ইরানবিরোধী সন্ত্রাসীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন, তবে কি ভুল শোধরাচ্ছে ইউরোপ?
ইউরোপীয় দেশগুলো ইরানের ইসলামি বিপ্লবের বিজয়ের শুরু থেকেই বিভিন্ন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ইরানবিরোধী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয় ও প্রশ্রয় দিয়ে আসছে। কিন্তু তারা সম্প্রতি এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে যার কারণে এই গোষ্ঠীর প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।
মোনাফেকিন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষ করে ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রকাশ্য ও গোপন সমর্থন এবং আলবেনিয়ায় এই গোষ্ঠীকে আশ্রয় দেওয়া সত্ত্বেও এখন এসব দেশের সঙ্গে এ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর টানাপড়েন চলছে।
আলবেনিয়ার দুরেস শহরে সন্ত্রাসী মুনাফিকিন গোষ্ঠী এমকেও'র ঘাঁটিতে গতকাল (মঙ্গলবার) হামলা চালিয়েছে সেদেশের পুলিশ। সন্ত্রাসবাদ ও অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ৭০ জনের বেশি সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয় । আলবেনিয়ার পুলিশের উপর সশস্ত্র হামলার কারণে একজন সন্ত্রাসীও নিহত হয়েছে। আলবেনিয়ার পুলিশের প্রধান বলেছেন, মোনাফেকিন এই গোষ্ঠীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে তার দেশের ১৫ পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন।
আলবেনিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ও এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ঘাঁটিতে পুলিশের অভিযান দেশের আইন এবং সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়েছে। ২০১৪ সালে সরকার এবং এ গোষ্ঠীর মধ্যে চুক্তি অনুসারে কেবল মানবিক কারণে আলবানিয়ায় উদ্বাস্তু হিসেবে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা বিভিন্ন সন্ত্রাসী হামলা ও সাইবার কর্মকাণ্ড চালিয়ে এই চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। বিবৃতিত আরো বলা হয়েছে, আলবেনিয়ান পুলিশ বাহিনী মঙ্গলবার সকাল থেকে এক ঘন্টার জন্য মোনাফেকিন গোষ্ঠী ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং তাদের অফিসে অভিযান চালায়। এ সময় ঘাঁটি থেকে কম্পিউটার, মোবাইল ফোনসহ বেশ কয়েকটি ড্রোন এবং অপ্রচলিত ইলেকট্রনিক ডিভাইস জব্দ করা হয়। অভিযানের সময় নিরাপত্তা বাহিনী সন্ত্রাসীদের ব্যাপক প্রতিরোধ ও হামলার সম্মুখীন হয়। দুরেস শহরে মুনাফেকিন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ঘাঁটিতে হামলার পর আলবেনিয়ার কর্তৃপক্ষ এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেছ।
মুনাফেকিন গোষ্ঠী আলবেনিয়া থেকে তাদের সংগঠনের মাধ্যমে ইরানের জনগণ ও সরকারের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি এবং নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। বর্তমানে মোনাফেকিন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সাড়ে তিন হাজার সদস্য আলবেনিয়ায় আশ্রয় নিয়েছে। দেশটিতে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর এই বিশাল সদস্যদের উপস্থিতি অবশ্যই এই দেশের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করেছে। মনে করা হচ্ছে যে আলবেনিয়ার সরকার এটা উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছে যে মোনাফেকিন গোষ্ঠীর উপস্থিতি কেবল আলবেনিয়ার জাতীয় স্বার্থের জন্যই বিপজ্জনক নয় বরং এটি সমগ্র অঞ্চলের জন্য বিপদজনক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। আলবেনিয়ায় এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্যদের আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়ার আরেকটি বিপদ হল সন্ত্রাসী, মাফিয়া, তাকফিরি ও ওহাবি গোষ্ঠীর সাথে তাদের মাখামাখি এবং সহযোগিতা।
অবশ্য মোনাফেকিনদের ব্যাপারে ইউরোপীয় দেশগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি এবং আচরণের পরিবর্তন কেবল আলবেনিয়ার জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেনি এখন মনে হচ্ছে দীর্ঘকাল ধরে মোনাফেকিনদের সমর্থক ফ্রান্সও এই গোষ্ঠীর ব্যাপারে অবস্থান পরিবর্তন করেছে। এ বিষয়ে উল্লেখ করা যেতে পারে ফ্রান্স সরকার এ গোষ্ঠীর বার্ষিক সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে এবং এই সমাবেশের নেতাদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে ভিলেপিন্টে সমাবেশ বাতিল করেছে। ফরাসি পুলিশ জানিয়েছে, নিরাপত্তাজনিত সমস্যা এবং জনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হওয়ার কারণে সমাবেশটি বাতিল করা হয়েছে। মুনাফিকদের বার্ষিক সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার ঘটনা গত ১৫ বছরের মধ্যে এটাই প্রথম।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞাকে ইরানের সাথে উত্তেজনা কমাতে পশ্চিমা দেশগুলো প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছে। ইউরোপীয় দেশগুলো এবং ইরানের মধ্যে বন্দী বিনিময়ের কয়েক সপ্তাহ পরে এবং দুই সপ্তাহ আগে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়ের ম্যাকরনের সঙ্গে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির সঙ্গে ৯০ মিনিটের ফোনালাপের পর এই নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করা হয়। টেলিফোনালাপে প্রেসিডেন্ট রায়িসি ইরানী জাতি সম্পর্কে কিছু ইউরোপীয় সরকারের ভুল হিসাব নিকাশের কথা উল্লেখ করে বলেন, এর কারণ হচ্ছে এসব দেশ সন্ত্রাসী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং শত্রুদের মিথ্যা তথ্যের ফাঁদে পড়েছে। তাই অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার এবং জাতীয় সার্বভৌমত্বের নীতিকে সম্মান করার উপর জোর দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট রায়িসি।#
পার্সটুডে/এমবিএ/২২
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।