নভেম্বর ১৪, ২০২৩ ১২:২১ Asia/Dhaka
  • ফ্রান্সে ফিলিস্তিনের পক্ষে সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ
    ফ্রান্সে ফিলিস্তিনের পক্ষে সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ

ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে অপবাদ দিয়ে যাচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলোর পাশাপাশি কিছু গণমাধ্যম। কোনো কোনো মুসলিম দেশের সরকারও তাদের সঙ্গে সুর মেলাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, যারা নিজের মাতৃভূমিকে দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য লড়াই করে তারা কখনোই সন্ত্রাসী হতে পারে না, তারা মুক্তিকামী। এই লড়াই তাদের ন্যায্য অধিকার।

পশ্চিমা দেশগুলোর সরকার ফিলিস্তিনের হামাসকে সন্ত্রাসী হিসেবে অভিহিত করলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির বিরুদ্ধে যেসব ফরাসি, প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন তাদেরকে তারা বীর বলে মনে করে। এখানেও তাদের দ্বিমুখী আচরণ স্পষ্ট।     

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে যখন জার্মান বাহিনী ফ্রান্সের দখল নেয় তখন দেশটির মানুষের মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়। মার্শাল পিটেইনের নেতৃত্বে একটা অংশ দখলদার বাহিনীর সঙ্গে আপোষ করে এবং দখলদার বাহিনীর কৃপায় একটা পুতুল সরকারের নেতৃত্ব দিতে থাকে, যাদের কোনো ক্ষমতাই ছিল না। কিন্তু ফরাসিদের অন্য অংশ অপমান মেনে নেয়নি, তারা প্রতিরোধের পথেই এগোতে থাকে। এই প্রতিরোধে ফ্রান্সের হাজার হাজার নারী ও পুরুষ অংশ নেয়। তারা দখলদার নাৎসি বাহিনীর দখলদারিত্বের অবসান ঘটাতে সংগ্রাম করেন, অবশ্য এর জন্য তাদেরকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে।

নিঃসন্দেহে কোনো দখলদার বাহিনীই কারো কথায় গুরুত্ব দেয় না। তারা কেবল শক্তির ভাষাটাকেই বোঝে। ফ্রান্সে যারা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন তারা তাদের দেশকে মুক্ত করার জন্য লড়াই করছিলেন, কিন্তু নাৎসিরা এই প্রতিরোধকে সন্ত্রাসী তৎপরতা হিসেবে অভিহিত করত, প্রতিরোধকামীদের সন্ত্রাসী বলত। তারা প্রতিরোধ সংগ্রামীদের বাইরের লোকদেরকে তথা সাধারণ মানুষকে জিম্মি হিসেবে গণ্য করত এবং প্রতিরোধ সংগ্রামীদের যেকোনো তৎপরতার প্রতিশোধ হিসেবে তাদেরকে গণভাবে শাস্তি দিত, তাদের সঙ্গে হিংস্র আচরণ করত।

আগ্রাসী ও দখলদার বাহিনীর হুমকিপূর্ণ একটি বার্তা ছিল এরকম: “যেকোনো সন্ত্রাসী তৎপরতার পর অপরাধের ধরণের ওপর ভিত্তি করে কিছু লোককে হত্যা করা হবে।

বলা হয়ে থাকে, ফ্রান্সে দখলদারির সময় হিটলারের বাহিনী, ফ্রান্সের ৩০ হাজার সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছিল, এর কয়েক গুণ মানুষকে গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও দেশছাড়া করেছিল।

কেবল ফরাসিরাই প্রতিরোধ করেছে এমন নয়। রাশিয়া, হাঙ্গেরি, লুক্সেমবার্গ, স্পেন, ইতালি, পোল্যান্ড, আমেরিকা এমনকি ফ্যাসিজম-বিরোধী কিছু জার্মান এই প্রতিরোধ ফ্রন্টের সঙ্গে কাজ করত ও তাদেরকে সহযোগিতা দিত। ফ্রান্সের প্রতিরোধ ফ্রন্ট, ডি-ডে’র বিজয় এবং ৫০ মাসের দখলদারিত্ব থেকে ফ্রান্সকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

নাৎসি দখলদারদের বিরুদ্ধে ফরাসিদের প্রতিরোধ ফ্রান্সের ইতিহাসের এক উজ্জ্বল অধ্যায় এবং ৮ দশক পরও ঐ অধ্যায়কে গর্বের সঙ্গে স্মরণ করা হয়। এ উপলক্ষে প্রতি বছর প্যারিস ও অন্য শহরগুলোতে বড় পরিসরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। হয়। প্রতিরোধ সংগ্রামীদের জাতীয় বীর হিসেবে সম্মান জানানো হয়।

এখন প্রশ্ন হলো, যদি মিত্র শক্তি যুদ্ধে না জিততো এবং ফ্রান্সে জার্মানদের দখলদারি অব্যাহত থাকত তাহলে কি ৮০ বছর পর এখন দখল ও প্রতিরোধের সমীকরণ পাল্টে যেত? কেউ কি এখন এটা বলতে পারত যে, ৮০ বছর পার হয়ে গেছে, কাজেই এখন প্রতিরোধে কোনো লাভ নেই এবং তা থেকে সরে আসতে হবে? তাহলে কি ফ্রান্স নামক দেশটি এবং ফরাসি পরিচিতি বাদ হয়ে যেত? দখলদারেরা ছাড়া আর কেউ কি ফ্রান্সের প্রতিরোধকে অপবাদ দিত অথবা সহিংস ও সন্ত্রাসী হিসেবে অভিহিত করত?

ইরানের বিশিষ্ট সাংবাদিক মোহাম্মাদ সারফি মনে করেন, জার্মান বাহিনীর মাধ্যমে ফ্রান্স দখলের ঘটনার সঙ্গে ইসরাইলের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড জবরদখল এবং বর্তমান পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য মিল রয়েছে। দখলদার ইসরাইলিরাও ফিলিস্তিনি সংগ্রামীদেরকে সন্ত্রাসী হিসেবে অভিহিত করছে। সে সময় ফ্রান্সে যদি একজন জার্মান দখলদার নিহত হতো তাহলে দখলদারেরা তিন জন ফরাসিকে হত্যা করত। যাদেরকে হত্যা করত তাদের সঙ্গে ঐ ঘটনার কোনো ধরণের সম্পর্কই থাকত না। এই অমানবিক ও পাশবিক সমীকরণটা দখলদার ইসরাইলের কাছে ১ অনুপাত ১০! অর্থাৎ একজন দখলদার ইসরাইলির মোকাবেলায় ১০ জন বেসামরিক ফিলিস্তিনিকে হত্যা করছে তারা। আর এই পাশবিকতাকে নির্দ্বিধায় সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে পশ্চিমা বিশ্ব।#  

পার্সটুডে/এসএ/১৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