পাকিস্তানে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার নেপথ্যে
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি এবং প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ দেশটিতে মাওলানা ফজলুর রেহমানের জমিয়তে উলেমায়ে ইসলাম ফজল বা (জেইউআইএফ)'র কর্মী সম্মেলনে আত্মঘাতী বোমা হামলার নিন্দা জানিয়েছেন।
পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বাজাউর শহরে জমিয়তে উলেমায়ের সভায় গত রোববার সন্ধ্যায় সংঘটিত বোমা বিস্ফোরণে ৫০ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি ১৫০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ বর্বরোচিত সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, সন্ত্রাসীরা ইসলামের চেহারা বিকৃত করার জন্য যারা ইসলাম এবং কুরআন নিয়ে কথা বলে তাদের টার্গেট করে।
এদিকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রায়িসি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দেশটির সরকার ও জনগণের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন। ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট এক শোকবার্তায় বলেছেন, “আমরা বিশ্বাস করি এ ধরনের অমানবিক অপরাধযজ্ঞের ফলে হামলার হোতারাই শুধু অপমানিত হবে; এছাড়া আর কোনো ফল বয়ে আসবে না।”
গত দুই বছর আগে যখন তালেবান গোষ্ঠী আফগানিস্তানে ক্ষমতায় আসে তখন এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি উত্থাপিত হয়েছে যে পাকিস্তানে নিরাপত্তাহীনতা এবং রক্তক্ষয়ী সহিংসতা তীব্র হওয়ার পেছনে আফগানিস্তানের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিবর্তনের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক আছে কিনা? আফগানিস্তানে তেহরিকে তালেবান পাকিস্তান বা টিটিপি'র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর উপস্থিতি সম্পর্কে পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও সামরিক কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক বিবৃতি এবং অবস্থান থেকে বোঝা যায় যে এই প্রশ্নের উত্তর ইতিবাচক এবং ইসলামাবাদের কর্তৃপক্ষ এখনও আফগানিস্তানে থাকা তেহরিকে তালেবানের সন্ত্রাসীরা পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী হামলার উৎস বলে মনে করে। যেহেতু কোনো গোষ্ঠী এখন পর্যন্ত এই ভয়াবহ হামলার দায় স্বীকার করেনি তাই এটিকে পাকিস্তানের একটি জটিল সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। একই সময়ে আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ পাকিস্তানে সন্ত্রাসী বিস্ফোরণের নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, এ ধরনের অপরাধ কোনোভাবেই ন্যায়সঙ্গত হতে পারে না।
পাকিস্তান বিষয়ক বিশেষজ্ঞ "ফরজাদ আমিন" এ প্রসঙ্গে বলেছেন "উলামায়ে ইসলামের দলীয় সমাবেশে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনাকে হালকাভাবে দেখলে হবে না। কারণ বিপুল সংখ্যক মানুষের হতাহতের ঘটনা থেকে এটা দেখা যাচ্ছে যে এতে প্রচুর বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছিল যা অন্য স্থান থেকে আনা হয়েছে। তাই মাওলানা ফজলুর রহমানের নেতৃত্বাধীন কোনো ধর্মীয় দলের সমাবেশে বোমা হামলার ঘটনাকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। কারণ এর নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ।
পাকিস্তান ইস্যুতে বিশেষজ্ঞ সরোশ আমিরিও এ প্রসঙ্গে বলেছেন, পাকিস্তানে ভয়ানক সন্ত্রাসী হামলার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে তবে এগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থার প্রভাব ও ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করা।" পাকিস্তানের কোয়ালিশন সরকারে মাওলানা ফজলুর রহমানের দলের উপস্থিতির বিবেচনায় এই বিষয়টিও তাৎপর্যপূর্ণ যে এই হামলা পাকিস্তান সরকারের জন্য একটি বড় আঘাত বলে মনে করা হচ্ছে। যাইহোক জামিয়াত উলেমা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ নেতা মাওলানা জিয়াউল্লাহ হাক্কানিকে হত্যা এবং সমাবেশে কয়েক ডজন লোকের নিহতের ঘটনায় নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার ক্ষমতা ও সক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।#
পার্সটুডে/এমবিএ/১
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।