মে ২৬, ২০২৪ ১৬:৫৬ Asia/Dhaka
  • ইউরোপীয় শিক্ষার্থীদের বার্তা: ইউরোপ আমেরিকা ও ইসরাইলের দ্বারা প্রভাবিত হওয়া উচিত নয়

ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইহুদিবাদী ইসরাইলের জোরপূর্বক দখলদারিত্ব এবং গাজায় ইসরাইলি শাষক গোষ্ঠীর বর্বরোচিত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়া ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর দমন পীড়ন চালানোর একই সময়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচন ভূ-কৌশলগত ক্ষেত্রে একটি নজীরবিহীন পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এটি এমন একটি পরিস্থিতি যেটি ইউরোপীয় শাসন ব্যবস্থার ভবিষ্যতের উপর মৌলিক প্রভাব ফেলতে পারে।

যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যে তাদের দেশের তরুণ প্রজন্মের বিশাল ক্ষমতাকে নির্বাচনী গণতন্ত্ররের প্রতি পরিচালিত করার জন্য তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করছেন কিন্তু  ফিলিস্তিন ইস্যুকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা সরকারগুলোতে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের বর্বরতা, তাদেরকে আটক ও মারধর করার পরিপ্রেক্ষিতে  ফ্রান্স, জার্মানি, নেদারল্যান্ড ইত্যাদি নাগরিকদের মনে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

নিশ্চিতভাবেই, ইউরোপের নতুন প্রজন্মের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের মধ্যে একটি শাসক মডেলের এই পরিবর্তনের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়েছে; যেখানে প্রথাগত দলগুলোর ক্ষমতার সমীকরণকে "নতুন সমালোচক"-এ পরিবর্তন করাও তরুণদের ইসরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরঙ্কুশ স্বাধীনতার প্রয়োজন মেটাতে ব্যর্থ হয়েছে।

আসল বিষয়টি হল যে ইউরোপের ইহুদিবাদী লবি যা মূলত দুটি "জায়োনিস্ট-সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক" এবং "জায়নিস্ট-কনজারভেটিভ" লবি নিয়ে গঠিত তারা সংশ্লিষ্ট দেশের নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক যন্ত্রগুলোতে ছাত্রদের উপর দমন পীড়ন চালানোর আদেশ জারি করেছে এবং তারা নিজেরাই প্রত্যক্ষভাবে এ বিষয়টি তদারকি করছেন।

গাজার উপর সাম্প্রতিক যুদ্ধের সময় ফ্রান্সের ন্যাশনাল ফ্রন্টের সাবেক প্রেসিডেন্ট মেরিয়ন লে পেন এবং হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের মতো লোকেরা যেমন প্রথাগত স্রোতের সাথে যুক্ত রাজনীতিবিদদের মতো (যেমন ম্যাক্রোঁ এবং শোল্টজ)  গাজায় গণহত্যার সমর্থক হয়েছিলেন।

এই প্রবণতা এতটাই অব্যাহত ছিল যে স্বাধীন ফিলিস্তিনি দেশের স্বীকৃতির জন্য জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে সাম্প্রতিক ভোটাভুটির সময় হাঙ্গেরির সরকার যুক্তরাষ্ট্রের পাশে দাঁড়িয়ে প্রস্তাবের বিপক্ষে না ভোট দিয়েছে।

ইউরোপীয় ছাত্ররা এমনকি যারা ফিলিস্তিনকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে সরাসরি প্রবেশ করেনি তারা সর্বসম্মতিক্রমে এই অবস্থানে পৌঁছেছে যে ইহুদিবাদ কেবল একটি অন্ধকার রেডলাইন হিসাবে নয় শাসক ব্যবস্থার একটি অংশ হিসাবেও পশ্চিমে গৃহীত হয়েছে।

ইউরোপীয় নেতারা তাদের প্রধান নিরাপত্তা নীতিতে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইহুদিবাদীদের অস্তিত্ব এবং সেখানে তাদের সব ধরনের ক্ষমতা প্রয়োগের প্রতি সর্বাত্বক সমর্থন সন্নিবেশিত করেছেন। ফলে তারা দখলদার ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর বর্বরতার বিরোধিতার অভিযোগে তাদের নিজস্ব নাগরিকদেরও দমন করার চেষ্টা করে আসছে।

ছাত্রদের বিদ্রোহের ফলাফল, শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নয় ইউরোপেও শাসনের নতুন মডেলগুলোতে কেন্দ্রীভূত হবে। এই মডেলগুলো চিত্রায়ন এবং প্রয়োগ করা হয় "খেলোয়াড়দের পরিবর্তনের" পরিবর্তে "কাঠামোগত পরিবর্তন" এবং "শাসন কাঠামোর পরিবর্তন" এর ভিত্তিতে!

ছাত্র-অভ্যুত্থানের মুখে ইউরোপীয় দলগুলোর সাধারণ বিভ্রান্তির একটি প্রধান কারণ হচ্ছে ক্ষমতার মালিকরা এই বাস্তবতা উপলব্ধি করেছেন।

ইউরোপের বর্তমান শাসনের মডেলকে সমর্থনকারী কৌশলবিদ এবং পন্ডিতদের যে বিষয়টি বিরক্ত করেছে তা হল এই বিদ্রোহগুলো সীমাহীন এবং ভবিষ্যতে তা আরো দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে।

পশ্চিমারা যদি এসব বিদ্রোহকে আবেগপ্রবণ বলে মনে করত, তাহলে হয়তো তাদের বিরুদ্ধে আত্মসংযম করা যেত। কিন্তু এই বিক্ষোভের উপর সর্বাত্মক এবং সুস্পষ্ট দমন-পীড়ন দেখায় যে পশ্চিমারা অতীত থেকে তাদের মৌলিক পার্থক্য বুঝতে পেরেছে। এই উপলব্ধি আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার বর্তমান বাস্তবতার ব্যাপারে ইউরোপীয় নেতা এবং রাজনীতিবিদরা সতর্ক হওয়ার পরিবর্তে তারা কাঠামোগত ধ্বংসের ভয়ে যে পড়বে তা  খুব বেশি দূরে নয়।

ট্যাগ