ইরানের কাছে নেটিজেনদের আবেদন: আন্তর্জাতিক আইন রক্ষার স্বার্থে ইসরাইলি হামলার জবাব দিন!
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি দূতাবাসের কনস্যুলার বিভাগে ইহুদিবাদী ইসরাইলের হামলার পর টুইটার ব্যবহারকারীরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ইরানের কাছে জবাব প্রত্যাশা করছেন। তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক আইন রক্ষার পাশাপাশি আগ্রাসনের পথ বন্ধ করতে ইসরাইলি হামলার জবাব দিতে হবে।
দামেস্কে ইরানি দূতাবাসের কনস্যুলার বিভাগে ইহুদিবাদী ইসরাইলের ১ এপ্রিলের হামলাটি সরাসরি ১৯৬১ সালের ভিয়েনা কনভেনশন এবং জাতিসংঘ সনদসহ সমস্ত আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। কারণ যেকোনো দেশের দূতাবাস ও তাদের ভবনগুলোকে সংশ্লিষ্ট দেশের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এসব কূটনৈতিক স্থান ও ভবনে যেকোনো আক্রমণের প্রতিশোধ নেওয়ার অধিকার আক্রান্ত দেশের রয়েছে। আন্তর্জাতিক আইনেই এ ধরণের হামলার জবাবকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে।
টুইটার ব্যবহারকারীদের মন্তব্যেও এ ধরণের বিষয় উঠে এসেছে। তারা ইহুদিবাদী ইসরাইলের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘনের জন্য ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। তারা বলছেন, এটা ঠিক যে ইরান কখনোই কোনো যুদ্ধের সূচনাকারী ছিল না, কিন্তু এখন ইরান ইসরাইলের ওপর পাল্টা আঘাতের অধিকার রাখে। আন্তর্জাতিক আইনই ইরানকে এই অধিকার দিয়েছে।
ব্রিটিশ সাংবাদিক শারমিন নারওয়ানি সোশ্যাল নেটওয়ার্ক এক্স বা সাবেক টুইটারে লিখেছেন, “আমি জানি না কেন ইসরাইল তার দূতাবাস বন্ধ করে দিয়েছে। ইরান আইন লঙ্ঘনকারী কোনো দেশ নয়, ইরান আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলে কারণ তার নিজের জন্যও এই আইনের প্রয়োজন রয়েছে। ইরানিরা এখন ইসরাইলের ভেতরে গুরুত্বপূর্ণ কোনো অবস্থানে হামলার সুযোগ হাতছাড়া করবে না।"
আরেক অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ও বিশ্লেষক নিক লমেন লিখেছেন: "এই হামলার জবাবে ইরানের সমস্ত আন্তর্জাতিক আইনি পন্থা ব্যবহারের অধিকার রয়েছে।"
'ফারজানেহ এফ' নামের আরেক অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট তার এক্স পেজে ইরানের শক্তিকে গোটা অঞ্চলের জন্যই নিরাপত্তা বিধানকারী হিসেবে মন্তব্য করে লিখেছেন, “এই অঞ্চলে ইরানের সামরিক শক্তি কোনো দেশের জন্যই হুমকি নয় বরং এই শক্তি নিরাপত্তা তৈরি করে এবং এই শক্তির ওপর নির্ভর করতে পারে এই অঞ্চলের অন্য দেশগুলোও। ইরান কোনো যুদ্ধ শুরু করবে না, তবে কোনো দেশ যদি গুণ্ডামি করতে আসে তাহলে ইরান চূড়ান্ত জবাব দেবে।"
মার্কিন নাগরিক লুকাস গেজ তার এক্স পেজে ইরানের পক্ষ থেকে সামরিক জবাবের প্রত্যাশা তুলে ধরে বলেন, "আমিই কি একমাত্র ব্যক্তি যে আশা করে ইরান অভিশপ্ত ইসরাইলের অপরাধীদের বোমা দিয়ে জবাব দিক? আমাদের দেশটাও যদি এমন কাজ করার সাহস রাখত তাহলে খুশি হতাম, কিন্তু আমরাতো জায়নবাদীদের নিয়ন্ত্রণে আছি। সামরিক জবাব পেলেই কেবল ইসরাইল থামবে। তারা আন্তর্জাতিক আইন এবং তাদের জায়নবাদী দাসদের মাধ্যমে পরিচালিত আদালতকে তোয়াক্কা করে না।"
এক্স সোশ্যাল নেটওয়ার্কের অ্যাক্টিভিস্টদের আরেক জন হলেন নূহ। তিনি আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের ইসরাইলি পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছেন এবং ইরানের সম্ভাব্য সামরিক প্রতিক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, "ইরান সঠিক সময়ে, সঠিক স্থানে ইসরাইলের কঠোর ও অনুশোচনামূলক জবাব দেবে। ইসরাইল হামলার মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছে যে, সে কোনো নিয়ম-নীতি এবং আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলে না। এই হামলা ইসরাইলের আগ্রাসী প্রকৃতিই তুলে ধরেছে।"
