নাইজার প্রশ্নে আগের অবস্থান থেকে পিছু হটলেন ম্যাকরন
আফ্রিকায় অবস্থান হারাচ্ছে ফ্রান্স; প্রভাব বাড়ছে রাশিয়া ও চীনের
ফরাসি সংবাদমাধ্যমগুলো আফ্রিকার দেশগুলোতে একের পর এক ঘটে-যাওয়া অভ্যুত্থানগুলোকে বড় ধরনের বিপ্লব বা বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা বলে উল্লেখ করছে।
এইসব সংবাদ মাধ্যম বলছে আফ্রিকার সাবেক উপনিবেশগুলো থেকে বিতাড়িত হয়েছে ফ্রান্স। ব্রিটেনের মত ফ্রান্সও তার ঔপনিবেশিক প্রভাব নিয়ে বড়াই করত! কিন্তু সম্প্রতি নাইজারের পর গ্যাবনেও সামরিক অভ্যুত্থান ঘটার পর এই দুটি দেশের ওপর মোড়লীপনা বা কর্তৃত্ব হারিয়েছে ফ্রান্স। এর আগে মালিতেও ফ্রান্সের অবস্থান নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। লক্ষণীয় বিষয় হল অভ্যুত্থান-কবলিত এই দেশগুলোর জনগণ অভ্যুত্থানের নায়কদের স্বাগত জানাচ্ছেন এবং সাবেক সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-সমাবেশ করছেন।
ফরাসি দৈনিক লা করিক্স লিখেছে, আফ্রিকায় ফ্রান্সের যে ঐতিহাসিক জোরালো অবস্থান ছিল তা নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। দৈনিক লা পয়েন লিখেছে, অভ্যুত্থানগুলোর মধ্য দিয়ে যে আফ্রিকায় বিশ্বায়ন ঘটেছে ফ্রান্স তা টের পায়নি বা বুঝতে পারেনি। ফরাসি ম্যাগাজিন ফিগারো আফ্রিকার সাম্প্রতিক এইসব অভ্যুত্থান ও ঘটনা-প্রবাহকে বাথটাবে ফরাসি কূটনীতিকদের ওপর নির্যাতনের সঙ্গে তুলনা করে এ সম্পর্কে লিখেছে, ২০২০ সাল থেকে এ পর্যন্ত পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকায় ৮টি সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে, কিন্তু ফরাসি কূটনীতিকরা পানি থেকে মাথা তোলার সাহস পাচ্ছেন না, কারণ প্রতিটি অভ্যুত্থান ঘটছে আগের চেয়েও বেশ তীব্রতা নিয়ে এবং প্রতিটি অভ্যুত্থান বিশ্বের ওপর পশ্চিমা আধিপত্য বা প্রভাব হ্রাসের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে! বিশেষ করে আফ্রিকা মহাদেশে ফরাসি আধিপত্যের বিরুদ্ধে গণ-বিক্ষোভ ও গণ-অসন্তোষ ক্রমেই বাড়ছে। গ্যাবনের ঘটনা-প্রবাহ ফ্রান্সের ওপর আরও একটি আঘাত হয়ে দেখা দিয়েছে এবং নাইজার ও গ্যাবনের অভ্যুত্থানের নায়কদের সঙ্গে দ্বিমুখী আচরণের সাফাই দিতে দিয়ে ফরাসি সরকার সমস্যার শিকার হবে বলে ওই সংবাদ মাধ্যমটি মন্তব্য করেছে।
ফরাসি দৈনিক লা করিক্সও উল্লেখ করেছে যে আফ্রিকায় ফ্রান্সের ঐতিহাসিক অবস্থান কেঁপে উঠেছে। গ্যাবনের নির্বাচনে কারচুপির কারণে আলী বঙ্গুর ওপর ক্ষেপে গিয়েই সেনাবাহিনী সেখানে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে বলে উল্লেখ করেছে দৈনিকটি।
কোনো কোনো ফরাসি বিশ্লেষক বলেছেন, আফ্রিকার ঘটনা-প্রবাহে এটা স্পষ্ট এই মহাদেশে আগের অবস্থান আর ফিরে পাবে না ফ্রান্স, অন্যদিকে এই মহাদেশে ক্রমেই বাড়ছে রাশিয়া ও চীনের প্রভাব। তাদের মতে আফ্রিকার পশ্চিম ও মধ্য অঞ্চলে পুলিশিপনা বা মোড়লীপনা আরও অনেক বছর আগেই বন্ধ করা উচিত ছিল ফ্রান্সের, ফলে এখন সেনা গুটিয়ে নেয়ার পরও অন্য দেশগুলোর তুলনায় ফরাসি কোম্পানিগুলোর বাণিজ্যও কমে যাবে আফ্রিকায়।
এদিকে নাইজারের সামরিক সরকার সেদেশে ফরাসি রাষ্ট্রদূত ও তার সহকর্মীদের কূটনৈতিক সুযোগ-সুবিধা বাতিল করেছে। ফরাসি সশস্ত্র বাহিনীগুলোর প্রধান বলেছেন, নাইজারের সঙ্গে ফ্রান্সের সম্পর্কে টানাপড়েন বা উত্তেজনা বাড়লে তাতে দেশটিতে ফ্রান্সের প্রভাব দুর্বল হয়ে পড়বে। এর আগে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাকরন নাইজারের সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন।#
পার্সটুডে/এমএএইচ/০২
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।