নিরপেক্ষ থাকার দাবি, আবার তেল আবিবের সঙ্গে যোগসাজশ; সিঙ্গাপুরের দুই মুখ
(last modified Tue, 13 May 2025 11:10:58 GMT )
মে ১৩, ২০২৫ ১৭:১০ Asia/Dhaka
  • নিরপেক্ষ থাকার দাবি, আবার তেল আবিবের সঙ্গে যোগসাজশ; সিঙ্গাপুরের দুই মুখ

একজন ইন্দোনেশিয়ান গবেষক ফিলিস্তিনের প্রতি সিঙ্গাপুর সরকারের নীতির সমালোচনা করেছেন।

সিঙ্গাপুর এর আগে আইন পাসের মাধ্যমে গাজার জনগণের সমর্থনে বিক্ষোভ বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভকে সীমিত করার চেষ্টা করেছিল। সিঙ্গাপুরের ফিলিস্তিনিপন্থী দলগুলো আইনটিকে উদ্বেগজনক বলে অভিহিত করে বলেছে যে এটি মানবাধিকর কর্মী এবং স্বাধীকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে জড়িত পক্ষগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হতে পারে।

পার্সটুডের মতে, পশ্চিম এশীয় বিষয়ক গবেষক এবং ফিলিস্তিনের সমর্থক মোহাম্মদ জুলফিকার রহমত মিডল ইস্ট মনিটরে একটি নিবন্ধে ফিলিস্তিনের প্রতি সিঙ্গাপুর সরকারের নীতির সমালোচনা করেছেন। তিনি লিখেছেনম,  "সিঙ্গাপুর আনুষ্ঠানিকভাবে দুই রাষ্ট্র সমাধানকে সমর্থন করে। তবে ইসরাইলের সাথে ঘনিষ্ঠ সামরিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে।"

জনাব রহমত জোর দিয়ে বলেছেন যে এই দেশটি ইসরাইলি অস্ত্রের অন্যতম প্রধান ক্রেতা এবং দেশটিতে প্রকাশ্যে ইসরাইলি বিরোধীতা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত। ইন্দোনেশিয়ান গবেষকের মতে, সিঙ্গাপুরে ইসরাইলের যেকোনো স্পষ্ট সমালোচনা বা ফিলিস্তিনি অধিকারের প্রতি জনসমর্থন এমনকি বিদেশী গবেষকদের জন্যও জিজ্ঞাসাবাদ এবং বিধিনিষেধের কারণ হতে পারে।

সিঙ্গাপুর; ফিলিস্তিনে বাকস্বাধীনতা দমন করা

লেখক, যিনি এখন দক্ষিণ কোরিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষকতা করছেন তিনি তার প্রবন্ধের আরেকটি অংশ সিঙ্গাপুরে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন দমনের বিষয়ে তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন:

তিনি লিখেছেন,  “২০২৩ সালে,সিঙ্গাপুরের মতো দেশে আমার সাথে এমন কিছু ঘটেছিল যা আমি কখনও আশা করিনি। চাঙ্গি বিমানবন্দরে আমাকে একবার নয়, দুবার আটক করা হয়েছিল এবং জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল।  শুধুমাত্র একজন গবেষক এবং সাংবাদিক হওয়ার অপরাধে যিনি পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতি বিশেষ করে ফিলিস্তিনি ইস্যু নিয়ে লেখেন। সিঙ্গাপুরের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় সিঙ্গাপুরের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা আমাকে থামিয়েছিলেন। তারা আমার পাসপোর্ট পরীক্ষা করে আমাকে একটি পৃথক কক্ষে নিয়ে যান। তিনজন কর্মকর্তা যারা নিজেদের সিঙ্গাপুরের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন তারা আমাকে পশ্চিম এশিয়ায় আমার পটভূমি, আমার নিবন্ধ এবং ফিলিস্তিনি ইস্যুতে আমার মনোযোগ সম্পর্কে দীর্ঘ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছিলেন। "তারা এমনকি আমার মোবাইল ফোনও তল্লাশি করেছিল।"

তিনি বলেন: " ঘন্টাব্যাপী জিজ্ঞাসাবাদ এবং উত্তর দেওয়ার পর আমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু এই ঘটনা সম্পর্কে কিছু না লেখার জন্য সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল। সাত মাস পরে, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি ঘটে।" এবার, সিঙ্গাপুরে ট্রানজিটে থাকার সময় আমাকে আবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। যদিও সংক্ষিপ্ত জিজ্ঞাসাবাদটি ফিলিস্তিন সম্পর্কে আমার লেখার ওপর কেন্দ্রীভূত ছিল।

গাজার জনগণের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী অপরাধের মুখে নীরবতা অপরাধের সাথে জড়িত থাকার শামিল

"মোহাম্মদ জুলফিকার রহমত" নিবন্ধটি চালিয়ে যান এই বলে যে "আমি সিঙ্গাপুরে ট্রানজিট ফ্লাইট এড়িয়ে চলি এবং এই দেশে শিক্ষাগত আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করি।" কিন্তু এই ধরণের চাপের মুখে নীরবতা আমি গ্রহণযোগ্য বলে মনে করি না। "যদি সিঙ্গাপুর একটি আন্তর্জাতিক কেন্দ্র হিসেবে সম্মানিত হতে চায়,তাহলে ফিলিস্তিন সম্পর্কে লেখার জন্য বিশ্বের নাগরিকদের শাস্তি দিতে পারে না।"

ফিলিস্তিন নিষিদ্ধ নয়

ইন্দোনেশিয়ান গবেষক এবং সাংবাদিক জোর দিয়ে বলেন: ফিলিস্তিন কোনও নিষিদ্ধ বিষয় নয় এবং এটি সম্পর্কে লেখা কোনও অপরাধ হিসেবে গণ্য হওয়া উচিত নয়। তিনি বিশ্বজুড়ে ফিলিস্তিনিদের অধিকার রক্ষায় কথা বলা এবং তাদের কণ্ঠরোধ করার পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে বলেন,এই দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে আমাদের অবশ্যই সজাগ থাকতে হবে।

পার্সটুডে/এমবিএ/১৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।