জাপানিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা না চালালে বিশ্বে যুদ্ধ লেগেই থাকত‍!
(last modified Wed, 07 Aug 2024 04:36:41 GMT )
আগস্ট ০৭, ২০২৪ ১০:৩৬ Asia/Dhaka
  •  জাপানে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপের নির্দেশ প্রদানকারী মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান (ডানে), হিরোশিমা হামলার শিকার এক নারী ও তার শিশুসন্তান (বামে)
     জাপানে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপের নির্দেশ প্রদানকারী মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান (ডানে), হিরোশিমা হামলার শিকার এক নারী ও তার শিশুসন্তান (বামে)

পার্সটুডে- আজ থেকে ৭৯ বছর আগে ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট আমেরিকা পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করে জাপানের হিরোশিমা শহর ধ্বংস করে দিয়েছিল; যে অপরাধের ক্ষতিকর প্রভাব আজও বিদ্যমান।

ওই দিন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যানের নির্দেশে একটি বি-২৯ বোমারু বিমান জাপানের হিরোশিমা শহরে একটি পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করে। পার্সটুডে ফার্সি জানাচ্ছে, ‘লিটল বয়’ নামক বোমাটির ভয়াবহ বিস্ফোরণে লক্ষাধিক মানুষ হতাহত হয়; এদের মধ্যে অনেকে তাৎক্ষণিকভাবে নিহত হয় এবং বাকিদের বেশিরভাগ ওই বছরের শেষ নাগাদ প্রাণ হারায়।

হিরোশিমায় বোমা হামলার মুহূর্তে শহরটিতে দুই লাখ ৮০ হাজার থেকে দুই লাখ ৯০ হাজার বেসামরিক নাগরিক এবং ৪৩ হাজার সৈন্য অবস্থান করছিল। ধারণা করা হয়, বোমাবর্ষণের পরবর্তী চার মাসের মধ্যে ওই হামলার প্রভাবে হিরোশিমার ৯০ হাজার থেকে এক লাখ ৬৬ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে।

মার্কিন জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ওই বোমা হামলার পরবর্তী পাঁচ বছরে আরো প্রায় ৪০ হাজার অর্থাৎ মোট অন্তত দুই লাখ মানুষ হিরোশিমায় মার্কিন পারমাণবিক বোমার আঘাতে প্রাণ হারান। তবে হিরোশিমা শহরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মার্কিন বোমা হামলায় শরীর পুড়ে যাওয়ার পাশাপাশি পারমাণবিক তেজষ্ক্রিয়তা এবং ওই কারণে সৃষ্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে শহরটির  মোট দুই লাখ ৩৭ হাজার নিরীহ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।

এদিকে হিরোশিমায় এই ভয়াবহ গণহত্যা চালানোর তিন দিন পর  মার্কিন বাহিনী জাপানের নাগাসাকি শহরে ‘ফ্যাট ম্যান’ নামক আরেকটি পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করে।

জাপানি কর্মকর্তারা বলেছেন, দেশটির ওই দুই শহরে মার্কিন পারমাণবিক বোমার আঘাতে তাৎক্ষণিকভাবে ও পরবর্তীতে মোট প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের প্রাণহানি হয়; যাদের বেশিরভাগ ছিলেন বেসামরিক নাগরিক।

বিশ্বের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত ওই দুইবারই অর্থাৎ হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে। এই ভয়াবহ গণবিধ্বংসী অস্ত্র প্রয়োগ করে লাখ লাখ মানুষ হত্যা করার জন্য আমেরিকা কখনও ক্ষমা চায়নি।

এর অবশ্য কারণও রয়েছে। আমেরিকার মূলধারার গণমাধ্যমগুলোর পাশাপাশি দেশটির প্রখ্যাত ইতিহাসবিদরা জাপানের দু’টি শহরে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর ব্যাপারে অদ্ভুত ও বিস্ময়কর কিছু দাবি উত্থাপন করে মানবতাবিরোধী এই অপরাধকে সম্পূর্ণ ধামাচাপা দিয়ে রেখেছে। তারা দাবি করেছে, আমেরিকা ওই দুই শহরে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ না করলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আরো দীর্ঘায়িত হতো এবং সেক্ষেত্রে আরো অনেক বেশি মানুষের প্রাণহানি হতো। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরও সারাবিশ্বে একের পর এক যুদ্ধ চালিয়ে যায় আমেরিকা এবং আরো লাখ লাখ বনি আদমের প্রাণ কেড়ে নেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরও আমেরিকা যেসব বড় যুদ্ধ করেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, কোরিয়া যুদ্ধ, ভিয়েতনাম যুদ্ধ, ইরাক যুদ্ধ আফগানিস্তান যুদ্ধ এবং বলকান ও ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে বহু ছোট ছোট যুদ্ধ।

২০০৩ সালে স্টকহোমের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বিশ্বের নয়টি দেশের হাতে অর্থাৎ আমেরিকা, রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স, চীন, ভারত, পাকিস্তান, উত্তর কোরিয়া ও ইসরাইলের হাতে পারমাণবিক বোমা রয়েছে।

 হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপের পর সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে এক জাপানি মা

 

হিরোশিমায় আমেরিকার পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপের পর শহরটিতে দাঁড়িয়ে থাকা একমাত্র ভবন- বিজ্ঞান ও শিল্প যাদুঘরের অবশিষ্টাংশImage Caption

 

I পারমাণবিক বোমায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া হিরোশিমা নগরী

 

 হিরোশিমায় মার্কিন অপরাধযজ্ঞের একটি খণ্ডিত চিত্র
মার্কিন পারমাণবিক বোমায় আহত একজন জাপানি শিশুর পাশে তার মা
হিরোশিমায় নিক্ষিপ্ত বোমাটির নাম রাখা হয়েছিল লিটল বয়
 মার্কিন পারমাণবিক বোমা হামলায় হিরোশিমা শহর এক কথায় ধ্বংস হয়ে যায়
হিরোশিমা নগরীতে মার্কিন বোমা হামলায় আহতদের একাংশ
পারমাণবিক বোমায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া হিরোশিমা নগর
হিরোশিমার আকাশে পারমাণবিক বোম বিস্ফোরণ পরবর্তী ধোঁয়ার কুণ্ডলি
 মার্কিন গণহত্যার স্মরণে অনুষ্ঠান পালন করছেন জাপানি নাগরিকরা

পার্সটুডে/এমএমআই/জিএআর/৭

ট্যাগ