জার্মানি কেন অপরাধী ইসরাইলের পাশে?
(last modified Mon, 11 Nov 2024 13:20:24 GMT )
নভেম্বর ১১, ২০২৪ ১৯:২০ Asia/Dhaka
  • জার্মানি কেন অপরাধী ইসরাইলের পাশে?

পার্সটুডে: অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইহুদিবাদী ইসরাইলের গণহত্যাকে জার্মান সরকার স্বীকার করে নেওয়ার সঙ্গে হলোকাস্ট অপরাধবোধের কোনো সম্পর্ক নেই বরং এখানে অন্য কিছু কারণ রয়েছে।

জার্মান কর্তৃপক্ষ জানে যে ইসরাইল আরেকটি গণহত্যা করছে কিন্তু তারা এটিকে স্বাভাবিক,ন্যায়সঙ্গত এবং অনিবার্য বলে মনে করার চেষ্টা করে। কেন তারা এটি এমনভাবে চিন্তা করে তা খতিয়ে দেখা দরকার। পার্সটুৃডে রিপোর্ট অনুসারে, ডিফেন্স প্রেস বেস ফিলিস্তিনিদের প্রতি গত এক বছরে জার্মানির আচরণের সমালোচনা ও বিশ্লেষণ করেছে যার কিছু অংশ এখানে আমরা তুলে ধরতে পারি।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে আজ পর্যন্ত জার্মানির মতো শক্তিশালী কোনো দেশ পাওয়া যাবে না যে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন এবং ইহুদিবাদী ইসরাইলের গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার কারণে তাদের ওপর কঠোর দমন নীতি প্রয়োগ করেছে। বর্তমানে বার্লিনে এবং জার্মানির অন্য কোথাও ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ চালিয়ে আসা গণ সমাবেশ জার্মান পুলিশের পাশাপাশি দেশটির সংবাদ মাধ্যমও নির্মম আক্রমণের শিকার হয়েছে।

ইহুদিবাদী ইসরাইলের শাসক গোষ্ঠীকে সমর্থন এবং নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের প্রতি শত্রুতার ব্যাপারে জার্মান সরকার মার্কিন ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতৃত্ব চুরি করেছে। কিন্তু প্রশ্ন হল জার্মান সরকারের এই আচরণের কারণ কী এবং কেন এই দেশটি ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীকে রক্ষার জন্য চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে?

এই প্রশ্নের উত্তর জার্মানির ইতিহাসের এমন একটি অংশে রয়েছে যা বিদ্রূপাত্মকভাবে অন্ধকার এবং ঘৃণাপূর্ণ কিন্তু জনপ্রিয় বিশ্বাসের বিপরীতে এটি হলোকাস্টের ঘটনার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই এবং নাৎসি জার্মানির অপরাধের জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রচেষ্টার সাথেও এর কোনো সম্পর্ক নেই। কঠিন বাস্তবতা হচ্ছে জার্মানি কখনই "ডি-নাজিফাইড" ছিল না এবং অ্যাডলফ হিটলারের উত্থানের দিকে পরিচালিত নীতিগুলো দূর করার ব্যাপারে কোনো চুক্তিতে আসেনি।

"জার্মান রোগ" প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ছড়িয়ে পড়ে। এ রোগ দুবার সমগ্র গ্রহে শান্তি ও নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলেছিল এবং এতে মানব সভ্যতার অনেক ক্ষতি হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ে জার্মান সরকারের পুনরায় গ্রহণযোগ্যতা ডি-নাজিফিকেশন প্রক্রিয়ার উপর নির্ভরশীল ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে জার্মানিকে কেবলমাত্র একটি কৃষি ও পশুসম্পদ রাষ্ট্র বলে মনে করা হয়েছিল।

