পাশ্চাত্যের বৈশ্বিক একাধিপত্যের অবসান ঘটা সম্পর্কে বোরেলের স্বীকারোক্তি
ইউরোপীয় জোটের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল স্বীকার করেছেন যে ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযান ও গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার মধ্য দিয়ে পাশ্চাত্যের বৈশ্বিক একাধিপত্যের অবসান ঘটেছে।
তিনি আরও বলেছেন, পাশ্চাত্য বনাম বাদবাকি বিশ্বের মধ্যে চলমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা এভাবে চলতে থাকলে ইউরোপের জন্য ভবিষ্যৎতে বিপদগুলো আর বাড়তে থাকবে। তিনি এ সম্পর্কে আরও বলেছেন, পাশ্চাত্যের আধিপত্যের যুগ সুনিশ্চিতভাবে শেষ হয়ে গেছে, বিষয়টি তাত্ত্বিকভাবে স্পষ্ট হওয়া সত্ত্বেও আমরা সব সময় এটা উপলব্ধি করিনি। গাজা ও ইউেক্রনের যুদ্ধ পাশ্চাত্য ও দক্ষিণের মধ্যে দ্বন্দ্ব উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বাড়িয়ে দিয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।
এটা স্পষ্ট যে সামরিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পাশ্চাত্যের, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃত্ব দুর্বল হয়ে যাওয়ার বিষয়টি একটি বাস্তবতা।
চীন, রাশিয়া, ইরান ভারত, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকার মত নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তিগুলোর উত্থান এবং ব্রিকস ও সাংহাই জোটের তৎপরতা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে সংস্কারের দাবিও ক্রমেই জোরদার হচ্ছে।
পাশ্চাত্য ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে যে সংকটে রয়েছে তা নিজেরই সৃষ্ট। ন্যাটো জোটকে রাশিয়ার আশপাশে বিস্তারের চেষ্টাই এর কারণ। নিরাপত্তার খাতিরে ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে রাশিয়া। অন্যদিকে মার্কিন সরকারের সহযোগী হিসেবে ইউরোপ হাজার হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র পাঠাতে থাকে ইউক্রেনে। কিন্তু গত দুই বছরের এ যুদ্ধে ইউক্রেনের এক বিশাল ও গুরুত্বপূর্ণ নানা অংশ রাশিয়ার দখলে চলে এসেছে।ফলে এ যুদ্ধে পাশ্চাত্যের পরাজয় এখন সুস্পষ্ট। আর এটাই হল পাশ্চাত্যের শক্তি ও প্রভাব কমে আসার প্রথম লক্ষণ।
অন্যদিকে গাজার যুদ্ধেও গোটা পাশ্চাত্য ইসরাইলকে অর্থ ও অস্ত্রসহ সব ধরনের সাহায্য দিয়েও এবং গাজায় নির্বিচার বোমা বর্ষণ ও গণহত্যা অব্যাহত রেখেও প্রায় ৫ মাস পরেও ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনগুলো বিশেষ করে হামাসকে দমন করতে ব্যর্থ হয়েছে। গণহত্যার সহযোগী হওয়ার কারণে বিশ্ব-জনমতের নিন্দার চাপ নিয়ে এখন পশ্চিমা নেতারাই গাজায় যুদ্ধ বিরতি প্রতিষ্ঠার কথা বলছেন।
এমনকি ইসরাইলের নেতানিয়াহুও দুর্বল হয়ে পড়া পাশ্চাত্যকে তেমন একটা পাত্তা দিচ্ছে না। গাজার যুদ্ধ পশ্চিমাদের মানবাধিকারের মুখোশ আগের চেয়েও অনেক নগ্নভাবে স্পষ্ট করে দিয়েছে। খোদ ইউরোপ ও আমেরিকার জনমত সরকারগুলোর বিপক্ষে ও ফিলিস্তিনের পক্ষে জোরালোভাবে অবস্থান নিচ্ছে। গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে মার্কিন বিমান সেনা গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করায় এবং এর আগেও একজন মার্কিন নারী অনুরূপভাবে আত্মহত্যা করায় বোঝা যাচ্ছে যে এসব দেশের জনমত কত বেশি মাত্রায় সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।
ওদিকে পশ্চিম এশিয়ায় ইরানের ক্রমবর্ধমান প্রভাবও বেশ স্পষ্ট। ইয়েমেন, ইরাক, সিরিয়া ও লেবাননে ইরানপন্থীদের ব্যাপক শক্তিমত্তা এ অঞ্চলে পশ্চিমা আধিপত্যের ধার ব্যাপকমাত্রায় কমিয়ে দিয়েছে। #
পার্সটুডে/এমএএইচ/২৭