এক্স ব্যবহারকারীদের অনেকে ইসরাইলের প্রতি আমেরিকার সমর্থনের সমালোচনা করেছেন এবং আমেরিকাকে ইসরাইলের অপরাধের শরিক হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
ক্লিন্ট রাসেল নামের এক সমাজকর্মী এক্স নেটওয়ার্কে এ সম্পর্কে লিখেছেন, "ইরান যখন ইসরাইলে পাল্টা আক্রমণ করবে তখন যেন মার্কিন বাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো ধরণের হস্তক্ষেপের ঘটনা না ঘটে। আমি এমন কিছু শুনতে চাই না। ইসরাইল গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে এবং একটি দূতাবাস উড়িয়ে দিয়ে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে, এটা সম্পূর্ণ অবৈধ! তোমরা পরিস্থিতিকে আরও উত্তেজনাপূর্ণ করতে চেয়েছিলে এবং এখন তারা [ইরানিরা] একইভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে। আমেরিকাকে যুদ্ধ থেকে দূরে থাকতে হবে।"
কিছু ব্যবহারকারী সিরিয়ায় ইরানি দূতাবাসের কনস্যুলার বিভাগে ইসরাইলের হামলাকে সিরিয়া ও ইরানের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছেন। 'রিবার্থ' নামের একজন অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ইরানের প্রতিশোধ নেওয়ার অধিকারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে লিখেছেন,
"আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী দূতাবাস এবং কনস্যুলেট সেই দেশের ভূখণ্ডের অংশ। ইসরাইল কয়েকদিন আগে সিরিয়ায় ইরানের কনস্যুলেটে বোমা মেরেছে। এখন প্রতিশোধ নেওয়া ইরানের আইনগত অধিকার। আল্লাহ চাইলে শক্তি প্রয়োগ করে এর জবাব দেওয়া হবে।"
'আনকভার' ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে তাদের এক্স পেজে দেওয়া পোস্টে লেখা হয়েছে, "এটি জাতিসংঘের সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন। সিরিয়া ও ইরানের সার্বভৌমত্বেরও লঙ্ঘন এটি। এ ধরণের আক্রমণ অত্যন্ত জঘন্য।... ২৫ বছর আগে ইউগোস্লাভিয়ায় চীনা দূতাবাসে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনী বোমা হামলা করেছিল। আমরা ইরানের সরকার ও জাতির প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি…। এই ধরনের বেপরোয়া কাজকে মেনে নিলে খুব ভুল সংকেত যাবে এবং তা আরও বিপজ্জনক কাজকে উত্সাহিত করবে… আন্তর্জাতিক আইন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মৌলিক নীতিমালা বারবার লঙ্ঘন করা হয়েছে, বিবেকের সর্বনিম্ন সীমারেখাটাও বারবার লঙ্ঘিত হয়েছে।"
অনেক অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ইসরাইলের এমন বর্বর পদক্ষেপের বিষয়ে নীরব থাকায় পশ্চিমা দেশগুলোর নিন্দা জানিয়েছেন।
'জয়নব আর' নামের একজন অ্যাকটিভিস্ট লিখেছেন, "সবাই খেয়াল করুন এখন আর আন্তর্জাতিক আইন বা কনভেনশন বলে কিছু নেই। গাজা ও পশ্চিম তীরে ইসরাইল সকল আন্তর্জাতিক আইন ও নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে। ..."
কেউ কেউ তাদের এক্স পেজে ইসরাইলকে বিশ্বযুদ্ধের উসকানিদাতা হিসেবে অভিহিত করেছেন। 'জেসে ইন্টারন্যাশনাল' নামের একজন অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট লিখেছেন,
"আমেরিকার প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য মাইক টার্নার বলেছেন, অন্য দেশের (ইরান) দূতাবাসে বোমা হামলা করা বৈধ। কিন্তু এটা কোনোভাবেই বুদ্ধিমানের কাজ নয়! এটা কি পরিস্থিতিকে বিশ্বযুদ্ধের দিকে নিয়ে যাবে না? আন্তর্জাতিক আইন কী বলে? এটা পুরোটাই পাগলামি।"
পার্সটুডে/এসএ/৯
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।