এপ্রিল ১০, ২০২৪ ১৯:২০ Asia/Dhaka
  • শ্যারন ও বুশ
    শ্যারন ও বুশ

২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন আগ্রাসন এবং এই দেশ দখলের ঘটনা ঘটেছিল ইরাকের গণ-বিধ্বংসী অস্ত্র অর্জনের কথিত প্রচেষ্টা ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সাথে তার যোগসূত্রের অজুহাতে; এসব দাবি বা অভিযোগ তোলার ইন্ধন জোগানোর কাজে মৌলিক বা প্রধান  ভূমিকা রেখেছিল ইহুদিবাদী ইসরাইল।

প্রকাশিত তথ্য-প্রমাণে দেখা গেছে, ইরাকে হামলা চালানোর ব্যাপারে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাবলিও বুশকে উস্কানি ও উৎসাহ দেয়ার প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে ইহুদিবাদী ইসরাইল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সক্রিয় ইহুদিবাদী লবি আইপাক তথা অ্যামেরিকান ইসরাইল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি (AIPAC)। এই কাজে যেসব বিবেচনা তাদের কাছে গুরুত্ব পেয়েছে সেসবের মধ্যে রয়েছে ইরাকের ভূ-কৌশলগত, ভূ-অর্থনৈতিক ও জনসংখ্যাগত শক্তি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত তৎকালীন ইসরাইলি রাষ্ট্রদূত ড্যানি আয়ালোনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী সে সময়কার ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী অ্যারিয়েল শ্যারন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাবলিও বুশকে জানিয়েছিলেন যে ইরাক প্রক্রিয়াজাত করে রেখেছে গণ-বিধ্বংসী অস্ত্র।

ইহুদিবাদী ইসরাইলের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেনিআমিন নেতানিয়াহুও সে সময় বুশকে উৎসাহ যুগিয়ে বলেছিলেন ইরাকে হামলা চালানোর কাজটি হবে একটি খুব ভালো সুযোগ ও সঠিক কাজ এবং পশ্চিম এশিয়ার জন্য ত্রাণকর্তার ভূমিকা। 

বুশের সঙ্গে নেতানিয়াহু 

২০০৩ সালে ইসরাইলি দৈনিক হারেৎজ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল যার শিরোনাম ছিল 'শ্বেতাঙ্গ মানুষদের দায়'। এতে বলা হয়েছিল ইরাকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ধারণাটি যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সামনে নিয়ে আনেন তারা ছিলেন ২৫ থেকে ৩০ জন নব্য-রক্ষণশীলদের (নিউকন) একটি ছোট্ট গ্রুপ এবং এদের প্রায় সবাই ছিলেন ইহুদি।

এ প্রসঙ্গে ব্রিটেনের কয়েকটি সংবাদপত্র ও কয়েকজন কর্মকর্তা ২০০২ সালের এপ্রিল মাসে ক্রফোর্ডে বুশের বাসভবনে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের সঙ্গে বুশের বৈঠকের কথা উল্লেখ করেছেন। ব্রিটিশ সূত্রগুলোর তথ্য অনুযায়ী ওই বৈঠকটি হয়েছিল রুদ্ধদ্বার কক্ষে এবং 'ইসরাইলিরা'ও সেখানে উপস্থিত ছিল টেলিফোনের মাধ্যমে।

বুশ ও টনি ব্লেয়ার

২০০২ সালের ১৬ আগস্ট ওয়াশিংটন পোস্টও জানিয়েছিল যে ''ইসরাইল মার্কিন কর্মকর্তাদের অনুরোধ করেছেন ইরাকে হামলা চালাতে তারা যেন দেরি না করেন।"  এর ১১ দিন পর বুশের সহকারী ডিক চেনি বিদেশে যুদ্ধ করেছেন এমন সেনাদের সমাবেশে যুদ্ধের প্রচারণা শুরু করেন একটি কঠোর বক্তব্য রেখে।

শ্যারনের বক্তব্য অনুযায়ী এ পর্যায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইহুদিবাদী ইসরাইলের মধ্যে কৌশলগত সমন্বয় নজিরবিহীন মাত্রায় পৌঁছেছিল এবং ইসরাইলি গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ইরাকের গণ-বিধ্বংসী অস্ত্র সম্পর্কে নানা ধরনের উদ্বেগজনক রিপোর্ট দিচ্ছিলেন ওয়াশিংটনের কাছে।  এ ছিল এমন এক মিথ্যাচার যার জন্য অত্যন্ত ভয়াবহ ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে ইরাক এবং এখনও ইরাক ক্ষয়ক্ষতির সেই ধারা থেকে মুক্ত নয়।

২০০৩ সালের ১৯ মার্চ ইরাকে ইঙ্গ-মার্কিন হামলা শুরু হয় 'অপারেশন ইরাকি ফ্রিডম' শ্লোগানের আওতায়। অথচ ওই অভিযান ইরাকিদের স্বাধীনতা দেয়া তো দূরে থাক বরং লাখ লাখ ইরাকির মৃত্যুর কারণ হয়েছিল এবং কয়েক মিলিয়ন ইরাকি অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হন। এটা ছিল এমন এক সামরিক অভিযান ২০০২ সালের আগস্টে প্রকাশিত এক জরিপের ফলাফল অনুযায়ী যে অভিযানের প্রতি ৫৭ শতাংশ ইসরাইলির সমর্থন ছিল। আর ওই ফলাফল প্রকাশ করেছিল ইসরাইলি দৈনিক মাআরিভ।

ইরাকে রয়েছে বেশ কয়েকটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটি। এ ছাড়াও দেশটিতে এখনও রয়েছে অনেক মার্কিন সেনা। #

পার্সটুডে/এমএএইচ/১০

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

 

ট্যাগ