ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ: বিশ্বব্যাপী মন্দার হুমকি নাকি সুবিধা হাসিলের কৌশল?
পার্সটুডে - মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিভিন্ন কারণে আমেরিকার অর্থনৈতিক অংশীদার এবং প্রতিযোগীদের সাথে বাণিজ্য যুদ্ধ কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন। তবে, কিছু সংবাদমাধ্যম এবং বিশ্লেষক ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতি থেকে সরে আসার সম্ভাবনা কম বলে মনে করেন।
২০১৬ সালে হোয়াইট হাউসে প্রবেশের পর থেকে, ডোনাল্ড ট্রাম্প তার অর্থনৈতিক নীতির অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা পণ্যের উপর বাণিজ্য শুল্ক আরোপের বিষয়টি ধারাবাহিকভাবে অনুসরণ করে আসছেন।
যদিও প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার প্রথম মেয়াদে এবং সতর্কতা সত্ত্বেও, ট্রাম্প শুল্ক নীতি অনুসরণ করার উপর জোর দিয়েছিলেন। কিন্তু ২০২০ সালের নির্বাচনে তার পরাজয় এবং করোনা সংকটের কারণে পূর্বে তিনি তার অর্থনৈতিক কর্মসূচির ঘোষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারেননি। এখন হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পরপরই, ট্রাম্প এই নীতিটি আরও গুরুত্ব সহকারে এবং স্পষ্টভাবে অনুসরণ করছেন।
এখন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, বাণিজ্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের পাশাপাশি দীর্ঘস্থায়ী মিত্র এবং ছোট-বড় দেশগুলোর সাথে শুল্ক আরোপ বা ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের পরিণতি বিশ্ব বাণিজ্য এবং মার্কিন অর্থনীতির উপর কী প্রভাব পড়েব এবং বর্তমান আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় অন্যান্য দেশের পরিস্থিতির উপর এর কী প্রভাব পড়বে?
দুটি বিকল্প: মার্কিন শুল্ক নীতির বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়া অথবা সহনশীলতা
মার্কিন বাণিজ্য শুল্কের আওতায় থাকা বেশিরভাগ দেশ ঘোষণা করেছে যে তারা প্রতিশোধ নেবে এবং মার্কিন পণ্য আমদানির উপর পারস্পরিক শুল্ক আরোপ করবে। আমেরিকার প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি চীন, ট্রাম্পের পদক্ষেপের সাথে সাথেই প্রতিক্রিয়া জানায় এবং আমেরিকান পণ্যের উপর ৩৪% শুল্ক আরোপ করে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নও আমেরিকা-বিরোধী বাণিজ্য শুল্ক আরোপের শর্তাবলী নিয়ে পরামর্শ ও মূল্যায়ন করছে। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মেক্সিকো এবং ভারতের মতো অন্যান্য দেশগুলি আরও সতর্কতার সাথে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এবং ঘোষণা করেছে যে তারা আপাতত প্রতিশোধ নেবে না।
আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে বাণিজ্য যুদ্ধের পরিণতি
মার্কিন সরকারের বাণিজ্য শুল্ক আরোপের পর, বিনিয়োগ ব্যাংক জেপি মরগান ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ বিশ্বব্যাপী মন্দার পূর্বাভাস ৪০% থেকে বাড়িয়ে ৬০% করেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিশ্চিয়ানা গিওরগি বলেছেন, "ধীরগতির প্রবৃদ্ধির সময়ে মার্কিন শুল্ক স্পষ্টতই বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য একটি উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি বাড়িয়েছে। একটি বাণিজ্য যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যের পরিমাণও হ্রাস করবে, বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য অংশীদারিত্ব ব্যাহত করবে এবং শেষ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি কমিয়ে দেবে। বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য হ্রাসের ফলে উৎপাদন হ্রাস পাবে এবং শেষ পর্যন্ত জ্বালানির চাহিদা হ্রাস পায়।
ট্রাম্পের শুল্ক নীতির উপর জোর দেওয়ার কারণ
ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্বাস করে যে শুল্ক আরোপের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কর্পোরেট বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে কারণ এটি তাদের বৃহৎ আমেরিকান ভোক্তা বাজারে আরও পণ্য বিক্রি করার সুযোগ দেবে। যদিও অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন যে বিনিয়োগের নিরাপত্তার অভাব বিনিয়োগকারীদের সন্দেহপ্রবণ করে তুলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, তারা উদ্বিগ্ন যে পরবর্তী মার্কিন প্রশাসন এই শুল্ক বাতিল করবে। অন্যদিকে, ট্রাম্প প্রশাসনের ভেতর থেকেই বিভিন্ন এবং পরস্পরবিরোধী বক্তব্য শোনা যাচ্ছে। ট্রাম্প বাণিজ্য শুল্ক আরোপের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানালেও, তিনি কর ছাড় এবং আলোচনায় ছাড় পেতে চাপ ও সুবিধা অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে বাণিজ্য শুল্ক ব্যবহারের কথাও বলেছেন।#
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/৯
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।