এটা জার্মানির সৌভাগ্য যে বিশ্বযুদ্ধের পরপরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে শীতল যুদ্ধ শুরু হয় এবং ডি-নাজিফিকেশনের গুরুত্বকে মানুষ ভুলে যেতে থাকে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরের পরিবেশে পশ্চিমা দেশগুলো জার্মানির পুনঃসশস্ত্রীকরণের তীব্র বিরোধিতা করেছিল। ১৯৪৪ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্ট দ্বারা প্রস্তাব করা মরজেনথাউ পরিকল্পনা জার্মান অস্ত্র শিল্প এবং অন্যান্য শিল্পের সম্পূর্ণ নির্মূল করার আহ্বান জানিয়েছিল যা জার্মান সামরিক বাহিনীকে পুনর্গঠনে সাহায্য করতে পারে। জার্মানির সামরিক শিল্পগুলো রাজনৈতিক কাঠামো হিসাবে কাজ করেছিল যা নাৎসিদের পুনরুত্থানের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

সদ্য প্রতিষ্ঠিত ইহুদি রাষ্ট্রের প্রতি নিঃশর্ত এবং সীমাহীন সমর্থনের মাধ্যমে জার্মানি পশ্চিম এশিয়ায় পশ্চিমের একটি সামরিক গ্যারিসন হিসাবে তার পশ্চিমা প্রতিদ্বন্দ্বীদের চোখে ধীরে ধীরে তার ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করেছিল। ১৯৫৩ জার্মানি ক্ষতিপূরণ দিতে শুরু করে হলোকাস্ট থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের নয় বরং ইসরাইলি সরকারকে সামরিক অস্ত্র রপ্তানির আকারে।

একই সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমারা সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দিকে মনোনিবেশ করেছিল। অবশেষে ১৯৫৫ সালে জার্মানি ন্যাটোতে যোগদানের সঙ্গে সঙ্গে ডি-নাজিফিকেশন প্রক্রিয়াটি মানুষ ভুলে গিয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে.গণহত্যামূলক মতাদর্শকে অপসারণ করার পরিবর্তে যা হলোকাস্টের পথ প্রশস্ত করেছিল পশ্চিমারা জার্মানিকে ইসরাইলের জন্য উন্মুক্ত এবং স্থায়ী  সমর্থকে পরিণত করেছিল।

এটা উল্লেখ করা উচিত যে হলোকাস্ট জার্মানদের দ্বারা সংঘটিত প্রথম গণহত্যা ছিল না। ১৯০৪ এবং ১৯০৭ সালের মধ্যে জেনারেল লোথার ফন ট্রোটার নেতৃত্বে জার্মান সেনাবাহিনী দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকার ৪০ ভাগ হেরো এবং ৫০ ভাগ নামা লোককে হত্যা করেছিল।

জার্মান সরকারের গাজায় ইসরাইলের গণহত্যার স্বীকৃতির সঙ্গে হলোকাস্ট ঘটানোর অপরাধবোধের কোন সম্পর্ক নেই। তবে এটি গণহত্যার ঘটনাকে স্বাভাবিক করার এবং সমসাময়িক ইতিহাসে এর অপরাধগুলোকে আপেক্ষিক করার জার্মানির অভিপ্রায়কে নির্দেশ করে৷ জার্মান কর্তৃপক্ষ পুরোপুরি অবগত রয়েছে যে ইসরাইল গণহত্যা করছে এবং জাতিগত নির্মূল এবং ফিলিস্তিনি জনগণকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্য নিয়ে যুদ্ধ শুরু করেছে। জার্মান চ্যাঞ্চেলর ওলাফ শোলজ গাজায় অবিরাম বোমাবর্ষণ এবং ফিলিস্তিনি শিশুদের ক্ষুধা সম্পর্কে সচেতন এবং তিনি নিশ্চয়ই শুনেছেন যে ক্ষমতাচ্যুত ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট ফিলিস্তিনিদের "একগুচ্ছ প্রাণী " হিসাবে বর্ণনা করে গাজায় গণহত্যা শুরু করেছিলেন। এই একই শব্দগুচ্ছ ব্যবহার  করে  নাৎসী বাহিনীর কমান্ডার হেনরিক হিমলার ১৯৪৩ সালের ৪ অক্টোবরে ইহুদিদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছিলেন।#

পার্সটুডে/এনবিএ/১১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।