ট্রাম্পের নীতি কি জার্মানদের চোখের পানি ঝরাচ্ছে?
(last modified Tue, 11 Mar 2025 14:30:11 GMT )
মার্চ ১১, ২০২৫ ২০:৩০ Asia/Dhaka
  • ট্রাম্পের নীতি কি জার্মানদের চোখের পানি ঝরাচ্ছে?

পার্সটুডে-ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে জার্মানি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। যে কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি সমালোচনা বৃদ্ধি পেয়েছে, তা হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইউরোপীয় দেশ হিসেবে জার্মানির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের হস্তক্ষেপমূলক আচরণ এবং দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা।

২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে, জার্মানির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে যা কিনা জার্মান কর্তৃপক্ষ ভালোভাবে নেয়নি এবং দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। পার্সটুডের মতে, এই বিষয়ে, এয়ারবাস কোম্পানির সিক্যুরিটি বিভাগের প্রধান মাইকেল স্কোলহর্ন আগামীতে জার্মান সরকারের প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির পরিকল্পনাকে স্বাগত জানাতে গিয়ে, বার্লিনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সামরিক সরঞ্জাম কেনা এবং এই বিষয়ে ওয়াশিংটনের উপর আরও নির্ভরশীল হওয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছেন।

এছাড়াও, বিখ্যাত জার্মান কোম্পানি এবং প্রতিষ্ঠানের পরিচালকদের একটি দল এক যৌথ বিবৃতিতে, নতুন ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির আলোকে সামরিক ব্যয় বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়ে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে F-35 যুদ্ধবিমান কেনা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে: F-35 যুদ্ধবিমানের মতো এই অস্ত্রগুলোর পরিচালনার জন্য নিয়মিত সফ্টওয়্যার আপডেট এবং রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় এবং তা ক্রমাগত পরনির্ভরতার দিকে ঠেলে দেয়।  

বিশেষজ্ঞদের এই দলটি ধারণা করছেন যে, ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে ৫০  হাজার কোটি ইউরোরও বেশি সামরিক বাজেট প্রয়োজন। তারা বলছেন, আমেরিকান বিমান কেনার জন্য অর্থ ব্যয় করার পরিবর্তে বরং সেই  অর্থ ড্রোন শক্তি এবং বাল্টিক সাগর রক্ষায় ব্যয় করা উচিত। ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফের মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মানির মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির একইসাথে এমন খবর পাওয়া গেছে যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জার্মানি থেকে হাজার হাজার মার্কিন সেনা হাঙ্গেরিতে স্থানান্তরের কথা বিবেচনা করছে।

জার্মানি আমেরিকার বৃহত্তম ইউরোপীয় বাণিজ্যিক অংশীদার। ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে আমেরিকার একতরফা নীতি অবস্থান ও পদক্ষেপ এবং জার্মান নির্বাচনে মার্কিন হস্তক্ষেপ, সেইসাথে উগ্র-ডানপন্থীদের প্রতি মার্কিন সমর্থনের ফলে জার্মানি এবং সমগ্র ইউরোপকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। এমনকি জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক দেশটির সাম্প্রতিক সংসদ নির্বাচনের আগে আমেরিকার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করারও হুমকি দিয়েছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, তার দেশ আমেরিকানদের উপর চাপ বৃদ্ধি করবে যাতে তারা এটা বুঝতে পারে যে "যদি যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের উদার গণতন্ত্রের পাশে না দাঁড়ায় তবে তাদের অনেক কিছু হারাতে হবে।"

প্রকৃতপক্ষে, ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে জার্মানি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিভেদ তৈরি হয়েছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তাদের যে সমালোচনা বেড়েই চলেছে, তা হল তা হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইউরোপীয় দেশ হিসেবে জার্মানির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের হস্তক্ষেপমূলক  আচরণ এবং দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা। জার্মান সংসদীয় নির্বাচনে বিজয়ী এবং দেশের ভবিষ্যৎ চ্যান্সেলর, খ্রিস্টান ডেমোক্রেটিক পার্টির রক্ষণশীল নেতা ফ্রিডরিখ মের্টজের প্রথম বিবৃতিতে এই উদ্বেগ দেখা গেছে। মের্টজ বলেন, তার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারযোগ্য বিষয় হলো আমেরিকান বা রাশিয়ার হস্তক্ষেপ মোকাবেলায় ইউরোপকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করা। তার এই বক্তব্য ট্রাম্পের সিনিয়র উপদেষ্টা এবং তার প্রশাসনের দক্ষতা বিষয়ক মন্ত্রী ইলন মাস্কের সাম্প্রতিক হস্তক্ষেপমূলক কিছু পদক্ষেপ এবং বক্তব্যেরই তীব্র প্রতিক্রিয়া মাত্র। মাস্ক জার্মানির নির্বাচনী প্রচারণার সময় বারবার উগ্র-ডানপন্থী অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি) দলের প্রতি তার সমর্থন জানিয়েছিলেন এবং সেইসাথে বর্তমান জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শুলজের তীব্র সমালোচনা করে, তার পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন।

জার্মানরা এ কারণে উদ্বিগ্ন যে ট্রাম্প প্রশাসন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, সামরিক এবং নিরাপত্তা ক্ষেত্রে জার্মানির উপর তার দাবি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে, যা দেশের স্বাধীনতা ও স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করবে। মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের চেয়ারম্যান ক্রিস্টোফ হাউসগেন ইউরোপীয় নেতাদের শোক ও হতাশার মাঝে অশ্রুসিক্ত চোখে বলেছিলেন: "আমাদের মূল্যবোধ আর আমেরিকার মূল্যবোধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং যুক্তরাষ্ট্র ‌ইউরোপের শত্রুদের পক্ষ নিয়ে ইউরোপকে পরিত্যাগ করেছে।"

এখন ট্রাম্প এবং তার ভাইস প্রেসিডেন্ট জে.ডি. ভ্যান্সের কাছ থেকে ফ্যাসিবাদের কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে। ইউরোপে ভ্যান্সের সাম্প্রতিক বক্তৃতাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে, তিনি ইউরোপীয় রাজনৈতিক মহলে "দ্বিতীয় মুসোলিনি" হিসাবে পরিচিত হয়ে উঠেছেন এবং ইউরোপের উগ্র-ডানপন্থী দলগুলো রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জন এবং ক্ষমতা দখলের জন্য ট্রাম্প এবং তার দলে ইলন  মাস্কের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের রাজনৈতিক ও আর্থিক সহায়তার দিকে তাকিয়ে আছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে চিন্তাভাবনার অনেক মিল থাকা ইলন মাস্কের চূড়ান্ত লক্ষ্য হল জার্মানির বিকল্পধারার মতো ‌উগ্র-ডানপন্থী আন্দোলন এবং দলগুলোকে সমর্থন করে ইউরোপীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে মৌলিক পরিবর্তন আনা। মাস্ক এবং ট্রাম্প মনে করেন, জার্মানিসহ ইউরোপীয় দেশগুলোতে অতি-ডানপন্থী দলগুলোর ক্ষমতা বৃদ্ধি আটলান্টিকের উভয় তীরে আদর্শিক ভারসাম্য তৈরি করবে যা কিনা ওয়াশিংটনের জন্য ইউরোপীয় দেশগুলোতে তার প্রভাব বৃদ্ধি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়নের পথ প্রশস্ত করবে।/ মীর তাহের

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।