবে না।
তাইওয়ানকে অবরোধের অনুকরণে চীনা সেনাবাহিনীর সাম্প্রতিক অনুশীলন এবং টহল মিশন চালানোর জন্য এই দ্বীপের চারপাশে চীনা যুদ্ধজাহাজের অব্যাহত উপস্থিতির মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এই বার্তা দেয়া হয়েছে যে চীন কোনোভাবেই তার নীতির সাথে আপোশ করবে না এবং ফিলিপাইনসহ অন্য মিত্রদের সাথে মার্কিন সামরিক মহড়া চীনকে ভীত করতে পারবে না। এমনকি আমেরিকার এসব মহড়া তাইওয়ানের স্বাধীনতাকামীদেরকেও উজ্জিবীত করতে পারবেনা। সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার তাইওয়ানের ব্যাপারে চীনের ধৈর্যের বাধ ভেঙে যেতে পারে বলে বহুবার সতর্ক করে দিয়েছেন। কেননা চীন এটা দেখিয়ে দিয়েছে যে তাইওয়ান ইস্যুতে চীন বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে প্রস্তুত নয়। এ অবস্থায় ওই অঞ্চলে মার্কিন কর্মকাণ্ড অপ্রত্যাশিত পরণিত ডেকে আনতে পারে।
এদিকে, আমেরিকার সাথে ফিলিপাইনের চলমান সামরিক মহড়ার বিরুদ্ধে রাজধানী ম্যানিলার জনগণ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। এ থেকে বোঝা যায় ওই অঞ্চলের জনমত আমেরিকার অনুকূলে নয় এবং তারা ওয়াশিংটনের সাথে অতিমাত্রায় সংখ্যতার পরিণতির ব্যাপারে আতঙ্কিত।
এ অবস্থায় পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ওই অঞ্চলে মার্কিন মিত্রদের এটা বোঝা উচিত যে, তাইওয়ান প্রণালীতে যেকোনো উত্তেজনা ও সামরিক সংঘাত এবং সম্ভাব্য যুদ্ধে সেখানে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটি ব্যবহারের ফলে চীন যে পাল্টা প্রতিশোধ নেবে তাতে ওই অঞ্চলের দেশগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশেষ করে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া অনেক বড় পণ্য রপ্তানিকারক দেশ। যেকোনো সংঘাতে এ দুটি দেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সে কারণে চীনের হুমকিকে ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই এবং এ দেশগুলো যদি মনে করে থাকে আমেরিকার নিরাপত্তার চাদরে তারা ঢেকে থাকবে তাহলেও বড় ভুল করবে।#
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১২
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।