জুন ১৫, ২০২৪ ১০:১৫ Asia/Dhaka
  • ইসরাইলকে রক্ষা করতে বাক স্বাধীনতাকে হত্যা/ ইরানি সঙ্গীতজ্ঞ বশির বিয়াজারের সঙ্গে ফরাসি পুলিশের নিপীড়নমূলক আচরণ
    ইসরাইলকে রক্ষা করতে বাক স্বাধীনতাকে হত্যা/ ইরানি সঙ্গীতজ্ঞ বশির বিয়াজারের সঙ্গে ফরাসি পুলিশের নিপীড়নমূলক আচরণ

পার্সটুডে- ফিলিস্তিনের সমর্থকদের বিরুদ্ধে দমন অভিযানের অংশ হিসেবে ফরাসি পুলিশ একজন ইরানি মিউজিশিয়ানকে আটক করেছে।

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি গণহত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে কথিত ‘ইহুদি-বিদ্বেষী’ আচরণ করেছেন এবং ফরাসি সমাজে মতভেদ ছড়িয়েছেন। পার্সটুডে জানায়, ইরানের প্রখ্যাত মিউজিশিয়ান ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বশির বিয়াজার ফ্রান্সে যাওয়ার আগে ইরানের জাতীয় সম্প্রচার সংস্থা আইআরআইবি’র মিউজিক বিভাগের পরিচালক ছিলেন।

তাকে গত ৪ জুন কোনো ধরনের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি না করেই ফ্রান্সের পুলিশ আটক করে। তাকে বর্তমানে তার বাসভবন থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে অবৈধ অভিবাসীদের জন্য তৈরি একটি কারাগারে আটক রাখা হয়েছে।

ফ্রান্স সরকার বা দেশটির পুলিশের পক্ষ থেকে আজ পর্যন্ত বিয়াজারের বিরুদ্ধে কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়নি। বারবার আবেদন জানিয়েও এ ব্যাপারে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

ইরানের অনেক শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা বিশেষ করে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বশির বিয়াজারকে গ্রেফতারের ঘটনাকে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের লঙ্ঘন বলে এর নিন্দা জানিয়েছেন।

বশির বিয়াজারের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

বিয়াজারের অফিসিয়াল এক্স (টুইটার) পেজে পিন করা একটি ভিডিওতে জাতিসংঘের একটি বৈঠকে বিয়াজারকে বক্তব্য রাখতে দেখা যায়। ওই বক্তব্যে তিনি ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা এবং গাজায় ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞের ব্যাপারে জাতিসংঘের নির্লিপ্ততার সমালোচনা করেন।

বিয়াজার তার এই পোস্টে লিখেছেন: ইহুদিবাদীরা এখন পর্যন্ত কখনও এতটা একাকী, ঘৃণিত, পরাজিত ও অপমানিত হয়নি।

জাতিসংঘের বৈঠকে বিয়াজারের বক্তব্যকে সবাই করতালি দিয়ে স্বাগত জানান। কিন্তু তার এ বক্তব্য ফ্রান্সসহ অন্যান্য দেশে ইসরাইলের সমর্থকরা মেনে নিতে পারেনি। তারা ইরানের এই মিউজিশিয়ানের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়।

বিয়াজার কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন বরং তিনি একজন শিল্পী ও সংস্কৃতি কর্মী। বিশ্বের অন্যান্য স্বাধীনচেতা মানুষের মতো তাকেও গাজা পরিস্থিতি ক্ষুব্ধ করেছে। ইরানে জন্মগ্রহণকারী ও বেড়ে ওঠা এই তরুণ সঙ্গীতজ্ঞ বেশ কিছু অনন্য সঙ্গীত সৃষ্টি করে বিশ্বখ্যাতি অর্জন করেছেন।

বিগত ২০ বছরের কর্মজীবনে তিনি মূলত বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন।

বিয়াজার লন্ডনের নিউ হরাইজন আর্ট অ্যান্ড কালচারাল ইনস্টিটিউটের পরিচালক এবং ইসলামিক স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারিও ছিলেন। ইরানের শিল্প ও চলচ্চিত্র অঙ্গণে তিনি একজন সম্মানিত ব্যক্তিত্ব।  সামাজিক নেটওয়ার্কগুলিতে তার সক্রিয় উপস্থিতি রয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষ তাকে অনুসরণ করে।

বিয়াজারের বিরুদ্ধে ফ্রান্স সরকারের যত অভিযোগ

ফরাসি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিয়াজারকে ইরানের পক্ষে কথিত রাজনৈতিক প্রচার (প্রপাগান্ডা) চালানো এবং ইহুদি-বিদ্বেষ ও আমেরিকা-বিদ্বেষ ছড়ানোসহ বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে। অভিযোগগুলোকে তারা ‘রাজনৈতিক-ধর্মীয় হস্তক্ষেপ’ বলে উল্লেখ করেছে।

এসব অভিযোগের ভিত্তিতে, ফরাসি কর্তৃপক্ষ বিয়াজারকে ‘ঘৃণার অক্ষ এবং দেশের জনশৃঙ্খলা ও মৌলিক স্বার্থের জন্য গুরুতর হুমকি’ হিসেবে বিবেচনা করে তাকে ফ্রান্স থেকে বহিষ্কার করার প্রস্তাব দিয়েছে।

অভিযোগগুলো মূলত ভিত্তিহীন

বিয়াজারের বিরুদ্ধে ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আনা চার্যশিট অযৌক্তিক অভিযোগের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক, ইরানি কর্মকর্তা এবং তার পরিবার ও বন্ধুরা এর নিন্দা জানিয়েছেন।

কয়েকদিন আগে, আইআরআইবি’র মিউজিক অ্যান্ড অ্যান্থেম সেন্টারের সাবেক প্রধান মোহাম্মদ মেহেদি নারাকিয়ান ইরানের মেহর বার্তা সংস্থাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ঘোষণা করেছিলেন যে, এই ইরানি নাগরিকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলি ভিত্তিহীন, দুর্বল এবং স্ববিরোধিতায় পূর্ণ।

সোশ্যাল নেটওয়ার্ক এক্স-এ বিয়াজারের পোস্টগুলি ফার্সি ভাষায় লিখিত।  অনুসন্ধানে দেখা যায়, কোনো ফরাসি নাগরিক তাকে অনুসরণ করেনি বা তার কোনো পোস্টে কোনো ফরাসি নাগরিক কমেন্টও করেনি।  এছাড়াও, তার কোন পোস্ট ফ্রান্সের অভ্যন্তরীণ বিষয় বা এই দেশের জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গেও সম্পর্কিত নয়।

ইরানি কর্মকর্তাদের প্রতিক্রিয়া

গণমাধ্যমে বিয়াজারের গ্রেফতার হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই ইরানি কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিকভাবে এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তারা যথাযথ চ্যানেল অনুসরণ করে এ ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন।

ইরানের মানবাধিকার সংস্থার সচিব কাজেম গরিবাবাদি ফরাসি সরকারের এ পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি ফ্রান্সে বিয়াজারের আটককে দেশটির মানবাধিকার লঙ্ঘনের আরেকটি কলঙ্কজনক অধ্যায় বলে বর্ণনা করেছেন।#

পার্সটুডে/এমএমআই/জিএআর/১৫                

 

ট্যাগ