আমস্টারডামের ঘটনা
ইসরাইলিদের মধ্যে বর্ণবাদ এবং আধিপত্যবাদ বিস্তারের শিকড়ের দিকে একনজর
পার্সটুডে: একজন গবেষকের মতে আমস্টারডামে ইসরাইলি দলের ভক্তদের জন্য প্রধান ধাক্কা ছিল যে তাদের আচরণ ইসরাইলি সংস্কৃতি এবং দখলকৃত অঞ্চলের বাইরে সহ্য করা হবে না।
তেল আবিব ইসরাইলি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবেদ আবু শেহাদেহ যিনি বহু বছর ধরে ইহুদিবাদীদের মধ্যে বসবাস করে আসছেন তিনি "ইসরাইলি ফুটবলের গুন্ডারা আমস্টারডামে গণহত্যার সংস্কৃতি নিয়ে এসেছে" শিরোনামে একটি নিবন্ধে আমস্টারডামে ঘটে যাওয়া ঘটনার মুল কারণ বিশেষ করে ইসরাইলি ফুটবল দলের ভক্তদের মাধ্যমে সংঘটিত বিশৃঙ্খলা এবং অরাজক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেছেন। পার্সটুডের আজকের নিবন্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু শেহাদেহের বিশ্লেষণের প্রধান অংশগুলো এখানে তুলে ধরা হল।
যে সমাজ গণহত্যাকে উদযাপন করে তার ভয়ঙ্কর আচরণের এটি সর্বশেষ উদাহরণ। আমরা যখন গাজায় এবং লেবাননে ইসরাইলের ধ্বংস ও হত্যার ব্যাপক মাত্রা প্রত্যক্ষ করছি তখন ইসরাইলিদের মধ্যে গণহত্যার সংস্কৃতি কিভাবে ছড়িয়ে পড়ল তার দিকে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।
এই সংস্কৃতির সর্বশেষ মধ্যে একটি বৃহস্পতিবার ঘটেছে যখন আমস্টারডামে ইসরাইলের ফুটবল ক্লাব ম্যাকাবি কে সমর্থনকারী জনতা ডাচ যুবকদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিল। তারা আরব বিরোধী স্লোগান দেয়,ফিলিস্তিনি পতাকা টেনে নামিয়ে ক্ষান্ত হয় নি বরং তারা তাতে আগুন লাগিয়ে দেয় এবং স্পেনের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সম্মানে এক মিনিটের নীরবতা পালনে অস্বীকার করে। এটা স্পষ্টভাবে বলা যায় যে এই ইসরাইলি জনতা কখনই কল্পনা করেনি যে বর্ণবাদী স্লোগান দেওয়া এবং একটি বিদেশী ভূখণ্ডে ব্যক্তিগত সম্পত্তি ভাংচুর করা অগ্রহণযোগ্য আচরণ যা সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের বিরক্ত করতে পারে।
এই জনতার মানসিকতা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের থেকে ইসরাইলিদেরকে আচ্ছন্ন করে রাখা গণহত্যামূলক সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ইসরাইলিরা কেবল ইসরাইলের ভিতরেই নয় বরং সারা বিশ্বে নিজেদেরকে আইন ও নৈতিকতার ঊর্ধ্বে দেখতে চায়।
এছাড়াও,ম্যাকাবি সমর্থকদের সহিংস স্লোগানকে অবশ্যই সামাজিক প্রেক্ষাপটে বুঝতে হবে যা গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের গণহত্যামূলক যুদ্ধকে ন্যায্যতা দিয়ে চলেছে।
সহিংসতা বৃদ্ধি
ইসরাইলি দলের অনুসারিরা এমন একটি সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করে যেখানে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের আগে তাদের মধ্যে "আরবদের মৃত্যু" বা "গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দাও" এর মতো স্লোগানগুলো স্বাভাবিক ছিল। অতএব ইসরাইলি দলের প্রধান ধাক্কা ছিল যে তাদের আচরণ ইসরাইলি সংস্কৃতি এবং দখলকৃত অঞ্চলের বাইরে সহ্য করা হবে না। এটি এমন একটি সময়ে ঘটল যখন এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ইসরাইলে সাংস্কৃতিক অনুশীলন এবং রীতি-নীতিগুলো গণহত্যাকে প্রচার এবং উৎসাহিত করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। খুব বেশি জনসমালোচনা ছাড়াই ইহুদিবাদীদের মধ্যে গাজায় ফিলিস্তিনি শিশুদের হত্যা এবং বেসামরিক নাগরিকদের অনাহারে রাখার ন্যায্যতা ব্যাপকভাবে সমর্থিত।
