এপ্রিল ১৬, ২০২৪ ১৯:১২ Asia/Dhaka
  • ম্যালকম এক্স
    ম্যালকম এক্স

পার্সটুডে-ম্যালকম এক্স এর মতে, ইহুদিবাদীরা বিশ্বাস করে যে তারা তাদের নতুন উপনিবেশবাদকে সফলভাবে এবং ছদ্মবেশে লুকিয়ে রেখেছে। তারা ওই উপনিবেশবাদকে "অধিক কল্যাণকর" এবং "মানবতাবাদী" হিসাবে উপস্থাপন করেছে।

৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৫-তে, ম্যালকম এক্স মিশর নিয়ন্ত্রণাধীন গাজা উপত্যকায় দুই দিনের সফরে যান। ওই দুই দিনে, ম্যালকম খান ইউনুস শরণার্থী শিবির এবং স্থানীয় হাসপাতাল একটি পরিদর্শন করেন। সে সময় তিনি স্থানীয় লোকজন এবং গাজার বিশিষ্টজনদের সাথে উঠাবসা করেন।

ম্যালকম এক্স প্রার্থনারত একটি ছবি

গাজায় খোদার অস্তিত্ব

এই সফরের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী সামাজিক যোগাযোগের মধ্যে ছিল ফিলিস্তিনের বিখ্যাত কবি হারুন হাশেম রাশিদের সাথে তার আকস্মিক এবং অনির্ধারিত সাক্ষাৎ। এই বৈঠকে রাশিদ এক দশক আগে সুয়েজ সংকটের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা এবং ইসরাইলি সেনাবাহিনীর হাতে শত শত ফিলিস্তিনি শহীদ হওয়ার দু:সহ স্মৃতি শেয়ার করেন। সেসব স্মৃতিকথা শুনে এক্স গভীরভাবে প্রভাবিত হন। তার প্রতিদিনের নোটে রাশিদের কবিতার প্রশংসা দেখতে পাওয়া যায়।

এক্স গাজার ধর্মীয় নেতাদের সাথেও বৈঠক করেছিলেন। ঘটনাক্রমে তারা জামাতে নামাজ আদায় করেছিলেন। তিনি তার স্মৃতিচারণে লিখেছেন, গাজায় তিনি আল্লাহর অস্তিত্বকে প্রবলভাবে অনুভব করেছিলেন।

গোপন উপনিবেশবাদ

এই মানবাধিকার কর্মীর গাজা ভ্রমণ ইহুদিবাদের ওপর তার সবচেয়ে বিখ্যাত লেখাটির অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। "জায়োনিস্ট লজিক" ইহুদিবাদী যুক্তি নামের ওই বইটি ১৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৪ সালে মিশরের একটি বিখ্যাত সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল। ওই লেখায় ইহুদিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করা হয়েছিল এবং ইহুদিবাদকে শুধুমাত্র ফিলিস্তিনের জন্যই হুমকি নয় বরং তার চেয়েও বহুগুণ বেশি বাইরের জন্য হুমকি বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। এক্স ওই নিবন্ধে লিখেছেন:

ইহুদিবাদীরা বিশ্বাস করে যে তারা তাদের নয়া উপনিবেশবাদকে ছদ্মবেশে এবং সফলভাবে লুকিয়ে রেখেছে। তারা ওই উপনিবেশবাদকে "অধিকতর কল্যাণকর" এবং "মানবতাবাদী" হিসাবে উপস্থাপন করেছে।

তাদের সরকার ব্যবস্থায়, তারা তাদের সম্ভাব্য শিকারকে আপাতদৃষ্টিতে বন্ধুত্বপূর্ণ প্রস্তাব দিয়ে কিংবা অর্থনৈতিক সাহায্য বা অন্যান্য প্রলোভনমূলক নানা উপহার দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করে।

এখানে এক্স ইসরাইলকে ইউরোপীয় উপনিবেশবাদের সঙ্গে তুলনা দেন। সেইসঙ্গে তিনি তৃতীয় বিশ্বজুড়ে পূর্ববর্তী শতাব্দীতে তাদের কর্মের ফলে সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞের বর্ণনা দেন। বিভিন্ন উদাহরণ দিয়ে তিনি ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকতার সাথে ইহুদিবাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বিষয়টিও তুলে ধরেন। ম্যালকম ব্যাপক বিস্তৃত ওই ঔপনিবেশিকতাকে মোকাবেলা করার জন্য বিশ্বনেতৃবৃন্দ ও জনগণের প্রতি আহ্বান জানান ঐক্যবদ্ধভাবে উপনিবেশবাদীদের মিথ্যা প্রস্তাবগুলোকে যেন প্রত্যাখ্যান করে।

