আমেরিকার 'এজেন্ট অরেঞ্জ' সম্পর্কে আপনি কী জানেন?
(last modified Sat, 08 Mar 2025 09:19:41 GMT )
মার্চ ০৮, ২০২৫ ১৫:১৯ Asia/Dhaka
  • সিএনএন: রেড ক্রসের অনুমান- ভিয়েতনামের ১০ লাখ মানুষ এজেন্ট অরেঞ্জের কারণে প্রতিবন্ধী
    সিএনএন: রেড ক্রসের অনুমান- ভিয়েতনামের ১০ লাখ মানুষ এজেন্ট অরেঞ্জের কারণে প্রতিবন্ধী

পার্স টুডে – 'এজেন্ট অরেঞ্জ' হল ছয়টি শক্তিশালী ভেষজনাশকের মধ্যে একটি যা মানব স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের বিরুদ্ধ ব্যবহার করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় মার্কিন সামরিক বাহিনী বনভূমি এবং ফসল ধ্বংস করার জন্য এটি ব্যবহার করেছিল যাতে শত্রু সৈন্যদের লুকিয়ে থাকার স্থান কমে যায় এবং ফসলের ক্ষেত ধ্বংস করে শত্রুপক্ষের খাদ্য সরবরাহ ব্যাহত করা যায়।  

'অপারেশন র‍্যাঞ্চ হ্যান্ড' নামে পরিচিত ওই অভিযানে মার্কিন সামরিক বাহিনী ১৯৬১ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ভিয়েতনামের ৪.৫ মিলিয়ন হেক্টরেরও বেশি জমিতে বনভূমি এবং খাদ্যশস্য ধ্বংস করার জন্য এজেন্ট অরেঞ্জ, এজেন্ট ব্লু, এজেন্ট হোয়াইটসহ বিভিন্ন রাসায়নিক মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়েছিল।   

তবে, এজেন্ট অরেঞ্জ ছিল সবচেয়ে কুখ্যাত। কারণ এতে ডাইঅক্সিন নামক অত্যন্ত বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ ছিল। ডাইঅক্সিন হল একটি রাসায়নিক যৌগ যা পরিবেশে, বিশেষ করে মাটি, হ্রদ ও নদীর পলিতে এবং খাদ্য শৃঙ্খলে বছরের পর বছর ধরে টিকে থাকে। এছাড়া, ডাইঅক্সিন মাছ, পাখি ও প্রাণীর ফ্যাটি টিস্যুতেও জমা হয় এবং বিশ্বব্যাপী এটি কার্সিনোজেন হিসেবে পরিচিত।

ডাইঅক্সিনের স্বল্পমেয়াদী সংস্পর্শে লিভারের সমস্যা এবং ক্লোরাক্ন নামক ব্রণের মতো তীব্র ত্বকের অবস্থা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও, ডাইঅক্সিন টাইপ-২ ডায়াবেটিস, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কর্মহীনতা, স্নায়বিক ব্যাধি, পেশীর কর্মহীনতা, হরমোনজনিত ব্যাধি এবং হৃদরোগের সাথে যুক্ত।

এজেন্ট অরেঞ্জের মতো ভেষজনাশকের সংস্পর্শে আসার ফলে ভিয়েতনামে পরিবেশগত ধ্বংসের পাশাপাশি দেশটিতে প্রায় ৪ লাখ মানুষ নিহত বা শারীরিকভাবে অক্ষম হয়েছে।

ভিয়েতনাম সরকার ঘোষণা করেছে যে, এজেন্ট অরেঞ্জের কারণে পাঁচ লাখ শিশু গুরুতর জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে এবং ২০ লক্ষ মানুষ ক্যান্সার বা অন্যান্য রোগে ভুগছে।

২০০৪ সালে ভিয়েতনামী নাগরিকদের একটি দল ৩০টিরও বেশি রাসায়নিক কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে, যা ২০০৫ সালের মার্চ মাসে নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিনের একজন ফেডারেল বিচারক খারিজ করে দেন। এছাড়া, ২০০৮ সালে মার্কিন আপিল আদালতেও মামলাটি খারিজ করে দেয়।

মার্কিন আদালতের যুক্তি ছিল যে এজেন্ট অরেঞ্জের ব্যবহার একটি যুদ্ধকালীন কর্মকাণ্ড ছিল, যা মার্কিন সরকারের নির্দেশে পরিচালিত হয়েছিল। তাই কোম্পানিগুলোকে দায়ী করা যায় না, বরং এটি একটি রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত ছিল।

ভিয়েতনামের নাগরিকদের মামলা খারিজ হলেও ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মার্কিন সৈন্যরা এজেন্ট অরেঞ্জের কারণে স্বাস্থ্যগত ক্ষতিপূরণের জন্য মামলা করেছিলেন। ১৯৮৪ সালে, মার্কিন কোম্পানিগুলোর সাথে একটি আউট অফ কোর্ট সমঝোতা হয়, যেখানে কোম্পানিগুলো ১৮০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে সম্মত হয়। এই তহবিল ক্ষতিগ্রস্ত মার্কিন সৈন্যদের স্বাস্থ্যগত চিকিৎসা ও সহায়তার জন্য ব্যবহার করা হয়।#

পার্সটুডে/এমএআর/৮