গত মাসে আল জাজিরা ইসরাইলি সৈন্যদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে গাজায় তাদের নানা যুদ্ধাপরাধের বিষয়ে একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করেছে। এসব বিষয়বস্তুর মাধ্যমে বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষ বিস্মিত এবং শঙ্কিত হলেও ইসরাইলি এবং ইহুদিবাদীরা তাদের সৈন্যদের পক্ষে সাফাই গেয়েছে।
ইহুদিবাদী ইসরাইলিরা গত বছর তাদের গান,কৌতুক অভিনয়,সাংবাদিকতা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এবং ধর্মীয় নেতা,ফুটবলার এবং শিক্ষাবিদদের বিবৃতিতে শিশু ও নারী হত্যাসহ গণহত্যাকে প্রকাশ্যে প্রচার করেছে।
ইসরাইলি বিশ্লেষকরাও হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে কোনো বিধিনিষেধ ছাড়াই হত্যার আহ্বান জানিয়েছে। কেউ কেউ আবার আহ্বান জানিয়েছেন যে সেনাবাহিনীর উচিত আরও বেশি মানুষ হত্যা করা বা গাজায় সমস্ত মানবিক সহায়তা বন্ধ করা। এই বিবৃতিগুলোর নিন্দা করার পরিবর্তে শিক্ষাবিদ এবং ভাষ্যকাররাও তর্ক করেছেন যে কীভাবে একটি বেসামরিক জনগোষ্ঠীকে ক্ষুধার্ত অবস্থায় রাখার পক্ষে ন্যায্যতা দেওয়া যায়।
গণহত্যার পক্ষে সাফাই
আরও খারাপ যে অবস্থা সৃষ্টি করেছে তা হলো গণহত্যা ও নিপীড়নের পক্ষে পাবলিক স্পেসেও ইসরাইলিদের মধ্যে আলোচনা করতে শোনা যায়। ইসরাইলিদের মধ্যে হাঁটাচলা এবং ট্রেনে এবং পাবলিক পার্কে তাদের সব শ্রেনীর বয়সের কথোপকথন থেকে গাজার যুদ্ধ সম্পর্কে এই অনুমান প্রকাশ করে তারা গাজায় আরও মৃত্যু এবং ধ্বংস দেখতে চাচ্ছে।
ইসরাইলিরা হাততালি দিয়ে এবং কাপ তুলে ফিলিস্তিনিদের মৃত্যু উদযাপন করে। এমনকি কিছু বাসিন্দা ফিলিস্তিনিদের মৃত্যু উদযাপন করতে গিয়ে বাকলাভা বিতরণ করেছিলেন। এসবই এমন এক সমাজে ঘটছে যেখানে বেশিরভাগ নাগরিক সশস্ত্র। কারণ পশ্চিমা শক্তির অন্ধ সমর্থনের কারণে ইসরাইলিদের মধ্যে কোনো দায়বদ্ধতা নেই। দুর্ভাগ্যবশত বিশ্বও ইসরাইলের দমনমূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য তাদের সৃজনশীলতার প্রশংসা করেছে। দখলদারিত্বের সময় ইসরাইলের অস্ত্র শিল্পের উন্নতি হয়েছে এবং ফিলিস্তিনিরা এসব অস্ত্রের আঘাতে নিহত ও নিপীড়িত হয়েছে। ইসরাইলি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও ফিলিস্তিনিদের দমন করার জন্য নানা অবকাঠামো ও গবেষণা প্রতিষ্ঠা করেছে। আর আরব দেশগুলো ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের প্রচার করে এই প্রক্রিয়াটিকে শক্তিশালী করেছে। মোটকথা, এসব বিষয় ইসরাইলি গণহত্যার সংস্কৃতি বিস্তারে ভূমিকা রেখেছে।
ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন
ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার মাধ্যমে এই সংস্কৃতি জোরদার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ট্রাম্প ইসরাইলি যুদ্ধ মেশিনের জন্য তার দেশের অকাট্য সমর্থন অব্যাহত রাখবেন এবং গণহত্যার সংস্কৃতিকে উৎসাহিত করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ইসরাইলি ডানপন্থীরা দ্রুত ট্রাম্পের বিজয় উদযাপন করেছে ভবিষ্যতে সামরিক বা কূটনৈতিক সহায়তার কারণে নয় বরং ট্রাম্পের মতো একজন প্রেসিডেন্ট ইসরাইলকে গাজার জনগণকে আরও ক্ষুধার্ত করে রাখার অনুমতি দেবেন এবং ফিলিস্তিনিদের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে ইসরাইল যে সমস্ত গণতান্ত্রিক বিরোধী আইন পাস করবে সে বিষয় ট্রাম্প চোখ বন্ধ করে রাখবেন বলেই মনে করা হচ্ছে।#