নেতানিয়াহু ও ট্রাম্প

আফ্রিকার জন্য উদ্বেগ

অপরদিকে, জেনেভা ইসলামিক সেন্টারের মহাপরিচালক এক্স-কে "জীবন, বিশ্বাস এবং ভবিষ্যতের আশা" সম্পর্কে ৯টি প্রশ্ন পাঠিয়েছিলেন। এক্স-ও সেইসব প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট এবং সুস্পষ্ট উত্তর দিয়েছিলেন। শেষ প্রশ্নের উত্তরটি ২১শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৫ সালের সকালবেলায় দিয়েছিলেন। বলা হয়ে থাকে সেটাই ছিল এক্সের শেষ লেখা। এটি তার মহাজাগতিক দৃষ্টিভঙ্গির একটি প্রমাণ। তিনি ইসরাইলকে যে সমগ্র বিশ্বের জন্য হুমকি বলে মনে করেন তার প্রমাণও রয়েছে ওই লেখায়।

প্রশ্ন: মনে হচ্ছে আফ্রিকা আপনার মনোযোগ এবং উদ্বেগ দুটোই আকর্ষণ করেছে। কেন? আপনি তো এই মহাদেশের প্রায় প্রতিটি অঞ্চল ভ্রমণ করেছেন। কী মনে করেন আপনি-ইসলাম আসলে কোথায় দাঁড়িয়ে আছে? কতিপয় ভিত্তিহীন দাবিদারের কর্মকাণ্ড এবং ইহুদিবাদ, নাস্তিকতা ও ধর্মীয় গোঁড়ামির ষড়যন্ত্রমূলক মিলন থেকে ইসলামকে বাঁচাতে কী করা যেতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

ইহুদিবাদীরা আমাদের মাতৃ মহাদেশ-আফ্রিকার-জন্য চলমান সংগ্রামে সকল সংগ্রামী গোষ্ঠীকে ছাড়িয়ে গেছে। তারা উদারতা এবং মানবিকতার মুখোশ নিয়ে প্রবেশ করে। সে কারণেই ক্ষতিগ্রস্থদের পক্ষে তাদের উদ্দেশ্য এবং পরিকল্পনাগুলো বুঝে ওঠা এবং তাদের স্বরূপ চেনা কঠিন হয়ে পড়ে।

যেহেতু আরব সমাজের ইমেজ ইসলামের ইমেজ থেকে প্রায় অবিচ্ছেদ্য, তাই আরব বিশ্বকে বিচিত্র দায়িত্ব পালন করতে হবে।

ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী অপরাধের একটি চিত্র

ইসলাম ভ্রাতৃত্বের ধর্ম

ইসলাম ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্যের ধর্ম। যারা এই ঐশী ধর্মের ব্যাখ্যায় নেতৃত্ব দেন তাদেরকে হতে হবে ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্যের সর্বোত্তম উদাহরণ। কায়রো এবং মক্কার-ইসলাম বিষয়ক সর্বোচ্চ পরিষদ এবং বিশ্ব মুসলিম লীগকে-একটি দ্বীনী "সভা" গঠন করা উচিত এবং মুসলিম বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য তাদেরকে আরও বেশি উদ্বেগ ও দায়িত্ব  পালন করা প্রয়োজন।

তা না হলে তরুণ ও দূরদর্শী মুসলমানদের মধ্য থেকে শক্তির উদ্ভব হবে এবং বর্তমান ক্ষমতার কেন্দ্রগুলোকে ক্ষমতাসীনদের কাছ থেকে তারা কেড়ে নেবে। আল্লাহ খুব সহজেই এটি করতে সক্ষম।

এই উত্তর লেখার কয়েক ঘণ্টা পর, ৩৯ বছর বয়সী ম্যালকম এক্সকে নিউইয়র্কের উডুবন হলে শহীদ করা হয়।#

পার্সটুডে/এনএম/১৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন

ট্যাগ